আড়াই দশক ধরে অকার্যকর বাকৃবি ছাত্র সংসদ

5 hours ago 4

স্বাধীনতার আগে প্রতিষ্ঠিত দেশের প্রাচীনতম কৃষি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এরপর আর কোনো নির্বাচন আয়োজন করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

প্রায় আড়াই দশক ধরে ছাত্র সংসদ না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য দাবি ও অধিকারের বিষয়ে কথা বলার কোনো প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না। 

ফলে আবাসন সংকট, শিক্ষাব্যয় নিয়ন্ত্রণ, উন্নত ডাইনিং সুবিধা, সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ সৃষ্টি ও ছাত্র-উপবৃত্তি বৃদ্ধির মতো বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রশাসনের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে না। যদিও প্রতি বছরই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংসদ ফি নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, বাকসুর জন্য বরাদ্দ ১৬টি কক্ষ এখন অন্য কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা আবারও বাকসু নির্বাচনের দাবিতে সরব হয়েছেন। গণভোট আয়োজন, উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণাসহ নানা কর্মসূচি নিয়েছে তারা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমাবর্তন চত্বরে নির্বাচন দাবিতে ফরম বিতরণ করে, ছাত্রশিবিরের ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি, ৯ মে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট গণভোটের আয়োজন করে এবং ২৬ আগস্ট সাধারণ শিক্ষার্থীরা বাকসু নির্বাচনের তপশিল ঘোষণাসহ ৯ দফা দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয়। 

শিক্ষার্থীদের দাবি, অবিলম্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যাতে তারা ন্যায্য অধিকার আদায়ের শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম ফিরে পায়। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসন একেবারে নীরব।

বাকসু নির্বাচন নিয়ে কৃষি রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী আল সাউদ সৌহার্দ্য বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর অধিকার এবং যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম। গত ২৭ বছর ধরে বাকৃবিতে কোনো ছাত্র সংসদ তথা বাকসু নির্বাচন হয়নি। ফলে, বিগত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা যুগোপযোগী শিক্ষানীতি, আবাসন সংকট, উন্নত ডাইনিং সুবিধা, ছাত্র উপবৃত্তির হার বৃদ্ধি, সঠিক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অন্যান্য ন্যায্য অধিকার আদায়ে সংগঠিত অবস্থানে যেতে পারেনি। তাই বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় একটি সুষ্ঠু বাকসু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।

মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী মো. মারুফ বিল্লাহ বলেন, ডাকসু হচ্ছে, রাকসু হচ্ছে, জাকসুও হচ্ছে বাকসু কী দোষ করল? এই বিশ্ববিদ্যালয় ধীরে ধীরে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাচ্ছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাকৃবি শাখার সাধারণ সম্পাদক জায়েদ হাসান ওয়ালিদস বলেন, বাকসু নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দ্বারা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দাবি দাওয়া ও সংকট নিরসনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের পক্ষ হয়ে তাদের সংকট ও পরিকল্পনা উত্থাপন করতে পারবে।

বাকসু নিয়ে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার সভাপতি আবু নাছির ত্বোহা বলেন, আমরা চাই দ্রত সময়ের মধ্যে বাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। আমরা বিশ্বাস করি, বাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার ধারা সুসংহত করবে এবং তাদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। তাই শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে আমরা চাই অবিলম্বে বাকসু নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া হোক।
 
বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বলেন, বিগত সময়ে দেখেছি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তার দোসর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদের ওপর জুলুম নির্যাতনসহ গেস্টরুম কালচারের এক ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। আমরা এই ভয়াল চিত্র বাকৃবিতে ফিরে আসুক চাই না। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে আমরা সর্বদা সোচ্চার ভূমিকা পালন করব। আগামী দিনে বাকৃবিতে কোনো গেস্টরুম কালচার থাকবে না। সিট বাণিজ্য ও হল বাণিজ্যও চিরতরে বন্ধ করা হবে এ প্রতিশ্রুতি আমরা দিচ্ছি।

বাকৃবি ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় বাকসু নিয়ে কোনো কিছু ভাবছি না। অন্তর্বর্তী সরকারের সময় বাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক সরকার এলে বাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের মুক্ত মনের বিকাশ, নেতৃত্ব সৃষ্টি এবং তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আদর্শ প্ল্যাটফর্ম ছাত্র সংসদ। বর্তমানে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও এখানে বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে, সাধারণ শিক্ষার্থীরা রয়েছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠী যদি সবাই সম্মিলিতভাবে ছাত্রসংসদ চায়, তবে আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেব।

Read Entire Article