মুন্সীগঞ্জে লাগামহীন আলুর মূল্যের লাগাম টানতে কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) মুন্সীগঞ্জের উদ্যোগে স্মারকলিপি প্রদান ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মূল্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে সিসিএস। পরবর্তীতে তারা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন।
কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) মুন্সীগঞ্জ জেলার সভাপতি আবু সাইদ ভূইঁয়া বলেন, ভোক্তার অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সচেতনতা সৃষ্টিসহ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সঙ্গে বিভিন্ন সময় সমন্বয় করে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি আমরা। বর্তমানে ৬১টি জেলা ও ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমাদের প্রায় ১২ হাজার স্বেচ্ছাসেবী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, গত প্রায় ১ বছর কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কোল্ড স্টোরেজকেন্দ্রিক কূটকৌশলের মাধ্যমে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করে ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে ফেলেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মজুতকারীরা কোল্ড স্টোরেজে আলু সংগ্রহ করেছে। আলু কেজিপ্রতি কৃষক থেকে ক্রয় করা হয় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ টাকা দরে। পরবর্তীতে কেজিপ্রতি কোল্ড স্টোরেজে খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ২ টাকা এবং কেজিপ্রতি অন্যান্য খরচ হয় ১ টাকা। সর্বমোট কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ খরচ হয় ২৩ টাকা। পরবর্তীতে যা কোল্ড স্টোরেজ থেকে বিক্রয় হয় কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫৮ টাকা। তাই আমরা মনে করি, কতিপয় মজুতকারী, বেপারি, ফড়িয়া (অধিকাংশ ব্যবসায়ী ট্রেড লাইসেন্সবিহীন) এবং সংশ্লিষ্ট কোল্ড স্টোরেজ ম্যানেজার ও মালিকদের যোগসাজশে অস্বাভাবিক অযৌক্তিকভাবে মূল্য বাড়িয়ে আড়তদারদের নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ভোক্তা সাধারণকে জিম্মি করে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি করা হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকা দরে।
কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) মুন্সীগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক মো. ইমরান হোসেন (বাদল) বলেন, আমাদের সংগ্রহ করা বিভিন্ন তথ্য মাধ্যমে জানতে পারি, দেশে বার্ষিক আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। এবার আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি টনের বেশি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোল্ড স্টোরেজে প্রায় ৪০ লাখ টনের বেশি আলু মজুত রয়েছে, যা বছরের বাকি সময়ের জন্য চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত। কিন্তু মজুতকারীরা সরবরাহ হ্রাস করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হিমাগার থেকে বেশি মূল্যে আলু বিক্রয় করছে। পাশাপাশি ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত পাকা রসিদ সংরক্ষণ ও সরবরাহ করার কোনো আলামত দেখা যায়নি।
মুন্সীগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩৪ হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৬ হাজার টন আলু উৎপাদন হয়। জেলায় ৬৪টি কোল্ড স্টোরেজের মধ্যে ৬টি বন্ধ থাকায় ৫৮টি কোল্ড স্টোরেজে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন আলু মজুত রাখা হয়। বর্তমানে ওইসব কোল্ড স্টোরেজে খাবার আলু মজুত রয়েছে ৪২ হাজার টন ও বীজ আলু মজুত রয়েছে ৫৫ হাজার টন।
তিনি আরও বলেন, এই জেলাতে প্রায় ১৪ লাখ ২৫ হাজার ৪১৮ জন মানুষ রয়েছে। প্রতিদিন জনপ্রতি গড়ে ৭০ গ্রাম করে আলু খেয়ে থাকে এ জেলার মানুষ। সে হিসেবে প্রতিদিন জেলায় প্রায় ১০ টন আলু প্রয়োজন।
জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমা তুল জান্নাত বলেন, কনশাস কনজ্যুমার্স সোসাইটি (সিসিএস) মুন্সীগঞ্জে স্মারকলিপি পেয়েছি। কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়টি আমাদের পরিকল্পনার মধ্যে আছে।
তিনি আরও বলেন, আজ আলু ব্যবসায়ী, বিপণনকারী ও কোল্ড স্টোরেজ কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আলুর বর্তমান বাজার মূল্য নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। অনেক বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। তবে দেখা যাচ্ছে, হাত বদলের কারণেই আলুর দাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সব পর্যায়ে তদারকি বৃদ্ধি করা হবে, যাতে করে আলুর দাম সহনশীল থাকে।