একের পর এক ইনজুরিতে জেরবার ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারের ক্যারিয়ার। মাঠেই নামতে পারছেন না তিনি। ইনজুরিমুক্ত হয়ে মাঠে নামলেই আবার পড়ছেন ইনজুরিতে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর কতদিন মাঠে নেমেছেন, তা গুনে বের করা যাবে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিল ফুটবলপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, ২০২৬ বিশ্বকাপ কি খেলতে পারবেন নেইমার? ওই সময়টা কি তিনি ইনজুরিমুক্ত থাকতে পারবেন, নাকি আবারও ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ মিস করবেন? আবার আরেকটু এগিয়ে ভক্তদের প্রশ্ন হলো, নেইমার কি সত্যি সত্যি আর ভালোভাবে মাঠে নামতে পারবেন? তাহলে কতদিন খেলবেন আর তিনি?
এতসব প্রশ্ন ওঠার পর নেইমার নিজেই উত্তর জানাতে হাজির হলেন দর্শকদের সামনে। এক পারিবারিক সাক্ষাৎকারে নেইমার জানালেন, তিনি যতদিন নিজের মত পারফর্ম করতে পারবেন, ততদিন খেলা চালিয়ে যাবেন। অর্থ্যাৎ, নির্দিষ্ট কোনো টাইমলাইন নেইমার বেধে দেননি তার ফুটবল ছাড়ার বিষয়ে।
৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড সম্প্রতি শৈশবের ক্লাব সান্তোসের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছেন, যা ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং এতে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত বাড়ানোরও একটি অপশন রয়েছে এই চুক্তিতে।
পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা মিলে নেইমারের একটি সাক্ষাৎকারের আয়োজন করেন। সেখানেই নেইমার নিজের স্ত্রী ব্রুনা বিয়ানকার্ডির পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসিত হন, কেন তিনি এখনো পেশাদার ফুটবল খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন? জবাবে নেইমার বলেন, ‘আমার এখনও খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হলো, ফুটবলের প্রতি আমার ভালোবাসা। মাঠে খেলার ইচ্ছা, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুশীলন করার তাগিদ- এটাই আমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ফুটবলের প্রতি আমার ভালোবাসা কখনো শেষ হবে না। এটি সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকবে। যখন আমার খেলার ইচ্ছা শেষ হয়ে যাবে, যখন আমি আর নিজের মতো পারফর্ম করতে পারব না, তখন থেমে যাব। তবে যতক্ষণ আমার ফুটবল খেলার ইচ্ছা আছে, ততক্ষণ আমাকে ভাগ করে নিতে হবে, আমার প্রিয়।’
নেইমার প্রায়ই তার লাইফস্টাইলের জন্য সমালোচনার মুখে পড়েন। সাবেক বার্সা ও পিএসজি তারকা এ বিষয়ে তার স্ত্রীকে বলেন, ‘আমি অন্যের চিন্তাভাবনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। যারা আমাদের জীবন সম্পর্কে কিছুই বোঝে না, তাদের সমালোচনার জবাব দেওয়া কঠিন। বিচার করা সহজ; কিন্তু এর পেছনের কারণ বোঝা কঠিন। আমি আমার পুরো ক্যারিয়ারে এ কারণে একটু দুঃখী ছিলাম, কারণ যারা আমাকে চেনে না, তারা আমার সম্পর্কে শুধু ফুটবল নয়, অন্য বিষয়েও কথা বলে।’
নিজের সম্পর্কে বেশ আত্মবিশ্বাসী নেইমার। তিনি বলেন, ‘আমি জানি, আমি একজন ভালো মানুষ। আমি চাই মানুষ মাঠে আমার পারফরম্যান্সের দিকে বেশি গুরুত্ব দিক। আজকাল ইন্টারনেট এবং সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে কেবলমাত্র একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবে মনোযোগ দেওয়া কঠিন।’
‘এটা খারাপ, দুঃখজনক যে, একটা নির্দিষ্ট উপায়ে বিচার করা, এমনকি কখনও কখনও এমন লোকদের দ্বারাও ঘৃণা করা হয় যারা আমাকে চেনে না, যারা আমার দৈনন্দিন জীবনের অংশ নয়। যারা নিজের এবং আমার পরিবারের জন্য আমি যে প্রচেষ্টা করি তা জানে না। ইন্টারনেটে যা আসে, সে সব বিষয়ে আমার বেশ দৃঢ় মানসিকতা রয়েছে।’
‘আমি হয়তো এসব দেখে যেতে পারি; এসব কিছু আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না। এমনকি আমার মানসিকতায়ও কোনো প্রভাব ফেলে না, যা ক্ষতিকর হতে পারে।’
‘একদিন আমার ফুটবল ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাবে। ইতিহাসে লিখা থাকবে আমার নাম; কিন্তু এসব সমালোচনা তখন শেষ হয়ে যাবে। সময়ের পরিক্রমায় বছর কেটে যাবে, অন্যান্য খেলোয়াড় এবং প্রজন্ম আসবে এবং যাবে। আমি সবসময় বলি যে যারা আমাকে চেনে তারাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
নেইমারের সান্তোসে ফিরে আসা ক্লাবটির জন্য বাণিজ্যিক এবং সোশ্যাল মিডিয়ার দিক থেকে বড় সাফল্য বয়ে এনেছে। সান্তোস প্রেসিডেন্ট মার্সেলো তিশেইরা বলেন, ‘নেইমারের ফিরে আসা ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমাদের এই ১০ নম্বর জার্সিধারী রাজপুত্র ক্লাবের পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ‘
নেইমার তার ক্যারিয়ারে বার্সেলোনা, পিএসজি এবং সৌদি প্রো লিগে আল হিলালের মতো শীর্ষ ক্লাবে খেলেছেন। তিনি ২০১১ সালে সান্তোসের হয়ে কোপা লিবার্তাদোরেস জয় করেছিলেন এবং ব্রাজিলের হয়ে ১২৮ ম্যাচে ৭৯ গোল করে দেশের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতার খেতাব নিজের করে নিয়েছেন। তবে, ইনজুরির কারণে ক্যারিয়ার বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে, যার মধ্যে ২০২৩ সালে এসিএল এবং মেনিসকাস ইনজুরিও রয়েছে।
নেইমার বলেন, ‘সান্তোস আমার কেবল একটি দল নয়, এটি আমার বাড়ি, আমার শিকড়, আমার ইতিহাস। এখানে আমি নিজেকে সত্যিকারের সুখি মনে করি। এখানেই আমি আমার ক্যারিয়ারের বাকি স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চাই।’
২০২৬ বিশ্বকাপকে নেইমার তার ‘শেষ নাচ (লাস্ট ড্যান্স)’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি এর নিজেকে পুরোপুরি উৎসর্গ করে দেবো।’
আইএইচএস/