আম বাগানে আদা চাষে সোহেলের লাভ ১২ লাখ টাকা

2 months ago 33

আম বাগানে ৫ হাজার বস্তায় আদা চাষ করে সাড়া ফেলেছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়নের নাড়াডাঙ্গা গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো.আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল (৩৫)। এ আদা চাষে তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশাবাদী। 

কৃষি সম্পর্কে তার আগ্রহ এতটাই প্রবল ছিল যে স্কুল শেষ করার পর মান্দা আলহেরা কৃষি কলেজ থেকে ২০১৩ সালে কৃষিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন তিনি।  

বিভিন্ন ফসল চাষাবাদের পাশাপাশি তিনি এবার আম বাগানের মধ্যে করেছেন বস্তায় আদা চাষ। যা ওই এলাকায় একদমই নতুন। কৃষিজমি ব্যবহার না করে আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল তার নিজ দেড় বিঘা আম বাগানের মধ্যে ৫ হাজার ২ শত ৮০ বস্তা বারি আদা-২ জাতের আদার চাষ করেছেন। এতে সাফলতার স্বপ্ন দেখছেন তরুণ ওই উদ্যোক্তা।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সরেজমিনে আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেলের আম বাগানের আদার জমিতে গিয়ে দেখা যায়, সিমেন্টের সারি করে সাজানো রয়েছে আদার বস্তা। কয়েকজন শ্রমিক সেখানে পরিচর্যা করছেন। বাগানের চারিদিকে সবুজ আর সবুজ। যা দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়। 

আদা চাষি আবু বক্কর সিদ্দিক সোহেল কালবেলাকে বলেন, আমার এই জমিতে প্রথমে আম বাগান করি। পরবর্তীতে সময়ে আমগুলো নামানোর পর জায়গায়টি ফাঁকা থাকে। এরপর মাথায় চিন্তা আসলো বাগানের মধ্যে অন্য ফসল চাষ করা যায় কি না? এরপর মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা বস্তায় আদা চাষের পরামর্শ দেয় এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় একটা প্রদর্শনী দেয়। প্রদর্শনীতে ৫০০ বস্তা আদা চাষের জন্য সহায়তা দিলেও একবারে আমি ৫ হাজার ২ শত ৮০ বস্তা আদা চাষ করার পরিকল্পনা করে কাজ শুরু করি। এতে মাটি, সার আর বীজ মিলে প্রতি বস্তায় খরচ হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। এক্ষেত্রে সবমিলে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তবে বর্তমানে সবকিছু খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা আয় হবে বলে মনে করছি। এতে লাভ হবে প্রায় ১২ লাখ টাকা।

স্থানীয় কৃষক মো. নাজমুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, আম বাগানে আদা চাষ এভাবে আমরা কখনো দেখিনি। আমারও জায়গা-জমি আছে। সোহেল যেভাবে বস্তায় আদা চাষ করেছে তা দেখে খুব খুশি হয়েছি। এতে আমরাও এই আদা চাষ করতে আগ্রহী। 

বারিল্যা গ্রামের বস্তায় আদা চাষ দেখতে আসা সুফল কুমার কালবেলাকে বলেন, আম বাগানের ভেতরে বস্তায় আদা চাষ। সেটা দেখার জন্য আমরা মাঝে মধ্যে আসি। এখানে আসলে খুব ভালো লাগে। আমিও চিন্তা ভাবনা করেছি ভবিষ্যতে এভাবে বস্তায় আদা চাষ করবো।

সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন কালবেলাকে বলেন, আদা চাষে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো কাণ্ড পচা রোগ। এ রোগ দেখা দিলে ওই ক্ষেতের অধিকাংশ গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তবে বস্তায় আদা চাষ করলে কাণ্ড পচা রোগের সম্ভাবনা খুব কম। দেখা দিলেও ওই বস্তা সরিয়ে ফেলে কিছু ওষুধ স্প্রে করে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। সোহেলের আম বাগানে বস্তায় আদাগুলো অত্যন্ত ভালো হয়েছে। এতে ভালো একটা সফলতা আসবে তার।

এ বিষয়ে মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শায়লা শারমিন কালবেলাকে জানান, তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা সোহেলকে আমরা বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করেছি। এ ছাড়া নিয়মিত মনিটরিং ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা প্রদর্শনী স্থাপন করছি যাতে ওই এলাকার কৃষকরা বস্তায় আদা চাষে আরও আগ্রহী হয়।

Read Entire Article