অনেকে মনে করেন - মাসিক আয় নিয়মিত থাকলেই আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকা যায়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে - শুধু আয় থাকলেই চলে না, বরং সেই আয় কীভাবে খরচ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে আপনার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।
আজ (১৪ আগস্ট) ফিন্যান্সিয়াল অ্যাওয়ারনেস ডে বা আর্থিক সচেতনতা দিবস। এই দিনে আমরা নিজেদের আর্থিক জ্ঞান, পরিকল্পনা এবং সঞ্চয়ের অভ্যাস নিয়ে একটু ভেবে দেখি। তাই ৭টি সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচাই করে নিন আপনি আর্থিকভাবে সচেতন কিনা-
১. লিখিত মাসিক বাজেট
প্রথমেই ভাবুন, আপনার কি মাসিক বাজেট লিখিতভাবে তৈরি থাকে? যদি থাকে, তবে আপনি খরচের উপর ভালো নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারছেন। আর যদি না থাকে, তবে মাস শেষে টাকা কোথায় গেল তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়ে।
২. সঞ্চয়ের পরিমাণ
এরপর ভাবুন, আপনি কি আয়ের অন্তত ২০ শতাংশ সঞ্চয় করেন? যারা এই অভ্যাস মেনে চলেন তারা ধীরে ধীরে আর্থিকভাবে শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলেন। কিন্তু যাদের সঞ্চয়ের অভ্যাস নেই, তাদের জন্য ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেশি।
৩. ইমার্জেন্সি ফান্ড বা জরুরি তহবিল
তৃতীয় প্রশ্নটি জরুরি তহবিল নিয়ে। আপনার কি হাতে অন্তত তিন থেকে ছয় মাসের খরচ জমা আছে? থাকলে হঠাৎ চাকরি হারানো বা অসুস্থতার সময় এটি হবে আপনার ঢাল। না থাকলে ছোট একটি বিপদও আপনাকে ঋণের ফাঁদে ফেলতে পারে।
৪. আর্থিক বিনিয়োগ
এরপর ভাবতে হবে বিনিয়োগের কথা। শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাংক ডিপোজিট বা অন্য কোনো মাধ্যমে আপনি বিনিয়োগ করছেন কি না। শুধুমাত্র সঞ্চয় করলে মুদ্রাস্ফীতির কারণে টাকা ধীরে ধীরে কমতে থাকে বা মূল্য হারায়, তাই বিনিয়োগ শেখা জরুরি।
৫. ঋণ ব্যবস্থাপনা
পঞ্চম প্রশ্নে আসা যাক ঋণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। যদি আপনার ঋণ সীমিত এবং সময়মতো পরিশোধের অভ্যাস থাকে, তবে সেটি একটি ভালো দিক। কিন্তু যদি ক্রেডিট কার্ডের বিল বকেয়া থাকে বা অপ্রয়োজনীয় ঋণ জমে যায়, তবে তা আপনার সঞ্চয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে নষ্ট করে দিতে পারে।
৬. অবসরের পরিকল্পনা
ষষ্ঠ প্রশ্নটি অবসর নিয়ে। একটি বয়সের পর মানুষ কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরা যাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সেই বয়সে আর্থিক স্বচ্ছলতা খুবই জরুরি। তাই অবসরের জন্য আলাদা সঞ্চয় বা বিনিয়োগ পরিকল্পনা থাকলে আপনি সঠিক পথে আছেন। আর যদি না থাকে, তবে যতই তরুণ হোন না কেন, এখন থেকেই শুরু করা দরকার।
৭. আর্থিক জ্ঞান
শেষ প্রশ্নটি আর্থিক জ্ঞান বৃদ্ধির অভ্যাস নিয়ে। আপনি কি নিয়মিত বই পড়েন, সেমিনারে অংশ নেন বা অনলাইনে আর্থিক বিষয় শেখেন? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তবে আপনি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। আর যদি ‘না’ হয়, তবে জেনে রাখুন, অর্থ ব্যবস্থাপনা শেখা একদিনের কাজ নয়; এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।
এই সাতটি প্রশ্নের মধ্যে যদি পাঁচ থেকে সাতটিতে আপনার উত্তর ইতিবাচক হয়, তবে আপনি নিশ্চিতভাবে একজন আর্থিকভাবে সচেতন মানুষ। তিন বা চারটিতে ইতিবাচক উত্তর হলে আপনাকে আরও মনোযোগ দিতে হবে সঞ্চয়, বাজেট এবং বিনিয়োগে।
আর যদি দুই বা তার কম প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ উত্তর পান, তবে এখনই জীবনে পরিবর্তন আনা শুরু করা জরুরি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকেই মাস শেষে বুঝতে পারেন, আয় যতই হোক, হাতে কিছুই থাকছে না। কারণ সঠিক পরিকল্পনা নেই। হঠাৎ অসুস্থতা, চাকরি হারানো বা জরুরি খরচের সময় তখন ঋণ নেওয়া ছাড়া আর উপায় থাকে না। অথচ সামান্য সচেতনতাই এই বিপদ এড়াতে পারে।
অর্থ সচেতনতা মানে শুধু টাকা গোনা নয়, বরং নিজের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ করা। তাই আজ থেকেই শুরু হোক মাসিক বাজেট তৈরি, নিয়মিত সঞ্চয়, সঠিক বিনিয়োগ এবং জরুরি তহবিল গড়ে তোলার কাজ। আর্থিক জ্ঞান বাড়াতে পড়াশোনা করুন, অভিজ্ঞদের কাছ থেকে শিখুন এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কারণ নিজের এবং পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আজকের ছোট পদক্ষেপই হতে পারে আগামী দিনের সবচেয়ে বড় শক্তি।
তথ্যসূত্র: ইনভেস্টোপিডিয়া, দ্য ব্যালান্স, এনইএফই, সিএফপিবি, দ্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
মামুনূর রহমান হৃদয়/এএমপি/এমএস