ঘটনাটি ২০০১ সালের। জুবিন গার্গের ক্যারিয়ার তখন মধ্যগগনে। আসামীয়া ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক হিট গান উপহার দিচ্ছেন এ শিল্পী। ঠিক ওই বছরেই ‘ধাগ’ নামের এক আসামীয়া সিনেমাতে ‘মায়াবিনী রাতির বুকুত’ গানটি গেয়ে সবার মনে ঝড় তুলে দিলেন জুবিন গার্গ। তারপর হিন্দি-বাংলা সিনেমা মিলিয়ে একগুচ্ছ সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি।
তবে দুদশক পার হলেও ‘মায়াবিনী রাতির বুকুত’ গানটির জনপ্রিয়তায় বিন্দুমাত্র ভাঁটা পড়েনি। সেটা জুবিন সম্ভবত নিজেও উপলব্ধি করেছিলেন! তাই বোধহয় বছর দুয়েক আগে আসামের এক অনু্ষ্ঠানে মঞ্চে গাইতে উঠে ‘মায়াবিনী’ গানটি ধরার আগে গায়ক বলেছিলেন, ‘আমার মৃত্যু হলে আসামের বুকজুড়ে এই গানটিই বাজবে।’ জুবিন গার্গের সেই ভবিষ্যদ্বাণীই যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেল!
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জুবিনের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে থমথমে আসাম! চারদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। কাহিলিপাড়ার বাড়ির সামনে জনসমুদ্র। অনুরাগীমহলের কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। কেউ উদভ্রান্তের মতো ছোটাছুটি করছেন। ‘জুবিনদা’ নেই- কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীরা! প্রিয় গায়ক, ভূমিপুত্রকে চোখের জলে স্মরণ করতে গিয়ে কেউ জুবিনের গাওয়া আসামীয়া গান ধরছেন তো কোথাও বা আবার অন্ধকার ভেদ করে দূর থেকে ভেসে আসছে ‘মায়াবিনী রাতির’ গান। যে গান জুবিনের নিজের বাঁধা, নিজের গাওয়া। গানে গানেই জুবিনকে আঁকড়ে রাখতে চান তারা। ঠিক যেমনটা জুবিন নিজে চেয়েছিলেন। বছর দুয়েক আগে করা তার সেই ভবিষ্যদ্বাণীই ফলে যাওয়ার সাক্ষী থাকল আসামের মাটি, ব্রহ্মপুত্র আর আসামীয়া ভাষা।
নব্বই দশকে ভারতের সংগীতাঙ্গনে হাতেখড়ি করা আসামে জন্মগ্রহণ করা জুবিন নিজগুণে বলিউডে আসন করে নিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ মানুষ। হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পে জনপ্রিয়তা লাভ করলেও আসামের শিকড় ভুলে যাননি। মাতৃভূমির সংস্কৃতিকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরতেই গিয়েছিলেন সিঙ্গাপুরে।
আরও পড়ুন:
গায়ক জুবিনের মৃত্যুতে আয়োজকদের নামে মামলা
আজ (২০ সেপ্টেম্বর) সিঙ্গাপুরে নর্থ ইস্ট ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করার কথা ছিল গায়কের। কিন্তু সেই শো আর করা হলো না তার! শোকাতুর আসামজুড়ে এখন জুবিনকে শেষবারের মতো দেখার অপেক্ষা। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা জানিয়েছেন, ‘শনিবার সিঙ্গাপুরেই ময়নাতদন্ত হবে গায়কের। সেসব পর্ব শেষ করতেই দুপুর হবে। এরপরই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে গায়কের দেহ হস্তান্তর করা হবে। তারপর তাকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করব আমরা।’
এমএমএফ/জেআইএম