প্রতিনিয়ত কত ঘটনা ঘটে পৃথিবীতে। ক্রিকেটের ইতিহাসেও প্রতিটি বাঁকে বাঁকে অসংখ্য ঘটনা এমন আছে, যা রীতিমত বিস্ময়কর। ক্রিকেটের ইতিহাসে দিনপঞ্জি খুঁজলেই প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনা আছে, যা আপনাকে নিয়ে যাবে বিস্ময়ের এক জগতে।
আজ ২ জুলাই। এই দিনে ক্রিকেট ইতিহাসে ঘটেছে অনেক ঘটনা। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি তুলে ধরা হলো-
১৯৬৯: ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেদিন ২৫ রানে অলআউট হয়েছিল
এই দিনটিতে ১৯৬৯ সালে ক্রিকেটে গোলিয়াথ পরাজিত হয়েছিল ডেভিডের কাছে। ১৯৭৯ সালের তুলনায় ১৯৬৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ কোনোমতেই এগিয়ে থাকার কথা নয়। তবে, ক্যারিবীয়রা তখন এমন এক পরাশক্তি ক্রিকেটে, যেখানে আয়ারল্যান্ডের মত আইসিসি সহযোগিদের কাছে নাকানি-চুবানি খেতে হবে, তেমনটাও ছিল না।
আয়ারল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ট্যুরটা ছিল আনঅফিসিয়াল। তখন ওয়ানডে ক্রিকেটের কোনো ধারণাও ছিল না। তবে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং আয়ারল্যান্ড একদিনের ক্রিকেটই খেলেছিল ১৯৬৯ সালের ২ জুলাই।
সিওন মিলসের হোম ফিল্ডে সেদিন আইরিশদের ভাগ্যের কাছেই হেরে বসতে হয়েছিল ক্যারিবীয়দের। তাও শোচনীয়ভাবে। লন্ডনডেরির দর্শকরা সেদিন ক্রিকেটে অবাক করা একটি দিন দেখলো।
ম্যাচটি ছিল একদিনের, দুই ইনিংসের, যা ড্র হলে প্রথম ইনিংসে নেতৃত্ব দেওয়া দলই জিতত। লর্ডস টেস্টে সদ্য ড্র করা পাঁচজন ক্রিকেটারকে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ২৫ রানে অলআউট হয়ে গেলো আইরিশদের কাছে!
আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক ডগলাস গুডউইন মাত্র ৬ রানে নিলেন ৫ উইকেট। এছাড়া অ্যালেক ও'রিওর্ডান ১৮ রানে নেন ৪ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই একটি দুর্দান্ত ধাক্কা খেতে থাকে। একটা সময় মাত্র ১২ রানে হারিয়ে বসে ৯ উইকেট। শেষ উইকেটে ১৩ রানের দুর্দান্ত (!) জুটি গড়েন গ্রেসন শিলিংফোর্ড (৯) ও ফিলবার্ট ব্লেয়ার (৩)।
জবাব দিতে নেমে আয়ারল্যান্ড তাদের ইনিংসে ৮ উইকেটে ১২৫ রান সংগ্রহ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভেবেছিল আইরিশদের অলআউট করবে; কিন্তু ২ উইকেট বাকি থেকে যায়। দিন বাকি থাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ আবার ব্যাট করতে নামে এবং ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৭৮ রান। গুডউইন ২ ওভারে ১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। বাসিল বুচার করেন ৫০ রান।
গুডউইনের ম্যাচ পরিসংখ্যান ছিল আশ্চর্যজনক ১৪.৫-৯-৭-৭। পঁয়ত্রিশ বছর পর, ২০০৪ সালে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ এক জয় পায় আয়ারল্যান্ড। ওই ম্যাচে ক্যারিবীয়রা ৭ উইকেটে ২৯২ রান করেছিল। জবাবে ৪ উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় আইরিশরা।
১৯৮৫: ক্যাথরিন্ট ব্রান্টের জন্ম
ইংল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলে সর্বকালের শীর্ষ উইকেট শিকারী ক্যাথরিন ব্রান্টের জন্ম হয় এদিন। ২০০৪ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক হয় ব্রান্টের।
শুরুতে ছিলেন একজন দুর্বল, গড়পড়তা স্ট্রাইক বোলার। তবে, ২০০৫ সালে এসে দুর্দান্ত সাফল্য দেখান। ৪২ বছর পর ইংল্যান্ডের প্রথম নারী অ্যাশেজ জয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। দুই টেস্টে তিনি নেন ১৪ উইকেট এবং তার প্রথম টেস্ট ফিফটিও করেন এই সিরিজে।
২০০৯ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ব্রান্ট ৬ রানে ৩ উইকেট নেন। যার ওপর ভর করে ইংল্যান্ড প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
ইংল্যান্ডের হয়ে দেড় দশকের ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় তিনি ইনজুরিতে কাটিয়েছেন। তবুও ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল ফাস্ট বোলার এবং প্রথম ১৫০টি ওয়ানডে উইকেটও পেয়েছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন বিশেষভাবে কার্যকর। ২০১৩ সালের অ্যাশেজে ৩.০২ ইকোনমি গড়ে ৯টি উইকেট নেন ব্রান্ট। ২০২২ সালের মে মাসে সতীর্থ ন্যাট সাইভারকে বিয়ে করেন ব্রান্ট এবং এক বছর পর সব ধরণের খেলা থেকে অবসর ঘোষণা করেন। ১৪টি টেস্ট, ১৪১টি ওয়ানডে এবং ১১২টি টি-টোয়েন্টি খেলেন তিনি।
১৯৯৪: হাসান আলির জন্ম
পাকিস্তানের পেস বোলার হাসান আলীর জন্ম আজ। যদিও তাকে পাকিস্তানি ক্রিকেট সংস্কৃতি হিসেবে সে অর্থে পেস বোলার বলা যায় না। কারণ, তার তেমন গতি নেই, কোনও রিভার্স সুইং নেই। তবে ব্যাট হাতে মাঝে-মধ্যে দারুণ কার্যকরী ইনিংস খেলেন। ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার।
অভিষেকের পর প্রথম ১৫টি ওয়ানডেতে দুবার পাঁচটি করে (ফাইফার) উইকেট নিয়েছিলেন।পাকিস্তানের হয়ে দ্রুততম ৫০টি ওয়ানডে উইকেট নেওয়ার ক্ষেত্রে ওয়াকার ইউনুসকে পেছনে ফেলেন। তবে হাসান আলির সেরা মুহূর্তটি এসেছিল মূলত ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে।
প্রথম ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে ১০ ওভারে ৭০ রান দিয়েছিলেন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা এবং সেমিফাইনালে অন্যতম ফেবারিট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন উইকেট নিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন।
ফাইনালে, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ১৯ রানে ৩ উইকেট নেন হাসান আলি। ১৪.৬৯ গড়ে ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন এবং তিন মাস পর, আইসিসির এক নম্বর ওয়ানডে বোলারও হন।
আরও কয়েকজনের জন্মদিন
১৮৫৮: রেজিনাল্ড অ্যালেন (অস্ট্রেলিয়া)
১৮৮২: আর্নি মেইন (অস্ট্রেলিয়া)
১৯০৭: লিও ও'ব্রায়ান (অস্ট্রেলিয়া)
১৯২৮: নীল ড্যানসি (অস্ট্রেলিয়া)
১৯৩৪: ইভান মাদ্রে (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৯৫২: হারবার্ট চ্যাং (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
১৯৬২: নীল উইলিয়ামস (ইংল্যান্ড)
১৯৭০: আরতি বৈদ্য (ভারত)
১৯৭৯: মাইকেল প্যাপস (নিউজিল্যান্ড)
আইএইচএস/