আরতি-পুষ্পাঞ্জলিতে দেবী সরস্বতীর আরাধনা

3 hours ago 5

বিদ্যা ও সুরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর কৃপা লাভের আশায় সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মন্দির-মণ্ডপে বাণী অর্চনা, আরতি ও ভক্তদের পুষ্পাঞ্জলিতে আরাধনা করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। শাস্ত্রমতে, প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে শ্বেতশুভ্র কল্যাণময়ী বিদ্যাদেবীর বন্দনা করা হয়। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, এ বছর পূজার তিথি ছিল দুই দিন। রোববার (০২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চমী তিথি শুরু হয়, যা আজ সোমবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে শেষ হয়। 

আজ ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মন্দির ও মণ্ডপে পূজার আয়োজন হলেও সবচেয়ে বড় আয়োজন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠে। প্রতি বছর এখানকার পূজা একটি বর্ণিল উৎসবে পরিণত হয়। এবারও হলের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরস্বতী পূজা চমৎকার এক উৎসবে পরিণত হয়। খেলার মাঠের চারিদিক দিয়ে বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ৭৪টি মণ্ডপে সরস্বতী দেবীর পূজার আয়োজন করেন। মণ্ডপের বেশিরভাগই বিভিন্ন বিভাগ এবং সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিকোণের ‘থিমের’ আদলে গড়া হয়েছে। তবে প্রতিবারের মতো এবারও হলের পুকুরে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন দৃষ্টিনন্দন প্রতিমা, যা দর্শনার্থীদের বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে। প্রতিটি মণ্ডপেই শিক্ষার্থী-শিক্ষক এবং দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে সকাল থেকে। সকালে বাণী বন্দনা এবং পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে পঞ্চমী তিথির মধ্যে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়, যা শেষ হয় সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে। 

জগন্নাথ হলের প্রাধ্যক্ষ ও পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দেবাশীষ পাল বলেন, জগন্নাথ হলের পক্ষ থেকে ১টি, বিভাগ ও ইনস্টিটিউশনগুলোর পক্ষ থেকে ৭২টি এবং জগন্নাথ হলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যুবাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ১টি মণ্ডপে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সবার সহযোহিতায় পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জগন্নাথ হলের এই প্রাধ্যক্ষ বলেন, গত জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা তাই এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হয়েছে। 

ঐতিহ্যবাহী এই পূজা পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ঐতিহ্যগতভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল সরস্বতী পূজার মূল কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তনের পরে আওয়ামী লীগ প্রথম দিন থেকেই যেকোনো সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। এখন পর্যন্ত তারা সফল হয়নি। ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা আছে। আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মানুষ চায় না, এ রকম একটা গণহত্যা ঘটানোর পর আওয়ামী লীগ কোনভাবেই তার মতাদর্শ, তার নাম নিয়ে আবারও ফিরে আসুক। কারণ, এটা বাংলাদেশের সকল জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। অনেকবার তারা বিশৃঙ্খলা ঘটাতে চেষ্টা করলেও এবার তারা আর বিশৃঙ্খলা ঘটাতে পারবে না।

পূজায় অংশ নেওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী অনন্ত বলেন, জগন্নাথ হলে প্রতি বছরের মতো এবারও সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের বর্তমান এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ সহায়তার মধ্যেমে এই আয়োজন সম্পন্ন করি আমরা।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, পূজার এত বড় আয়োজন দেখে খুব ভালো লাগছে। এতো মানুষের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। অনেকগুলো মণ্ডপে ঘুরলাম এবং ছবি তুললাম। পরিচিত অনেকের সঙ্গেই দেখা হলো, ছোট-খাটো গেট টুগেদার হয়ে গেল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের পূজায় পুরোহিত হিসেবে ছিলেন বিভাগেরই শিক্ষার্থী অনুষ্কা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বাঁধন দেব বলেন, এ বছর আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে এমন একটি থিম ধরা হয়েছে, যা মানুষকে ভাবাবে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যতা বাংলাদেশে আছে কি না? 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, ভগবানের জ্ঞান ও বিদ্যার রূপ হলেন দেবী সরস্বতী। প্রতি বছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের শ্রী পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যাদেবীর পূজা হয়। হাতে বীণা থাকে বলে সরস্বতীকে বীণাপাণিও বলা হয়। সাদা রাজহাঁস এ দেবীর বাহন। ঐতিহ্য অনুযায়ী, এ দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পুরোহিতের মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বিদ্যাদেবীর মন্দিরে সন্তানদের প্রথম বিদ্যার পাঠের হাতেখড়ির আয়োজন করেন। 

এবার জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দু’দিনব্যাপী এ আয়োজনে থাকছে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং রক্তদান কর্মসূচি। এছাড়াও হলের ভেতরে দর্শনার্থী, শিশু-কিশোরদের চিত্তবিনোদন উপযোগী বেশ কিছু রাইড, খেলনা ও খাবার দোকানের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে এবারের পূজায়।

এ ছাড়া ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা হয়েছে ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, শ্রী শ্রী রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমসহ ঢাকার বিভিন্ন মন্দিরেও।

রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রমের পূজা পরিদর্শন করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। তিনি ঢাকায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েও সরস্বতী পূজা পরিদর্শন করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর এবং বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পূজা পরিদর্শন করেন।

Read Entire Article