বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়ায় ১৯ শিক্ষককে শোকজের পর এবার ৩৩ শিক্ষার্থীকে শোকজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই তালিকা প্রকাশের পর অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন জুলাই আন্দোলনের স্বপক্ষের নেতারা। তাদের দাবি, রাঘববোয়ালদের বাদ দিয়ে এই তালিকা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত চিঠি সংশ্লিষ্টদের কাছে পৃথকভাবে পাঠানো হয়। এতে সংশ্লিষ্টদেরকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়। রেজিস্ট্রার কর্তৃক তালিকা প্রকাশের পর ওইদিনই জুলাই আন্দোলনের স্বপক্ষের নেতারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন দাবি উপস্থাপন করেন।
আলোচনা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, আমরা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নাম প্রকাশ হতে দেখেছি যা আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিবাদী শক্তি গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও যাদের আমরা মাস্টারমাইন্ড বলছি, তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের ধারণা, প্রভাবশালী কারও ইন্ধনে অনেক রাঘববোয়ালের নাম বাদ দিয়ে এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শুধু শোকজ নোটিশ দিয়ে দায় শেষ করলে হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে। প্রয়োজনে চাকরিচ্যুত করতে হবে। কারণ তারা সাধারণ অপরাধী নয়, তারা জুলাই গণহত্যার সহযোগী। জুলাই আন্দোলনের স্বপক্ষের নেতৃবৃন্দ একমত যে, যারা অভ্যুত্থান ব্যাহত করেছে, শিক্ষার্থী-শিক্ষককে হুমকি দিয়েছে কিংবা জুলাইয়ের গণহত্যায় প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে যুক্ত থেকেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণেই আমরা ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করেছি। প্রশাসন আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে যে দোষীরা শাস্তির মুখোমুখি হবে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, রাঘববোয়ালদের বাহিরে রেখে চুনোপুঁটিদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে তারা বিষয়টা নরমালাইজ করার জন্য দৌড়ঝাঁপ এবং বিভিন্ন জায়গার কথা বলে নেগোসিয়েশনের চেষ্টা করছে। তারা শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে ইনফ্লুয়েন্স করার মাধ্যমে ক্যাস্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনকে আরও সজাগ থাকতে হবে।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি প্রকাশিত তালিকায় ছোটখাটো চুনোপুঁটি, কিন্তু রাঘববোয়ালদের বাহিরে রাখা হয়েছে। আমরা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছি। তদন্ত কমিটির কাজ শেষ না করে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিস্টদের শাস্তি আওতায় নিয়ে আসার জন্য আমরা ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিরা প্রশাসনকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমি ছাত্রদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করছি। তদন্ত কমিটি তালিকা প্রকাশের কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। আমি আশ্বস্ত করছি যে দোষীরা শাস্তির মুখোমুখি হবে এবং এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
অভিযুক্ত ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারী হলেন, প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার আলমগীর হোসেন খান, আব্দুল হান্নান, ইব্রাহীম হোসেন সোনা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হাসান মুকুট, একই দপ্তরের আব্দুস সালাম সেলিম, মাসুদুর রহমান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের উকীল উদ্দিন, ফার্মেসি বিভাগের জাহাঙ্গীর আলম (শিমুল), আইসিটি সেলের জে এম ইলিয়াস, অর্থ ও হিসাব বিভাগের তোফাজ্জেল হোসেন ও জনসংযোগ দপ্তরের আবু সিদ্দিক রোকন।
এছাড়া অভিযুক্ত ৩৩ ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়, সহ-সভাপতি মুন্সী কামরুল হাসান অনিক, শিমুল খান, রতন রায়, মৃদুল রাব্বী, মাসুদ রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুসাইন মজুমদার, মেহেদী হাসান হাফিজ, শাহীন আলম, ফজলে রাব্বী, তরিকুল ইসলাম, আইন সম্পাদক শাকিল আহমেদ, দপ্তর সম্পাদক কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক লিয়াফত হোসেন রাকিব, শেখ সোহাগ, মেজবাহুল ইসলাম, রাফিদ হাসান, উপ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক কুমার, সাহিত্য সম্পাদক আব্দুল আলিম, ক্রীড়া সম্পাদক বিজন রায়, উপ-আপ্যায়ন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সদস্য পিয়াস মোস্তাকিন, উপ-কারিগরি সম্পাদক ফারহান লাবিব ধ্রুব, উপ-পাঠাগার সম্পাদক ওরারেসুল রহমান প্রাঞ্জল, প্রচার সম্পাদক নাবিল আহমেদ ইমন, গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক সাদিদ খান সাদি , কর্মী বিপুল খান । এছাড়াও ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শাওন, অর্থনীতি বিভাগের তানভীর, সমাজকল্যাণ বিভাগের মারুফ ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের আদনান আলিম পাটোয়ারী, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ইমামুল মুত্তাকী শিমুল ও মনিরুল ইসলাম আসিফ।
প্রসঙ্গত জুলাই আন্দোলনে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও ছাত্রদের হুমকি ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড তদন্তে কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ১৯ জন শিক্ষক, ১১ জন কর্মকর্তা ও ৩১ জন ছাত্রের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করে এ কমিটি।
ইরফান উল্লাহ/এফএ/এএসএম