সিরাজগঞ্জ-১ (কাজিপুর ও সদরের একাংশ) আসনটি বরাবরই ছিল আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য। কিন্তু ২৪ এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছে বিএনপি-জামায়াত। তবে এ আসনে এনসিপিসহ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের আনাগোনা নেই বললেই চলে।
এ আসনে ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চের চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে শফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হন। তাছাড়া ১৯৮৬, ১৯৯১, ২০০১, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম, ১৯৯৬ সালের উপ-নির্বাচনে বড় ছেলে মোহাম্মদ সেলিম এবং ২০০৮, ২০২০ সালের উপ-নির্বাচন ও ২০২৪ সালে মোহাম্মদ নাসিমপুত্র প্রকৌশলী তানভীর শাকিল জয় আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জয় লাভ করেন। আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এ আসনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
- আরও পড়ুন
- বিএনপিতে গ্রুপিং-কোন্দল, মাঠে ছুটছেন জামায়াতের বুলবুল
- বিএনপির ঘাঁটিতেও প্রভাব বেড়েছে জামায়াতের
- বিএনপির চ্যালেঞ্জ জামায়াত-ইসলামী আন্দোলন
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের ভাষ্য অনুযায়ী আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত হবে। এ লক্ষ্যে আসনটিতে জামায়াতের সম্ভাব্য একক প্রার্থী হিসেবে সভা ও সমাবেশ করছেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহীনুর আলম।
আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে একজন সমর্থকও নির্যাতনের বাইরে ছিল না। আমরা সরকারের চাপের মধ্যেও গঠনমূলক রাজনীতি করেছি। পালন করেছি অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি। জনসভার কোনো সুযোগ ছিল না। আমাদের অফিসও খুলতে পারিনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আমরা চাপমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারছি। আগামী নির্বাচন ঘিরে নিয়মিতভাবে গণসংযোগ করছি। এতে জনগণের বেশ সাড়া মিলছে।
অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা।
ভোটের মাঠে কনকচাঁপা-ছবি সংগৃহীত
এর আগে ২০০৮ সালে এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আব্দুল মজিদ মিনু। তার মৃত্যুর পর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা হাল ধরেন। কিন্তু ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মোহাম্মদ নাসিমের বিপরীতে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপা। তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য ও তাদের নেতাকর্মীদের অস্ত্রের মহড়ায় নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি তিনি। পরে নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ এনে বগুড়া শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেন কনকচাঁপা।
- আরও পড়ুন
- ১৮ বছর পর ফেরা তুহিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াত
- লাখের বেশি হিন্দু ভোটারের মন জয়ে তৎপর বিএনপি-জামায়াত
- প্রার্থী নিয়ে কোন্দল মিটেছে বিএনপির, সুযোগ খুঁজছে জামায়াত
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে কথা হয় কণ্ঠশিল্পী কনক চাঁপার সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে জানান, আমার শৈশব কেটেছে কাজিপুরের মাটিতে। ওই মাটিতেই মিশে আছে আমার অনেক স্মৃতি। আমার পৈতৃক বাড়িটি অনেক আগেই যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে আমি মনে করি কাজিপুরের প্রতিটি বাড়িই আমার নিজের বাড়ি।
কনক চাঁপা আরও বলেন, ‘আমি গানের মানুষ, আগে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের মহড়ায় কাজিপুরের চারদিক ঘেরাও ছিল। তবুও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষের সুখ ও দুঃখের কথা শুনেছি। তবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর কাজিপুরের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। নির্মূল হয়েছে দীর্ঘদিনের আওয়ামী দুঃশাসন, জুলুম ও নির্যাতন।’
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমি একজন শিল্পী হিসেবেও কোনো কাজ করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের আমলে ফেসবুকে কিছু লিখতেও পারতাম না। আমার গান পরিবেশনের দায়ে দুজনকে শোকজও করা হয়েছিল। মোবাইল ফোনে সিম কার্ড উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে সেটা ব্লক করা হতো। সব জায়গায় আমাকে নিগৃহীত করা হয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজিপুরের প্রত্যেক গ্রামে যাচ্ছি৷ দফায় দফায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। এতে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে আমি একজন শিল্পী হিসেবেও কোনো কাজ করতে পারিনি। আওয়ামী লীগের আমলে ফেসবুকে কিছু লিখতেও পারতাম না। আমার গান পরিবেশনের দায়ে দুজনকে শোকজও করা হয়েছিল। মোবাইল ফোনে সিম কার্ড উঠানোর সঙ্গে সঙ্গেই সেটা ব্লক করা হতো। সব জায়গায় আমাকে নিগৃহীত করা হয়েছে। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কাজিপুরের প্রত্যেক গ্রামে যাচ্ছি৷ দফায় দফায় তাদের সঙ্গে বৈঠক করছি। এতে সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীরা আমায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে সমর্থন জানিয়েছেন।
সামাজিক কাজে জামায়াত প্রার্থী শাহীনুর আলম-ছবি সংগৃহীত
দল এবার মনোনয়ন দিলে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে তার প্রত্যাশা। রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
- আরও পড়ুন
- নিজামীর ছেলে দাঁড়িপাল্লার প্রার্থী, ধানের শীষ চান অনেকেই
- বিভক্ত বিএনপি, সুযোগ নিতে চায় জামায়াত
- সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াতের এমপি প্রার্থী, বিএনপিতে সম্ভাব্য তিন
কাজিপুর চরাঞ্চলের তরুণ ভোটার ইমরান হোসাইন জাগো নিউজকে বলেন, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা আগামীতে মনোনয়ন পেলে তার নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করবেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয়। মাঝে মধ্যেই এলাকায় আসছেন। তার সঙ্গে সব শ্রেণির মানুষ যোগাযোগ করছেন। তাছাড়া তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই তার সঙ্গে দেখা করছেন।
জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা শাহীনুর আলম বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে জামায়াতের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে একজন সমর্থকও নির্যাতনের বাইরে ছিল না। আমরা সরকারের চাপের মধ্যেও গঠনমূলক রাজনীতি করেছি। পালন করেছি অভ্যন্তরীণ কর্মসূচি। জনসভার কোনো সুযোগ ছিল না। আমাদের অফিসও খুলতে পারিনি। কিন্তু ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আমরা চাপমুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারছি। আগামী নির্বাচন ঘিরে নিয়মিতভাবে গণসংযোগ করছি। এতে জনগণের বেশ সাড়া মিলছে।
- আরও পড়ুন
- ঢাকার আসনগুলোতে ধানের শীষের কান্ডারি হতে চান যারা
- জামায়াতের এমপি প্রার্থী হতে চান যেসব আইনজীবী
- ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী
জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। এ কারণে বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে কারা ভোগ করেছি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চাইছেন এবার আমায় মনোনয়ন দেওয়া হোক।
এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ ৯৪ হাজার ৬৭২। যার মধ্যে এক লাখ ৯৯ হাজার ৫৫৫ জন নারী ও পুরুষ ভোটার এক লাখ ৯৫ হাজার ১১৫ জন। এ আসনে দুজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারও রয়েছেন।
এমএএম/এসএইচএস/এমএফএ/জেআইএম