আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে কত সময় লাগতে পারে? জেনে নিন
আজকের দিনে ব্যাংকিং থেকে শুরু করে বিল পরিশোধ, ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম থেকে অফিসের মেইল—সবকিছুই ঘুরে ফিরে এখন অনলাইনে। আর এই অনলাইন দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি হলো আপনার পাসওয়ার্ড। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, এখনো অনেকেই সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন—কেউ নিজের নাম, কেউ জন্ম তারিখ, আবার কেউ ‘১২৩৪৫৬’ লিখে নিশ্চিন্ত থাকেন।
অথচ প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, হ্যাকারদের হাতে সেই সহজ পাসওয়ার্ড ভাঙতে সময় লাগছে কয়েক সেকেন্ডেরও কম।
ইন্টারনেট-নিরাপত্তা সংস্থা হাইভ সিস্টেমসের ২০২৪ সালের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, মাত্র কয়েক অক্ষরের ছোট পাসওয়ার্ড মুহূর্তেই হ্যাক হয়ে যেতে পারে, আর একটু বড় ও জটিল পাসওয়ার্ড ভাঙতে লেগে যায় হাজার বছর! তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি সচেতন না হন, তবে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে অর্থ পর্যন্ত সবকিছু ঝুঁকিতে পড়বে।
চলুন তাহলে জেনে নিই, কোন ধরনের পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে কত সময় লাগতে পারে—
মাত্র চার বর্ণের ছোট হাতের পাসওয়ার্ড হ্যাকাররা মুহূর্তেই হ্যাক করতে পারেন। পাঁচ সংখ্যার পাসওয়ার্ডে বড়-ছোট হাতের বর্ণ থাকলেও ৩ সেকেন্ডেই হ্যাক করা সম্ভব। আবার পাঁচ বর্ণের কেবল বর্ণভিত্তিক পাসওয়ার্ড মাত্র দুই মিনিটেই হ্যাক হতে পারে। অন্যদিকে সংখ্যা, প্রতীক, বড়-ছোট হাতের বর্ণ মিশিয়ে আট বর্ণের পাসওয়ার্ড ভাঙতে একটি উচ্চক্ষমতার আরটিএক্স গ্রাফিক্স কার্ড লাগবে এবং তাতে সময় লাগতে পারে প্রায় ৭ বছর।
দৈর্ঘ্য যত বাড়বে, পাসওয়ার্ড তত সুরক্ষিত হবে
সংখ্যা দিয়ে তৈরি ১০ অক্ষরের পাসওয়ার্ড ভাঙতে প্রায় ১ ঘণ্টা লাগতে পারে। যদি সেই সংখ্যা ১৮ অক্ষরে বাড়ানো হয়, সময় লেগে যাবে প্রায় ১১ হাজার বছর। কিন্তু ১৮ অক্ষরে যদি শুধু ছোট হাতের বর্ণে গঠিত পাসফ্রেইজ ব্যবহার করা হয়, তখন সেটি ভাঙতে সময় লাগবে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন বছর!
এ কারণেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট কিন্তু জটিল পাসওয়ার্ডের চেয়ে দীর্ঘ পাসফ্রেইজ অনেক বেশি নিরাপদ।
যেভাবে সুরক্ষিত থাকবেন
প্রযুক্তির এই অগ্রগতির ফলে মাত্র দুই বছরেই পাসওয়ার্ড ভাঙার গতি বেড়েছে কয়েকগুণ। যেমন ২০২০ সালে ৭ অক্ষরের জটিল পাসওয়ার্ড ভাঙতে লাগত ৭ মিনিট, আর ২০২৩ সালে সেটি নেমে এসেছে মাত্র ৪ সেকেন্ডে। তাই ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে নিচের পদক্ষেপগুলো জরুরি—
১. পাসওয়ার্ড নয়, ব্যবহার করুন পাসফ্রেইজ
পাসফ্রেইজ হলো একাধিক এলোমেলো শব্দের লম্বা একটি বাক্যাংশ। এটি সাধারণ পাসওয়ার্ডের চেয়ে অনেক নিরাপদ এবং মনে রাখাও সহজ। উদাহরণ: Sunset-cola-Mouse! বা GatePen2BoxerRose।
পাসফ্রেইজ তৈরি করার সময়
ক. কমপক্ষে ১০-১৫ অক্ষর বা তার বেশি রাখুন।
খ. সাধারণ গানের লিরিক বা প্রচলিত বাক্য এড়িয়ে চলুন।
গ. ব্যক্তিগতভাবে মনে রাখার মতো কিছু বেছে নিন।
ঘ. সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্ন যোগ করুন।
২. সব ধরনের ক্যারেক্টারের মিশ্রণ ব্যবহার করুন
হাইভের গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে বর্ণ, সংখ্যা ও প্রতীক মিলিয়ে জটিল পাসওয়ার্ড তৈরি করলে সেটি হ্যাক করা সবচেয়ে কঠিন।
৩. পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন
প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা ও জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখা প্রায় অসম্ভব। তাই পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করাই সেরা সমাধান। এগুলো আপনার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি, সংরক্ষণ এবং প্রয়োজনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রয়োগ করতে পারে। আজকের দিনে জিপিইউ এবং এআই প্রযুক্তি যেভাবে দ্রুত এগোচ্ছে, তাতে দুর্বল পাসওয়ার্ড নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি। শক্তিশালী, দীর্ঘ এবং জটিল পাসফ্রেইজ ব্যবহার করাই এখন সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
সূত্র : টেক রিপাবলিক