ইন্দোনেশিয়ার অ্যাভোকাডো চাষ হচ্ছে মিরসরাইয়ে

1 day ago 3

পরীক্ষামূলক চাষে সফল তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা শরীফ
প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা
প্রতিটি ফলের ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম
দেশের বাজারে এ ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে চাষ করা হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার অ্যাভোকাডো। অন্য বছরের তুলনায় এবার ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে বিক্রিও করা হচ্ছে বিদেশি এ ফল। প্রতি কেজি অ্যাভোকাডো ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন বাগান মালিক মো. ওমর শরীফ। আগামীতে চাষের পরিধি ব্যাপক আকারে বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই তথা চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রথমবারের মতো অ্যাভোকাডো ফল চাষ করে শতভাগ সফলতা অর্জন করেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও বৃক্ষপ্রেমী মো. ওমর শরীফ। বিদেশি ফলটির পরীক্ষামূলক চাষে তিনি বড় সাফল্য দেখিয়েছেন। এটি দেশের কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

জানা গেছে, ওমর শরীফ ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০টি অ্যাভোকাডো গাছের চারা সংগ্রহ করে তার জোহরা এগ্রো ফার্মস অ্যান্ড নার্সারিতে রোপণ করেন। নিয়মিত পরিচর্যা এবং অনুকূল পরিবেশের কারণে দুই বছরের মধ্যে গাছগুলো ফল দিতে শুরু করেছে। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০০ কেজির বেশি ফল সংগ্রহ করতে পেরেছেন। তার এই প্রাথমিক সাফল্য প্রমাণ করেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অ্যাভোকাডো চাষের জন্য উপযোগী। তিনি আশা করছেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও বড় আকারে বাণিজ্যিকভাবে অ্যাভোকাডো ফলানো সম্ভব।

ইন্দোনেশিয়ার অ্যাভোকাডো চাষ হচ্ছে মিরসরাইয়ে

ওমর শরীফ জানান, তিনি মেক্সিকান জাতের প্রতিস্থাপনযোগ্য অ্যাভোকাডো চারা লাগিয়েছেন, যা অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। অ্যাভোকাডো একটি মিষ্টি সুস্বাদু ফল, যা পুষ্টিগুণে ভরপুর। এতে চিনির পরিমাণ কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আরও পড়ুন

ফলটির ওজন প্রায় ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম পর্যন্ত হতে পারে। এর ভেতরের অংশ মাখনের মতো মসৃণ ও হালকা মিষ্টি স্বাদের। অ্যাভোকাডো বিভিন্নভাবে খাওয়া যায়, যেমন- কাঁচা, পাকা, সবজি, সালাদ, স্যান্ডউইচ বা টোস্টে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট না থাকায় এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। দেশের বাজারে এ ফলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তাই এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা ব্যাপক।

ওমর শরীফ শুধু অ্যাভোকাডো চাষেই সীমাবদ্ধ নন। পাশাপাশি তিনি থাইল্যান্ড থেকে আনা অ্যাভোকাডোর চারা বাজারজাত করার পরিকল্পনা করছেন। তার উদ্যোগ কৃষকদেরও ফলটির চাষে উৎসাহিত করবে। দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

অ্যাভোকাডো ছাড়াও ওমর শরীফ সফলভাবে রোপণ করেছেন মিয়ামোটা (কিউই), ব্লু বেরি, ব্ল্যাক বেরি, মাল্টা, লেবু, কমলালেবু এবং কফি। এর মধ্যে অনেক দেশি-বিদেশি ফলের গাছ আছে। তার এ বহুমুখী উদ্যোগ দেশের কৃষিক্ষেত্রে নব দিগন্তের সূচনা করেছে।

ইন্দোনেশিয়ার অ্যাভোকাডো চাষ হচ্ছে মিরসরাইয়ে

ওমর শরীফ বলেন, ‘অ্যাভোকাডো চাষের এমন সাফল্য দেখে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করেছেন। উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিদেশি ফলের চাষ দেশে সম্প্রসারিত হলে একদিকে খাদ্যে পুষ্টি চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে; অন্যদিকে কৃষকদের জন্য নতুন আয়ের পথ তৈরি হবে। আমি প্রতি কেজি অ্যাভোকাডো ৮০০ টাকা করে বিক্রি করছি। অনলাইনে বেশি বিক্রি হয়।’

মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘শরীফ ভাই একজন সৌখিন কৃষি উদ্যোক্তা। উপজেলায় প্রথমবার অ্যাভোকাডো চাষ করে সফল হয়েছেন। তার বাগানের ফলগুলো বড় বড়। এ ছাড়া তিনি পিচফল, থাই সফেদাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফল চাষ করেছেন। তার এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য অনুকরণীয়।’

এসইউ/এমএস

Read Entire Article