‘আমরা দুই, আমাদের তিন’- নীতিতে চলতে বললেন আরএসএস নেতা

2 weeks ago 12

ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির আদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, দেশের প্রতিটি পরিবারে অন্তত তিনটি করে সন্তান থাকা উচিত। তার মতে, কোনো পরিবারকে দীর্ঘ মেয়াদে টিকিয়ে রাখতে দুটি সন্তান যথেষ্ট নয়, সমাজ ও বংশধারা রক্ষার জন্য অন্তত তিনটি সন্তান প্রয়োজন।

শাস্ত্রে বলা আছে, যে সম্প্রদায় বংশবিস্তার করে না, তারা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায়। ভাগবতের এই মন্তব্য সামনে আসতেই তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়।

তিনি বলেন, ভারতের জনসংখ্যা নীতি অনুসারে পূর্ণ স্তরে পৌঁছাতে গড়ে ২ দশমিক ১ জন সন্তান প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে ২ দশমিক ১ মানে দাঁড়ায় তিনজন। তাই তিন সন্তানই হওয়া উচিত।

এখানেই থেমে থাকেননি ভাগবত। তিনি বলেন, চিকিৎসক ও সমাজবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, তিন সন্তান হলে মা ও সন্তানের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, পরিবারে বোঝা সুষমভাবে ভাগ হয় এবং সন্তানরা একে অপরের সঙ্গে মেলামেশা শেখে। তার মতে, দুই সন্তানের পরিবারে সন্তানরা প্রায়ই একাকিত্বে ভোগে, কিন্তু তিনজন থাকলে তারা দায়িত্বশীলতা ও সহনশীলতা শেখে।

ভাগবতের বক্তব্যে আরেকটি প্রসঙ্গ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ে জন্মহার দ্রুত কমছে। বিশেষত হিন্দু পরিবারে সন্তান সংখ্যা নেমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। অন্য সম্প্রদায়েও কমছে জন্মহার।

আরও পড়ুন : চোর সন্দেহে গুগল ম্যাপসের কর্মীদের গণপিটুনি

তার এই বক্তব্যকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সরাসরি এক ধরনের সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখছেন।

ভারতের পরিবার পরিকল্পনা নীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, ষাট ও সত্তরের দশক থেকে দেশজুড়ে প্রচার চালানো হয়েছিল- ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। বিশেষ করে জরুরি অবস্থার সময় (১৯৭৫-৭৭) জোর করে জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চালানোর পর ‘দুই সন্তান নীতি’ কার্যত সরকারি অবস্থান হয়ে দাঁড়ায়। ভাগবতের বক্তব্য সেই দীর্ঘ প্রচলিত অবস্থান থেকে একেবারে ভিন্ন।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও এসেছে দ্রুত। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়রাম রমেশ বলেছেন, যখন সারা পৃথিবী জলবায়ু সংকট, খাদ্যঘাটতি ও সীমিত সম্পদের ব্যবহার নিয়ে চিন্তিত, তখন ভাগবতের মতো প্রভাবশালী নেতা তিন সন্তানের কথা বলে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন। বামপন্থি নেতারাও সমালোচনা করেছেন এই বক্তব্যের। তাদের মতে, এটি ভারতের সংবিধান-সম্মত পরিবার পরিকল্পনা নীতির পরিপন্থি।

তবে আরএসএস নেতার এই অবস্থানের বিষয়ে বিজেপির ভেতরে দ্বিধা দেখা গেছে। কেউ কেউ ভাগবতের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, এটি আসলে জন্মহারের ভারসাম্য রক্ষার যুক্তি। অন্যদিকে সরকারি পর্যায় থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আরএসএসের বক্তব্য সরাসরি সরকারের নীতি নির্ধারণ করে না, তবে বিজেপির রাজনীতিতে এই সংগঠনের প্রভাব অনস্বীকার্য। ফলে ভাগবতের মন্তব্যকে একেবারে হালকাভাবে নেওয়া যাবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের মোট প্রজনন হার এখন প্রায় ২ দশমিক শূন্য ১, অর্থাৎ প্রতিস্থাপন স্তরের কাছাকাছি। দক্ষিণ ভারতের অনেক রাজ্যে এই হার আরও নিচে নেমে গেছে- ১ দশমিক ৬ বা ১ দশমিক ৭। দীর্ঘ মেয়াদে এর প্রভাব পড়বে সমাজে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর। ভাগবতের বক্তব্যকে এই প্রেক্ষাপটেই বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ভাগবতের যুক্তিতে কিছু বাস্তবতা আছে। জনসংখ্যার ভারসাম্য নষ্ট হলে অর্থনীতি ও শ্রমবাজারে প্রভাব পড়বে। আবার অন্যরা বলছেন, এই বক্তব্যের অন্তরালে ভোটের রাজনীতির হিসাবও আছে। কারণ সম্প্রদায়ভিত্তিক জন্মহার নিয়ে বিতর্ক ভারতীয় রাজনীতিতে বরাবরই বড় ইস্যু। ভাগবতের সাম্প্রতিক মন্তব্য সেই বিতর্ককে উসকে দিয়েছে।

Read Entire Article