‘আরব’ বা ‘ইসলামিক ন্যাটো’ কী? আদৌ কি আলোর মুখ দেখবে এই জোট?

5 hours ago 3

উপসাগরীয় দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় ইসরায়েলের বিমান হামলার জেরে নতুন করে আলোচনায় এসেছে পশ্চিমা সামরিক জোট ‘ন্যাটো’র ধাঁচে মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক জোট গঠনের প্রস্তাব। ২০১৫ সালে ওঠা ‘আরব’ বা ‘ইসলামিক ন্যাটো’ গঠনের এই প্রস্তাব আবার সামনে এনেছে মিশর।

চলতি মাসে ইসরায়েলি হামলার প্রেক্ষাপটে ১৫ সেপ্টেম্বর কাতারে জরুরি বৈঠকে বসেন আরব ও মুসলিম দেশগুলোর নেতারা। সেখানে তারা আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদারের জন্য একটি ‘আরব’ বা ‘ইসলামিক ন্যাটো’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৫ সালে ইয়েমেন যুদ্ধ ও হুতিদের সানা দখলের প্রেক্ষাপটে নীতিগতভাবে এই ধারণা গ্রহণ করা হয়েছিল। মূলত সেই প্রস্তাবই সামনে এনেছে মিশর।

  • যেভাবে গঠিত হবে এই জোট, কাজই বা কী হবে?
  • সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য ন্যাশনাল’ জানিয়েছে, মিশরের প্রস্তাব অনুযায়ী আরব লীগের ২২ সদস্য রাষ্ট্র যৌথভাবে এই বাহিনী গঠন করবে। এতে থাকবে সেনা, নৌ, বিমান ও কমান্ডো ইউনিট, পাশাপাশি প্রশিক্ষণ, লজিস্টিক ও সামরিক প্রযুক্তি একীভূত হবে।
  • জোটটির কমান্ড ঘুরে ঘুরে প্রতিটি দেশের হাতে থাকবে; প্রথম মেয়াদে নেতৃত্ব দেবে মিশর। একজন বেসামরিক কর্মকর্তা থাকবেন মহাসচিব হিসেবে।
  • বাহিনী ব্যবহার করতে হলে কোনো সদস্য দেশের অনুরোধ, সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পরামর্শ ও সামরিক নেতৃত্বের অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
  • মিশর প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার সেনা দেবে; সৌদি আরব হবে দ্বিতীয় বৃহৎ যোগানদাতা।
  • বাহিনীটির উদ্দেশ্য হবে- আঞ্চলিক নিরাপত্তা হুমকি, সন্ত্রাসবাদ বা আরব বিশ্বের স্থিতিশীলতায় যে কোনো হুমকি মোকাবিলা করা।
  • এদিকে, দোহায় জরুরী বৈঠকে আরব লিগ ও ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যসহ ৪০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। স্বাগতিক ছিলেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান।

বৈঠকে সরাসরি ‘আরব ন্যাটো’ বা ‘ইসলামিক ন্যাটো’র নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে মিশর, ইরান ও পাকিস্তানের নেতারা যৌথ সামরিক শক্তি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

মিশরের প্রেসিডেন্ট সিসি বলেন, আরব বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী হিসেবে তার দেশ তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার সেনা দিতে প্রস্তুত। তিনি ন্যাটো ধাঁচের ‘সম্মিলিত প্রতিরক্ষা চুক্তির’ প্রস্তাব দেন।

ইরান চেয়েছে আরও ‘ইসলামিক চরিত্রসম্পন্ন’ জোট। পাকিস্তানও এতে সমর্থন দিয়েছে, যা ভারতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

  • জোট গঠনে মূল বাধা
  • ইমলামিক ন্যাটোর এই ধারণা নতুন করে জোরালো আলোচনায় এলেও এটি গঠন করা মোটেই সহজ নয়। এর পেছনে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্বার্থের দ্বন্দ্ব অন্যতম বাধা।
  • সৌদি আরব-ইরান প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কাতার-আমিরাত দ্বন্দ্ব, তুরস্কের নিজস্ব ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা- সব মিলে ঐকমত্য গড়া কঠিন।
  • আবার আব্রাহাম চুক্তির মাধ্যমে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। তাই প্রশ্ন থেকেই যায় যে, এমন পরিস্থিতিতে তারা কি এমন জোটে সক্রিয় হবে, যা সরাসরি ইসরায়েলের বিরোধিতা করতে পারে?
  • অন্যদিকে, বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য বিরোধিতার বিষয়টিও আমলে নিতে হবে। ওয়াশিংটন কি চাইবে একটি শক্তিশালী স্বাধীন আরব সামরিক জোট? না কি তারা চাইবে আরব দেশগুলো আগের মতোই মার্কিন সামরিক ছাতার নিচে থাকুক?
  • অর্থনৈতিক চাপ। এই ধরনের বাহিনী গঠন ও পরিচালনা ব্যয়বহুল। অর্থনৈতিক সংকটে থাকা আরব রাষ্ট্রগুলো এই জোটে কতটা অবদান রাখতে পারবে, তা নিয়েও ভাবতে হবে।

এদিকে, কাতার সম্মেলনে মুসলিম দেশগুলো কড়া ভাষার বিবৃতি দিলেও বাস্তবে ‘ন্যাটো’র আদলে কোনো জোট গড়ে তোলার বাধ্যতামূলক সিদ্ধান্ত হয়নি। সুতরাং এই জোট আদৌ গঠিত হবে কি না ও গঠিত হলেও তা কবে হতে পারে- তা নিয়ে নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সূত্র: দ্য ন্যাশনাল, দ্য নিউ আরব, ডিডি নিউজ

এসএএইচ

 

Read Entire Article