আম গাছে সার দেওয়ার নিয়ম

2 months ago 7

আম বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফলদ বৃক্ষ। যা পুষ্টি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক দিক থেকে মূল্যবান। সঠিকভাবে আম গাছের যত্ন ও ব্যবস্থাপনা করলে এর উৎপাদন ও ফলন ক্ষমতা অনেকগুণ বৃদ্ধি পায়। এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো সুষম সার প্রয়োগ। প্রাকৃতিকভাবে মাটিতে থাকা পুষ্টি উপাদান অনেক সময় আম গাছের চাহিদা পূরণে যথেষ্ট হয় না। বিশেষ করে চাষাবাদ, ফলন ও বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে গাছের বিভিন্ন পরিমাণ পুষ্টির দরকার হয়। এসব পুষ্টির অভাব হলে গাছ দুর্বল হয়, ফল ঝরে পড়ে, গুটির আকার ছোট হয় এবং রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। এসব সমস্যার সমাধানে পর্যাপ্ত ও সঠিক অনুপাতে সার প্রয়োগ অপরিহার্য।

সার প্রয়োগের মাধ্যমে আম গাছের বৃদ্ধি, ফুল ধারণ, ফলন এবং ফলের গুণগত মান নিশ্চিত করা যায়। তবে সার প্রয়োগে সময়, গাছের বয়স, মাটির ধরন এবং স্থানীয় আবহাওয়া বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। এ পটভূমিকায় বলা যায়, টেকসই আম উৎপাদনের জন্য গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সরবরাহ করতে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সার ব্যবস্থাপনা একটি অপরিহার্য কৌশল।

আম গাছে সার প্রয়োগের জন্য প্রথমে গাছের গোড়া থেকে ১-১.৫ মিটার দূরে মাটি কুপিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। এরপর সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে। সার প্রয়োগের উপযুক্ত সময় হলো জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে আষাঢ় মাস (মে-জুলাই) এবং সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ।

আম গাছের সার প্রয়োগের পদ্ধতি
গাছের গোড়া থেকে ১-১.৫ মিটার দূরে গর্ত করে সার প্রয়োগ করতে হবে। গর্ত করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাছের শিকড়ের ক্ষতি না হয়। ৩ বৎসর বয়সের গাছে, জৈব সার যেমন- ২৫ কজি গোবর সার; রাসায়নিক সার যেমন- ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম, টিএসপি ৭৫০ গ্রাম, এমওপি ৪৫০ গ্রাম ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। সারের পরিমাণ গাছের বয়স ও মাটির ধরনের ওপর নির্ভর করে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দেওয়া উচিত।

সার দেওয়ার সময়সূচি
ডিম্বাক গঠন ও ফুল আসার আগে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) সার দিতে হবে। পুরো টিএসপি, অর্ধেক এমওপি, অর্ধেক গোবর মাটিতে মিশিয়ে দিন। ফল ধরার পর ও ফল বড় হওয়া শুরুতে (মার্চ-এপ্রিল) অর্ধেক ইউরিয়া, অর্ধেক এমওপি। ফল সংগ্রহের পর (জুন-জুলাই) বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ও বাকি গোবর সার দিতে হবে। প্রয়োজনে জিংক, বোরন বা সালফারের মতো অণু-পুষ্টি উপাদান দেওয়া যেতে পারে।

সারের প্রকারভেদ এবং প্রয়োগ
জৈব সার: গাছের বৃদ্ধি ও ফলন ভালো করতে বছরে দুবার জৈব সার প্রয়োগ করা উচিত, বর্ষার আগে এবং শীতের আগে।

রাসায়নিক সার: গাছের বয়স ও ফলন অনুযায়ী রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। সাধারণত ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি সার ব্যবহার করা হয়।

সারের পরিমাণ: গাছের বয়স ও মাটির ধরনের ওপর ভিত্তি করে সারের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

সারের কিস্তি: সাধারণত বছরে দুবার সার প্রয়োগ করা হয়।

অন্যান্য টিপস
সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দেওয়া উচিত। গাছের গোড়ার আগাছা পরিষ্কার রাখা প্রয়োজন। ফুল আসার আগে এবং ফল আসার পর সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। ফল আসার পর শুধু ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। অতিরিক্ত সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। এতে গাছের ক্ষতি হতে পারে। আম গাছে সঠিক পরিমাণে সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হবে এবং রোগবালাই কম হবে।

আম গাছের সঠিক বৃদ্ধি, ফুল ধারণ, ফল ধারণ এবং ফলের গুণগত মান রক্ষার্থে সময়োপযোগী ও সুষম সার প্রয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গাছের বয়স, মাটি ও আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে সারের মাত্রা ও প্রয়োগ সময় ঠিক করতে হয়। গাছের জীবনের প্রতিটি ধাপে—চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ফল ধরা পর্যন্ত—সার প্রয়োগে যত্নবান হতে হয়।

জৈব সার যেমন- গোবর, কম্পোস্ট বা ভার্মি কম্পোস্টের পাশাপাশি ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, বোরন ও দস্তা জাতীয় সার সঠিক অনুপাতে দিলে গাছ সুস্থ থাকে এবং ফলন বাড়ে। তাই আম গাছে সার ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশনা অনুসরণ, মাটির গুণাগুণ পরীক্ষা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণই উন্নত ফলন ও লাভজনক চাষের প্রধান চাবিকাঠি।

এসইউ/এএসএম

Read Entire Article