জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে নিজ এলাকায় প্রবেশের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বহরে থাকা ১৩৫টি গাড়ির ‘অর্থায়ন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ নিয়ে খোদ তার দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারাও ফেসবুকে এক পোস্টের মাধ্যমে খোলা চিঠি দিয়েছেন। সেখানে তিনি গাড়ি বহরের অর্থায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এর ঘণ্টা দুয়েক পর তাসনিম জারার প্রশ্নে উত্তরে সারজিস আলমও তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রায় ৫০টার মতো গাড়ির ৬ হাজার টাকা করে যে তিন লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে, তার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের আরও ৫০ বছর আগেও ছিল।’
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) রাত ৯টায় এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে সারজিস আলম এসব কথা বলেছেন।
পারিবারিক সম্পত্তির হিসাব দিয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং জেলার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে অর্ধেকের বেশি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। যেগুলোর ব্যয় আমাদের বহন করতে হয়নি। বাকি প্রায় ৫০টার মতো গাড়ির ৬,০০০ করে যে তিন লাখ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে। তার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য আমার পরিবারের আরও ৫০ বছর আগেও ছিল। এবং আমি বিশ্বাস করি অন্য কেউ না; শুধু আমার দাদা আমার জন্য যতটুকু রেখে গিয়েছেন, সেটা দিয়ে আমি আমার ইলেকশনও করে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।’
ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয় মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, ‘আপনার প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করার জনবল এবং সামর্থ্য আপনার যদি না থাকে কিংবা আপনি দেখাতে না পারেন তাহলে মাঠের রাজনীতিতে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। অন্য নেতা তো দূরের কথা সাধারণ জনগণও আপনাকে গোনায় ধরবে না। কারণ মানুষ স্বভাবতই ক্ষমতামুখী।‘
তিনি বলেন, ‘আমাদের যেমন নতুন বন্দোবস্তের দিকে যেতে হবে তেমনি মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পূর্বের যেই বন্দোবস্তগুলো চাইলেই এখনই ছুড়ে ফেলা সম্ভব নয়, সেগুলো কেউ পাশে রেখে আপাতত চলতে হবে। যেদিন সেগুলোও ছুড়ে ফেলার সুযোগ আসবে সেদিন সেগুলোর ছুড়ে ফেলতে হবে।’
তাসনিম জারাকে প্রশ্ন রেখে সারজিস বলেন, ‘আমরা তো অনেকেই চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, মামলা-বাণিজ্য, হয়রানি এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেললাম। কিন্তু এই অভ্যুত্থানেরই একটি অংশ আবার ওই একই কাজগুলো করছে। আটকাতে পেরেছেন কি? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা-আপনারা অনেকে কথাও বলতে পারছি না। আর বললেও তারা সে কথাকে কানে নেয় না। কথা বলতে পারছি সেই অল্প কিছু নতুন করে চিন্তা করা মানুষের বিরুদ্ধে, যারা এখনো সেই কথা বলার স্পেসটা দেয় এবং সেই কথাগুলোকে রিসিভ করে।’
এর আগে এনসিপি গঠনের পর প্রথমবারের মতো গত সোমবার নিজ জেলা পঞ্চগড়ে আসেন সারজিস আলম। প্রথমে ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নামেন তিনি। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান।
দেবীগঞ্জ থেকে ১৩৫টি গাড়ির বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। সারজিস আলমের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে সারজিস আলমের এই শোডাউন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।