আরবের দুম্বা মিলছে আদনানের খামারে

3 months ago 46

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান আদনান চৌধুরী। ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যান। সেখানে এলএলবি শেষ করে দেশে এসে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। পাশাপাশি এমবিএ করেন। ২০১৯ সালে কোরবানির ঈদের সময় একমাত্র ছেলে জায়েরিস ইজহান চৌধুরী আবদার করে বসে ছাগলের জন্য। একমাত্র সন্তানের আবদার মেটাতে নিয়ে আসেন দু’টি ছাগল। ঘটনাক্রমে ছাগলগুলো কোরবানি করা হয়নি! এরমধ্যে কিছুদিন পরে বাচ্চা দেয় একটি ছাগল। ছাগলছানা ও ছাগলের প্রতি বাবা-ছেলের মায়া তৈরি হয়। একপর্যায়ে আরও বিভিন্ন জাতের বিদেশি ছাগল কিনতে থাকেন তিনি। পুরোদমে শুরু করেন ছাগলের খামার। ওই খামারের নাম দিয়েছেন ‘ইউনিক গোট ফার্ম’।

একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারে ছেলে ও লন্ডন থেকে এলএলবি পাস করে দেশে এসে ছাগলের ব্যবসা মোটেও ভালো চোখে দেখেননি পরিবারের লোকজন, এলাকাবাসী ও বন্ধুমহল। কিন্তু আদনান চৌধুরী হার না মানা এক যুবক। তার ধারণা মনোবল শক্ত করে কোনো কিছুতে লেগে থাকলে লাভবান হওয়া যায়। এলাকাবাসীর কাছে তার প্রমাণও দিয়েছেন তিনি। কোনো কাজই ছোট নয়, উদাহরণসহ তার প্রমাণ দিয়েছেন আদনান চৌধুরী। তার সফলতায় এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। আর এই সফলতার পেছনে তিনি কোনোদিন কারও কাছ থেকে সহযোগিতা নেননি।

প্রযুক্তির কল্যাণে সাহায্য নিয়েছেন গুগল-ইউটিউবের। ২০২২ সালে একদিন পরিবার নিয়ে যান গাজীপুরের একটি রিসোর্টে। সেখানে একটি খামারে দেখতে পান দুম্বা পালন। ওই রিসোর্টের মালিকের কাছে দুম্বা পালনের সফলতার গল্প শুনে ছাগলের পাশাপাশি দুম্বা পালনেরও আগ্রহ জাগে তার। সেখান থেকেই কয়েকটি দুম্বা কিনেন। দুম্বাগুলো মূলত তার্কিশ, অ্যারাবিয়ান এবং পার্সিয়ান জাতের। এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছেন বিশাল এক খামার। খামারে যে ছাগলগুলো রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই বিদেশি জাতের।

আরবের দুম্বা মিলছে আদনানের খামারে
খামারে বাবা-ছেলে-ছবি জাগো নিউজ

বর্তমানে তার খামারে শতাধিক বিদেশি ছাগল ও সত্তুরের বেশি দুম্বা রয়েছে। আছে বিভিন্ন জাতের ভেড়া। পাশাপাশি নতুন করে চেষ্টা করছেন বিদেশি মুরগি পালনের। এরইমধ্যে অর্ধশতাধিক বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করেছেন। প্রতিটি মুরগির দাম ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। তার খামারে ছাগলের মধ্যে রয়েছে, বোয়ার (আফ্রিকা), কালাহারি (আফ্রিকা), বারবারি (ভারত) ও কাশ্মির (কাশ্মির)। ক্রস ভেড়ার মধ্যে রয়েছে ডোরপার (দক্ষিণ আফ্রিকা), স্থানীয় ভেড়া-দুম্বার মধ্যে রয়েছে, হারলে রানী (ফার্সি), আওয়াসি দুম্বা। মুরগির মধ্যে রয়েছে সাবেলপুট, পেন্সিল, সাটিন, ঠান্ডা, কোচিন, কোকো, কোচিন, সিল্কি, ব্রহ্মা, সেরামা, সেব্রাইট, সুলতান, ইয়োকোহামা ও পোলিশ ক্যাপ।

এই খামার গড়ে তুলতে আদনানের এ পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ লাখ টাকা। বর্তমানে তার মূলধন দাঁড়িয়েছে দেড় কোটি টাকার মতো। তার খামারে প্রতিদিন ১৬ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিবছরের মতো এবারও কোরবানির ঈদে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

খামারের একেকটি বিদেশি ছাগল ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আর দুম্বা বিক্রি হচ্ছে দেড় লাখ থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায়। শ্রমিকের পাশাপাশি পুরো ফার্মকে একটি অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। বিগত কয়েকদিন অনেক মানুষ দুম্বা কিনতে তার খামারে এসেছেন।

আদনান চৌধুরী বলেন, পৃথিবীতে কোনো কাজই ছোট না। মনোবল ঠিক থাকলে আপনি অবশ্যই একদিন সফল হবেন। আমি এই ফার্ম গড়ে তোলার সময় পরিবারের সদস্যসহ বন্ধু মহলের অনেকে বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছিল। কিন্তু আমি কারো কথায় কান দেইনি। লন্ডনে আমি দেখেছি সেখানে কোনো ব্যক্তি কোনো কাজকে ছোট মনে করেন না। কিন্তু আমাদের দেশে তা ভিন্ন। যা মোটেই আমার পছন্দ না। কোরবানি উপলক্ষে প্রতিদিনই আমার খামারে ক্রেতারা ভিড় করছেন। এরইমধ্যে কিছু দুম্বা, ভেড়া ও ছাগল বিক্রি করেছি।

এমএমডি/এসএইচএস/জেআইএম

Read Entire Article