ছোটবেলা থেকে আমরা সবাই শুনে আসছি যে, একটি অমলকিতে ১০টি কমলার সমান ভিটামিন-সি থাকে। নিঃসন্দেহে আমলকি আমাদের দেশের খুব পরিচিত একটি ফল, এর ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ অসাধারণ।
নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, সর্দি-কাশি ও সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বার্ধক্য ধীর করে, ত্বক উজ্জ্বল রাখে ও চুল মজবুত করে। একই সঙ্গে হজমশক্তি ভালো করে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, কোলেস্টেরল কমানো ও হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষাতেও আমলকি কার্যকর। কিন্তু সবার শরীরের জন্যই কি এটি সমানভাবে উপকারী?
উত্তর হল – না। প্রত্যেক মানুষের শরীরিক বৈশিষ্ট্য ও সমস্যা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন খাদ্য তার উপকারে আসে। তাই আমলকির মতো ফলও সবার জন্য উপকারী নাও হতে পারে। জেনে নিন কোন কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে আমলকি সাবধানে খাওয়া উচিত-
নিয়মিত আমলকি খেতে সাবধান থাকবেন যারা
১. রক্তচাপের ক্ষেত্রে সতর্কতা
আমলকি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের রক্তচাপ আগে থেকেই কম বা প্রেশার কমে যাওয়ার প্রবণতা আছে, তাদের জন্য এটি বেশি খাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মিত বেশি পরিমাণ আমলকি খেলে মাথা ঘোরা, দুর্বলতা বা অস্বস্তি দেখা দিতে পারে। এমনকি হঠাৎ রক্তচাপ কমে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
২. ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সীমাবদ্ধতা
আমলকিতে প্রচুর ফাইবার আছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এটি উপকারী। তবে যাদের রক্তে সুগার হঠাৎ করে কমে যায় বা যাদের শরীরে শর্করার মাত্রা সাধারণত কম থাকে, তাদের জন্য নিয়মিত আমলকি খাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
৩. হার্টের রোগীদের জন্য ঝুঁকি
আমলকি হার্টের জন্য ভালো হলেও, যাদের আগে থেকেই হৃদ্রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি নিয়মিত খাওয়া উচিত নয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি ওষুধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া করতে পারে, যেমন ব্লাড থিনার ওষুধের সঙ্গে।
৪. অ্যাসিডিটি বা অম্বলের সমস্যা
আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন-সি ও অ্যাসকরবিক অ্যাসিড থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। কিন্তু যাদের অম্বল বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেশি, তারা যদি নিয়মিত বেশি আমলকি খান, তাহলে সেই সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্যের আশঙ্কা
যদিও আমলকিতে ফাইবার থাকে, তবুও এর ভেতরে থাকা ট্যানিন নামের উপাদান অতিরিক্ত খেলে উল্টো কোষ্ঠকাঠিন্য তৈরি করতে পারে। তাই পরিমিত খাওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
প্রতিটি খাবারই নিজের শরীরের পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে খাওয়াই সঠিক ডায়েটের লক্ষণ। তাই অন্য কারো কথায় নিজের ডায়েটের আমূল পরিবর্তন করবেন না। বিশেষ করে কোনো নির্দিষ্ট খাবার প্রতিদিন খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সূত্র: আনন্দবাজার
এএমপি/জিকেএস