আশানুরূপ আগাম বুকিং না হলেও আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ীরা

3 months ago 43

ঈদুল ফিতরের মতো ঈদুল আজহাতেও টানা পাঁচদিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। ফলে আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ীরা। যদিও আশানুরূপ আগাম বুকিং হয়নি কক্সবাজারের কোনো হোটেল-মোটেল।

সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনে কোরবানি হওয়ায় বলতে গেলে ছুটি শুরু হয়েছে শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে। কোরবানির পর মাঝখানে দুইদিন খোলা থাকার পর আবার সপ্তাহিক ছুটি। তবে টানা পাঁচদিনের ছুটি কাগজে কলমে হলেও ১৯-২০ জুন ঈদ উপলক্ষে বেড়াতে আসবে ভ্রমণপ্রেমীরা। আবার পরে বৃহস্পতি-শুক্র ও শনিবার। সে হিসেবে বেড়ানোর তালিকা দীর্ঘই বলা যায়। এতে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের বিপণন বিভাগের কক্সবাজার প্রধান বলেন, যান্ত্রিকতায় থাকা মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণের ছক আঁকেন। কোরবানির ঈদেও টানা ছুটির সুযোগ পাওয়ায় অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। ইতোমধ্যে হোটেলের ৭০ শতাংশ রুম বুক হয়েছে।

ঈদুল আজহা, আশানুরূপ আগাম বুকিং না হলেও আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ীরা

হোটেল রামাদাহর ফ্রন্ট অফিস সুপারভাইজার তপু সিং জানান, ঈদ উপলক্ষে হোটেলে ৭০ শতাংশ অগ্রীম বুকিং হয়েছে। বেশ কয়েকটি প্যাকেজে আকর্ষণীয় ছাড়ের ঘোষণা রয়েছে।

হোটেল সায়মন বীচ রিসোর্টের ফ্রন্ট অফিস অফিসার সারোয়ার আলম বলেন, আমাদের বুকিং সন্তোষজনক। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে। রয়েছে বুফে লাঞ্চ ও ডিনারের ব্যবস্থাও।

কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিমের মতে, আকাশে মেঘ-রুদ্দুর লুকোচুরি খেলা থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের চিত্র আরও মোহনীয় হয়ে উঠে। এ কারণে কোরবানির ছুটিতে পর্যটকে টইটুম্বুর থাকতে পারে বেলাভূমি। তবে, এখনো সামগ্রিকভাবে ৩০-৪০ শতাংশ হোটেল-মোটেল কক্ষ বুকিং হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে হোটেল-মোটেল, গেস্টহাউস মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা ভাবনায় রয়েছে।

হোটেল মোটেল ঘুর দেখা গেছে, অতীতের মতো অতিথি বরণে হোটেল-মোটেলগুলো গোছানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অপরদিকে, পর্যটক যাই আসুক সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

নিরাপত্তা জোরদারে বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটক যাই আসুক ছুটির দিনগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকে আমাদের। এবার চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ছুটি শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন থাকবে নিরাপত্তা। পাশাাপাশি সম্ভাব্য বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারি লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরও জোরদার করা হয়েছে। টেকনাফ ও ইনানীতেও সচেষ্ট থাকবে ট্যুরিষ্ট পুলিশ।

হোটেল মালিকদের মতে, সৈকতের শহরে হোটেল মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল আগেভাগে বুকিং দিলেও একটু বাড়তি সুবিধার আশায় অনেকে বুকিং নেয়নি।

ঈদুল আজহা, আশানুরূপ আগাম বুকিং না হলেও আশাবাদী পর্যটন ব্যবসায়ীরা

তবে আবহাওয়া যাই থাকুক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবে এমনটি বিশ্বাস হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদারের।

হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এবারও এমনটি হতে পারে।

তবে, আবাসিক হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদুল ফিতরের ছুটিতে সপ্তাহ খানেক ভালো ব্যবসা হয়েছিল। এর ক’দিন পর থেকে পর্যটক খরায় বলা চলে। এই অবস্থায় বড় লোকসানে পড়তে হয়। কোরবানির ঈদে পর্যটক এলে আগের লোকসান পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু আগাম বুকিংয়ের অবস্থা দেখে আমরা হতাশ। এরপরও আশা করছি ঈদের ১-২ দিন পর পর্যটক বাড়বে।

ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটকরা লক্ষ্মী। তাদের সেবা দিতেই আমরা মুখিয়ে থাকি। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে, হোটেল-মোটেল দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে পর্যটকদের জন্য বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বিদেশের মতো সামগ্রিক বিনোদন সুবিধা বাড়ানো গেলে সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন বাড়বে।

জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার প্রায় পর্যটন স্পট গুলোকে ইজারাদারেরা পরিচ্ছন্ন করে রেখেছন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, বিশ্বপর্যটনের সম্ভাবনাময় স্থান কক্সবাজারকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনেক। বিদ্যমান সব অসামঞ্জস্য সকলের সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে দূর করা হচ্ছে। ছুটির দিনে পর্যটকদের নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

সায়ীদ আলমগীর/এএইচ/জেআইএম

Read Entire Article