গাইবান্ধায় ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি (টপসয়েল)। ফসলের চেয়ে মাটি বিক্রিতে লাভ বেশি হওয়ায় মাটি বিক্রি করছেন বলে জানান অনেক কৃষক। এতে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।
ইটভাটা ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার সাতটি উপজেলায় ১৬২টি ইটভাটা রয়েছে। প্রতিবছর ছয় মাস ইট উৎপাদন হয়। ওই সময়ে একেকটি ইটভাটায় ৮০ লাখ থেকে দেড় কোটি ইট প্রস্তুত করা হয়। ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় এঁটেল ও দোআঁশ মাটি। এসব মাটি নেওয়া হচ্ছে স্থানীয় কৃষিজমি থেকে।
জেলার অন্তত শতাধিক স্থান থেকে কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। কিছু কৃষক নগদ টাকা পাওয়ার আশায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করছেন। ইটভাটার মালিকরা কৃষকের থেকে উচ্চ মূল্যে জমি ভাড়া নিয়ে ১০ ফুট থেকে ১২ ফুট গভীর করে মাটি কেটে নিচ্ছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলার সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলাসহ সাত উপজেলার বিভিন্ন কৃষি জমির উর্বর মাটি কাটার মহোৎসবে মেতে ওঠেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। এতে যেমন কৃষকের ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে কাঁচা-পাকা রাস্তা। ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
স্থানীয়রা বলছেন, অবৈধ মাটি ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন কৃষিজমি থেকে মাটি তুলে অন্যত্র বিক্রি করছেন। প্রশাসনের তদারকির অভাবে দিন-রাত চলছে কৃষি জমির উর্বর মাটি কাটার মহোৎসব। এ সংক্রান্ত আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও কেউই তা মানছে না। ফলে প্রতিদিন একরের পর একর কৃষি জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে অন্যত্র। এতে যেমন জমির উর্বরতা হারাচ্ছে তেমনি ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। এ নিয়ে প্রশাসনের নিরবতা পালন করছে বলে অভিযোগ তাদের।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার রামচন্দ্রপুরের কৃষক বেলাল মিয়া বলেন, আমাদের জমির মাটি আমরা বিক্রি করতেই পারি। ফসলের চেয়ে মাটি বিক্রিতে লাভ বেশি। তাই এসব মাটি ইটভাটা মালিকের কাছে বিক্রি করছি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছি অনেকদিন। কেউ আমাদের বাধা দিচ্ছে না।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ি ইউনিয়নের বাগদা এলাকার কৃষক আমতাজ জানান, মাটি ব্যবসায়ীর কাছে ১১০ শতাংশ জমির মাটি বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি শতাংশ জমির মাটির দাম পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা। ১২ ফুট পর্যন্ত গভীর করে মাটি কাটা হচ্ছে। ওই ব্যবসায়ী স্থানীয় চারটি ইটভাটায় প্রতি ঘনফুট মাটি পাঁচ টাকা দামে বিক্রি করছেন।
আরেক কৃষক আবু হোসেন বলেন, প্রতিবছর জমিতে ধান ও সরিষার আবাদ করতাম। কয়েক বছর যাবৎ ফসল বিক্রি করে উৎপাদন খরচও পেতাম না। এ কারণে বিরক্ত হয়ে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। মোটা অঙ্কের টাকা পেয়েছি। সেই টাকা দিয়ে ভালোভাবে সংসার চালাতে পারবো।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, ‘কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। এভাবে মাটি চলে গেলে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। আমাদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে ফসলি জমির উর্বরতা নষ্ট হবে। আমরা কৃষকদের এভাবে মাটি বিক্রি না করতে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
সদর উপজেলার ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও টাটা ব্রিকসের মালিক আয়ান মিয়া বলেন, ইট প্রস্তুত করতে মাটির প্রয়োজন। যারা যত ভালো মাটি ব্যবহার করতে পারবেন, তারা ইটের তত ভালো মূল্য পাবেন। এ কারণে কৃষিজমির মাটির প্রতি ইটভাটার মালিকদের আগ্রহ বেশি।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, ‘প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণ কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি চলে যাচ্ছে ইটভাটায়। আমরা শঙ্কিত, এভাবে উর্বর মাটি নষ্ট হলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হবে।
এ এইচ শামীম/এফএ/জিকেএস