বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে ছাত্রশিবিরকে দায়ী করে বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনির বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এক যৌথ প্রতিবাদ বার্তায় এ নিন্দা প্রকাশ করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বিএনপির স্বনির্ভর-বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি ১৮ সেপ্টেম্বর বেসরকারি এক টিভি চ্যানেলের টকশোতে দাবি করেন, ‘বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে শিবির হত্যা করেছে।’ যে বক্তব্য গণমাধ্যম সূত্রে আমাদের নজরে এসেছে। ছাত্রলীগ কর্তৃক বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন- তা শুধু মিথ্যাচারই নয়, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইকে অশ্রদ্ধা ও প্রশ্নবিদ্ধ করার শামিল। রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়ে ছাত্রশিবিরের বিরোধিতা করতে গিয়ে তিনি মিথ্যাচারের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। তার এই নির্জলা মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে। আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে তাকে শিবির ট্যাগ দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে তারা, যা আদালতের রায় দ্বারা প্রমাণিত।
আরও পড়ুন
বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের
গায়ের জোরে দেশ শাসনের দিন শেষ: মিয়া গোলাম পরওয়ার
ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনকালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে এমন কোনো অপরাধ নেই যা করেনি। খুন, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন, বিরোধী মত দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ইত্যাদি ছিল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও তার অঙ্গসংগঠনসমূহের নৈমিত্তিক কর্মকাণ্ড। ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ নির্যাতনের শিকার বিএনপি, জামায়াত এবং আওয়ামী বিরোধী সব দল ও মতের সংগ্রাম ছিল তাদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেই।
তারা যোগ করেন, ফ্যাসিস্ট শাসনামলে সবচেয়ে নিপীড়িত সংগঠন হলো বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। বিগত ১৬ বছরে সংগঠনের ১০১ জন জনশক্তিকে শহীদ করা হয়েছে। ২০ হাজারেরও বেশি মামলায় গ্রেফতার করে নির্যাতনের মাধ্যমে অসংখ্য নেতাকর্মীকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। এখনো আমাদের ৭ জন জনশক্তি গুম রয়েছেন। শিবির সন্দেহে সনাতন ধর্মাবলম্বী বিশ্বজিতসহ অসংখ্য মানুষকে হত্যা ও নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগ, যার প্রমাণ গণমাধ্যম ও জাতির সামনে স্পষ্ট।
‘অথচ বিএনপি নেত্রী নিলুফার চৌধুরী মনি ছাত্রশিবিরের বিরোধিতা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সীমাহীন অপরাধকে দায়মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, যা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে- তিনি আসলে পতিত ফ্যাসিস্টদের এজেন্ট হয়ে কাজ করছেন কি না। শুধু তাই নয়, ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক ইমেজ বিনষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে তিনিসহ একটি বিশেষ চক্র এমন মিথ্যাচার পথ বেছে নিয়েছেন।’
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা তার এই বক্তব্য ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে এই অসত্য ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
কেএসআর/জেআইএম