আল্লাহর ওপর ভরসা বা নির্ভরতা আল্লাহর ওপর ঈমানের অংশ। যে সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ ঈমান রাখে, আল্লাহর অসীম ক্ষমতায় বিশ্বাস করে, সে যে কোনো কাজে, বিপদ-আপদে ও সুখে-দুঃখে আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই একজন মুমিনের আবশ্যিক বৈশিষ্ট্য আল্লাহর ওপর ভরসা বা তাওয়াক্কুল। আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। (সুরা আনফাল: ২)
আরেক আয়াতে সব কাজে আল্লাহর ওপর ভরসা করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহর উপর ভরসা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ভরসাকারীদের ভালবাসেন। যদি আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেন তবে তোমাদের উপর বিজয়ী কেউ নেই। আর যদি তিনি তোমাদের লাঞ্ছিত করেন তবে কে এমন আছে যে, তোমাদেরকে এর পরে সাহায্য করবে? আর আল্লাহর ওপরই যেন মুমিনরা ভরসা করে। (সুরা আলে ইমরান: ৫৯, ৬০)
আল্লাহই সব কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক
ওপরে উল্লিখিত আয়াত থেকে বোঝা যায় আল্লাহ তাআলা সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। সব কল্যাণ ও অকল্যাণ তার ক্ষমতাধীন। দুনিয়ার কোনো কল্যাণ লাভ করার জন্য বা কোনো ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য মানুষ অবশ্যই দুনিয়াবি উপায়ে চেষ্টা করবে এতে দোষ নেই। কিন্তু কোনো লাভ-ক্ষতির জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অলৌকিক শক্তির ওপর ভরসা বা নির্ভর করা, কোনো অলৌকিক শক্তির আশ্রয় গ্রহণ করা বৈধ নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোন ক্ষতি পৌঁছান, তবে তিনি ছাড়া তা দূর করার কেউ নেই। আর তিনি যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে তাঁর অনুগ্রহের কোন প্রতিরোধকারী নেই। তিনি তার বান্দাদের যাকে ইচ্ছা তাকে তা দেন। আর তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। (সুরা ইউনুস: ১০৭)
তাই দুনিয়াবি উপায়ে নিজের চেষ্টার পর ফলাফলের জন্য শুধু আল্লাহর ভরসা আল্লাহর ওপরই ভরসা করতে হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো অলৌকিক শক্তির ওপর ভরসা করা কুফরি ও কবিরা গুনাহ।
আল্লাহর নবিদের ভরসার দৃষ্টান্ত
বিভিন্ন সময় পৃথিবীতে আল্লাহর সম্মানিত যে নবিরা আল্লাহর দীন প্রচার করেছেন, আল্লাহর দিকে মানুষকে ডেকেছেন, আল্লাহর ওপর তাদের ভরসা ও নির্ভরতার বহু দৃষ্টান্ত এসেছে কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে।
সুরা হুদে আল্লাহর নবি হজরত হুদের (আ.) আল্লাহর ভরসার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, (হুদ আ. তার জাতিকে বলেছিলেন) তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, আমাকে কোনো ছাড় দিও না। আমি নিশ্চিত ভরসা করেছি আল্লাহর ওপর যিনি আমার ও তোমাদের রব। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যা তার র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। নিশ্চয় আমার রব সরল পথে আছেন। (সুরা হুদ: ৫৫, ৫৬)
সুরা ইউনুসে আল্লাহর নবি মুসা (আ.) ও তার জাতির আল্লাহর ওপর নির্ভরতার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, মুসা বলল, হে আমার জাতি, তোমরা যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান এনে থাক, তবে তারই ওপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক। তখন তারা বলল, আমরা আল্লাহর ওপরই ভরসা করলাম। হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে জালিম গোষ্ঠীর ফিতনার পাত্র বানাবেন না। (সুরা ইউনুস: ৫৫, ৫৬)
সুরা বাকারায় আমাদের নবি আল্লাহর সর্বশেষ নবি হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ও তার সাহাবিদের আল্লাহর ওপর দৃঢ় ভরসার প্রশংসা করে আল্লাহ তআলা বলেন, (ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের পর কাফেরদের মদিনা আক্রমণের খবর শুনে) যারা আল্লাহ ও রাসুলের ডাকে সাড়া দিয়েছে জখমপ্রাপ্ত হওয়ার পরও, তাদের মধ্য থেকে যারা সৎকর্ম করেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরস্কার। যাদেরকে মানুষেরা বলেছিল যে, নিশ্চয় লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে সমবেত হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় কর। কিন্তু তা তাদের ঈমান বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা বলেছিল, আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক! (সুরা বাকারা: ১৭২, ১৭৩)
ওএফএফ/জেআইএম