‘আসাদ সরকারের পতনের আগের রাতে কেউ ঘুমায়নি’
আসাদ সরকার পতনের আগের রাতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের বাসিন্দারা কেউ ঘুমাননি। উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রাত কেটেছে তাদের। বিদ্রোহীরা দ্রুত এগিয়ে আসছিল এবং রাত গভীর হতেই শোনা যায়, বাশার আল-আসাদের শাসন শেষ হয়ে গেছে। দামেস্ক এখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে!
রোববার (৮ ডিসেম্বর), বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, শনিবার রাতে সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিস্ময়কর সব ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ রাস্তায় নেমে বিদ্রোহীদের স্বাগত জানাচ্ছিল এবং সাইদনায়া কারাগার থেকে বন্দিদের মুক্ত করার দৃশ্য মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
‘হিউম্যানস অব দামেস্ক’ নামের ফেসবুক পেজের পরিচালনা করেন রানিয়া কাতাফ। তিনি বলেন, গত রাতে সিরিয়ায় কেউ ঘুমায়নি। এমনকি বিদেশে থাকা সিরিয়ানরাও জেগে ছিলেন। পুরো জাতি মোবাইল হাতে চূড়ান্ত খবরের জন্য অপেক্ষা করছিল।
তিনি আরও বলেন, ৩০ বছর ধরে এক হতাশার মধ্যে ছিলাম, কিন্তু আজ আমরা এক গভীর নিশ্বাস নিচ্ছি।
বিদ্রোহীদের অভিযান শুরু হওয়ার পর রানিয়া জানান, তার সাহস বেড়ে গেছে এবং তিনি আগে কখনো নিজের মতামত প্রকাশ করতে সাহস পেতেন না।
এক দামেস্কবাসী বিবিসিকে বলেন, প্রথমবারের মতো সত্যিকারের স্বাধীনতার অনুভূতি পাচ্ছি। দামেস্কের উমাইয়াদ স্কয়ারে আতশবাজি ফোটানো হচ্ছিল এবং গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল, তবে বেশিরভাগই ছিল আতশবাজি।
দামেস্কের দক্ষিণে দারা শহরের বাসিন্দা ইয়াজান আল-আমারি বলেন, খবর শুনে প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি, তবে নিশ্চিত হওয়ার পর গাড়ি নিয়ে দামেস্কের দিকে রওনা দিয়েছি উদযাপনের জন্য।
এদিকে, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অনেকের মধ্যে উদ্বেগও রয়েছে। লন্ডনে বসবাস করা এক সিরিয়ান বলেন, আমার পরিবার সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে থাকে। আমরা ইস্টার্ন অর্থোডক্স খ্রিস্টান। আমি ভীত যে আমার পরিবারকে হত্যা করা হবে।
তিনি জানান, তার পরিবার সিরিয়া থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, তবে লেবানন ও জর্ডানের সীমান্ত বন্ধ। পরিবারটি অপেক্ষা করছে যেন কোনো বিমানবন্দর খোলে এবং তারা সেখান থেকে বের হতে পারে।
লন্ডনবাসী সিরিয়ান আরও বলেন, আসাদ শাসন শেষ হওয়া আনন্দের হলেও বিকল্প সরকার কেমন হবে তা অজানা। যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নেতৃত্বে সরকারের পতন হয়েছে, সেটি আল কায়েদার একটি শাখা।
বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম জানিয়েছে, খ্রিস্টানরা সিরিয়ায় নিরাপদ থাকবে, তবে এ প্রতিশ্রুতি কতটা সত্য তা এখনই বলা যাচ্ছে না।