সবজিওয়ালার দেওয়া পলিথিন ব্যাগ, প্লাস্টিকের সিংগেল ইউজ কাপ, চকলেটের খোসা বা কালি ফুরিয়ে যাওয়া কলম- এই জিনিসগুলো কি আপনি রান্নাঘরের আবর্জনার সঙ্গেই ডাস্টবিনে ফেলে দিচ্ছেন?
প্রতিদিন এমন টন টন অপচনশীল আবর্জনার স্তুপ বড় হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশ দূষণের বিপদ। তাহলে কী করবেন এসব আবর্জনা। কীভাবে আপনার শিশুর জন্য রেখে যাবেন একটি বাসযোগ্য পৃথিবী?
আজ গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে ২০২৫, এ দিনে নতুন করে ভাবতে শুরু করুন এ বিষয়ে। এটি শুধু একটি বিশেষ দিনই না, বরং একটি চিন্তা, একটি দায়িত্ব। রিডিউস, রিইউজ ও রিসাইকেল- এই তিনটি সহজ অভ্যাসের মধ্য দিয়ে এই দিনটির সফলতা আনা সম্ভব। সহজ ভাষায় বললে, আজকের দিনটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা যেভাবে জিনিসপত্র ব্যবহার করি, সেটা আবার রিসাইকেল করে নতুন করে ব্যবহার করা যায়। কিছু জিনিস একাধিকবার ব্যবহারের মাধ্যমে আবর্জনা কমানো যায়। আর এই ছোট্ট চিন্তাটি আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে।
রিসাইক্লিং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ভেবে দেখুন আমরা প্রতিদিন কত কিছু ফেলে দেই। প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, প্যাকেট, ইলেকট্রনিক জিনিস। এগুলো সবই মাটিতে গিয়ে জমা হয়। আর এই জঞ্জাল পৃথিবীর জন্য কত বড় সমস্যা তৈরি করছে, তা তো কারোই অজানা নয়। সমুদ্রে প্লাস্টিকের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে সামুদ্রিক প্রাণীরা আজ বিপদগ্রস্ত। আর আমাদের শহরগুলোও ডুবে যাচ্ছে আবর্জনার ভারে।
এই সমস্যার সমাধান হেলো রিসাইক্লিং। আমরা যদি আমাদের ফেলে দেওয়া জিনিসগুলোকে সঠিকভাবে আলাদা করি এবং সেগুলোকে আবার নতুন করে ব্যবহারযোগ্য করে তুলি, তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
রিসাইক্লিং শুধু আবর্জনা কমায় না, বরং এটি প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ, শক্তি সাশ্রয় এবং কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমাতেও সাহায্য করে। যেমন- এক টন কাগজ রিসাইক্লিং করলে ১৭টি গাছ বাঁচানো যায়; প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করলে তেলের ব্যবহার কমে; ইলেকট্রনিক বর্জ্য রিসাইক্লিং করলে বিষাক্ত পদার্থ মাটি ও পানিতে মিশতে পারে না। শুধু প্লাস্টিক আর ধাতুই না, আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড়ও রিসাইকেল ও রিইউজ করতে পারেন।
গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে প্রথম পালন করা হয় ২০১৮ সালের ১৮ মার্চ। এই দিনটির প্রতিষ্ঠাতা হলো দ্য গ্লোবাল রিসাইক্লিং ফাউন্ডেশন (জিআরএফ)। রিসাইক্লিংকে বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার জন্য সংস্থাটি এই দিনটির সূচনা করে। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল রিসাইক্লিংকে শুধু পরিবেশ রক্ষার একটি উপায় হিসেবেই না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্পদ সংরক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
কীভাবে শুরু করবেন?
রিসাইক্লিং শুরু করার জন্য আপনাকে খুব বড় কিছু করতে হবে না। কয়েকটি ছোট ছোট অভ্যাস পাল্টানোর মধ্য দিয়ে শুরু করুন বড় পরিবর্তন-
১. প্লাস্টিক, কাগজ, গ্লাস আলাদা করুন
বাড়িতে আলাদা ডাস্টবিন রাখুন। প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, মেটাল এগুলো আলাদা স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করুন যেন রিসাইক্লিং করার মতো জিনিসগুলো পচনশীল আবর্জনার মধ্যে জমা না হয়। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে রিসাইক্লিং একদম হাতের নাগালে না থাকলেও প্রচুর ছোট ছোট ব্যবসা আছে যারা ভ্যানে করে ঘুরে ঘুরে এসব নির্দিষ্ট উপাদান সংগ্রহ করে। যেমন লোহা বা অন্য মেটাল, প্লাস্টিকের বোতল, নষ্ট ব্যাটারি ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স। এসব বাতিল জিনিসগুলো বাসায় জমা করে একসঙ্গে দিয়ে দিন এমন ব্যবসায়ীদের। এর ফলে ওইসব দ্রব্য রিসাইকেল হয়ে পুনরায় কাজে আসবে।
২. পুনরায় ব্যবহার করুন: সিংগেল ইউজ প্লাস্টিক আমাদের পরিবেশের একটি প্রধান শত্রু। অনেক জিনিসই আমরা একবার ব্যবহার করে ফেলে দিই। যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, কাপ, চামচ ইত্যাদি। এগুলো একাধিকবার ব্যবহার করার মাধ্যমে আবর্জনা উৎপাদন কমানো সম্ভব। আরো ভালো হয় যদি এসবের প্রাকৃতিক বিকল্পগুলো ব্যবহার করার অভ্যাস করতে পারেন। যেমন- পাট বা কাপড়ের ব্যাগ, কাঁচ বা স্টিলের গ্লাস ও কাপ, স্টিলের চামচ ইত্যাদি।
৩. ই-ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট: পুরোনো মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাটারি- এধরনের ইলেকট্রনিক আবর্জনা মাটিতে দূষিত পদার্থ মিশিয়ে দেয়। তাই এগুলো ডাস্টবিনে ফেলে না দিয়ে রিসাইক্লিং সেন্টারে দিয়ে দিন। অথবা বাতিল ইলেকট্রনিক্স জমিয়ে রেখে একসঙ্গে অনেকগুলো হওয়ার পর বিক্রি করে দিতে পারেন।
৪. আপনার ও পরিবারের কাজে লাগেনা এমন কাপড়, জুতো, বই এসবও রিসাইকেল করতে পারেন। ব্যবহার উপযোগী কাপড়গুলো দান করে দিতে পারেন বা সেকেন্ড-হ্যান্ড কাপড়ের দোকানে বিক্রি করে দিতে পারেন। ব্যবহারের উপযোগী না যেগুলো সেগুলো পুনরায় ব্যবহার করার যোগ্য করতে রিসাইকেল সেন্টারে পাঠিয়ে দিন।
কীভাবে পালন করা হয় এই দিনটি?
প্রতিবছর গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে পালনের জন্য বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয়। যেমন-
ক্যাম্পেইন ও ওয়ার্কশপ: স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটিতে রিসাইক্লিং সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ক্যাম্পেইন ও ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয়।
কমিউনিটি ক্লিন-আপ ড্রাইভ: এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয় এবং আবর্জনা আলাদা করে রিসাইক্লিং করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন: হ্যাশট্যাগ (#GlobalRecyclingDay) ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় রিসাইক্লিং সম্পর্কে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা: সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা করে রিসাইক্লিং নীতিগুলোকে আরও শক্তিশালী করা হয়।
গ্লোবাল রিসাইক্লিং ডে বা বিশ্ব পুনর্ব্যবহার দিবসের মূল লক্ষ্য হলো পৃথিবীবাসীকে রিসাইক্লিং বা পুনর্ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা। এই দিনটি পালনের মাধ্যমে আমরা শুধু পরিবেশ রক্ষাই না, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলার দায়িত্ব নিই।
এএমপি/এএসএম