ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরী (রহ.)

ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরী (রহ.) ছিলেন ইসলামী আকিদাহ ও কালামশাস্ত্রের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মনীষী। তিনি এমন এক সময়ে আগমন করেন যখন মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। মুতাজিলা, জাহমিয়া, কারামিয়া, মুশাব্বিহা ইত্যাদি মতাদর্শগুলো মুসলিম সমাজে তীব্র বিতর্ক ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছিল। এমন এক বৌদ্ধিক দ্বন্দ্বমুখর সময় আগমন ঘটে ইমাম আশআরীর। যুক্তিবাদ ও গ্রন্থবাদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখেন তিনি। ইসলামের ইতিহাসে তার ‘আশআরী মাযহাব’ একটি প্রতিষ্ঠিত আকিদাহ-প্রণালি হিসেবে স্থান পেয়েছে। ইমাম আশআরী (রহ.) হিজরি ২৫৯ মোতাবেক ৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বসরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বংশধারা সাহাবি আবু মুসা আশআরী (রা.)-এর দিকে গিয়ে পৌঁছায়। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ও অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। তার সৎপিতা ছিলেন বিখ্যাত মুতাজিলি আলেম আবু আলি আল-জুব্বাই, যার সংস্পর্শে থেকেই আল-আশআরী (রহ.) প্রাথমিকভাবে মুতাজিলা দর্শনের শিক্ষায় দীক্ষিত হন। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর মুতাজিলি মতবাদ অনুসরণ করেন এবং তার অন্যতম শক্তিশালী আলোচক হিসেবে পরিচিত হন। কিন্তু ইতিহাসে বিখ্যাত একটি ঘটনা তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে।

ইমাম আবুল হাসান আল-আশআরী (রহ.) ছিলেন ইসলামী আকিদাহ ও কালামশাস্ত্রের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী মনীষী। তিনি এমন এক সময়ে আগমন করেন যখন মুসলিম বিশ্বে বিভিন্ন মতবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। মুতাজিলা, জাহমিয়া, কারামিয়া, মুশাব্বিহা ইত্যাদি মতাদর্শগুলো মুসলিম সমাজে তীব্র বিতর্ক ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছিল। এমন এক বৌদ্ধিক দ্বন্দ্বমুখর সময় আগমন ঘটে ইমাম আশআরীর। যুক্তিবাদ ও গ্রন্থবাদের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় অসাধারণ অবদান রাখেন তিনি। ইসলামের ইতিহাসে তার ‘আশআরী মাযহাব’ একটি প্রতিষ্ঠিত আকিদাহ-প্রণালি হিসেবে স্থান পেয়েছে। ইমাম আশআরী (রহ.) হিজরি ২৫৯ মোতাবেক ৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ইরাকের বসরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বংশধারা সাহাবি আবু মুসা আশআরী (রা.)-এর দিকে গিয়ে পৌঁছায়। শৈশব থেকেই তিনি মেধাবী ও অনুসন্ধিৎসু ছিলেন। তার সৎপিতা ছিলেন বিখ্যাত মুতাজিলি আলেম আবু আলি আল-জুব্বাই, যার সংস্পর্শে থেকেই আল-আশআরী (রহ.) প্রাথমিকভাবে মুতাজিলা দর্শনের শিক্ষায় দীক্ষিত হন। তিনি প্রায় চল্লিশ বছর মুতাজিলি মতবাদ অনুসরণ করেন এবং তার অন্যতম শক্তিশালী আলোচক হিসেবে পরিচিত হন। কিন্তু ইতিহাসে বিখ্যাত একটি ঘটনা তার জীবনে আমূল পরিবর্তন আনে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি একদিন বসরার জুমার মসজিদে উঠে ঘোষণা করলেন যে, তিনি মুতাজিলা দর্শন পরিত্যাগ করেছেন এবং কোরআন-সুন্নাহর প্রকৃত ব্যাখ্যার ওপর প্রতিষ্ঠিত আহলে সুন্নাহর পথে ফিরে এসেছেন। তার এ রূপান্তর শুধু ব্যক্তিগত পরিবর্তন নয়, বরং ইসলামী বৌদ্ধিক জগতে একটি নতুন যুগের সূচনা করে। মুতাজিলাদের কড়া যুক্তিবাদ ও রূপকধর্মী ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে তিনি যুক্তি, গ্রন্থ (নকল) এবং সুস্থ বুদ্ধির সমন্বিত একটি পদ্ধতি গ্রহণ করেন। তিনি দেখাতে সক্ষম হন যে, কোরআন-হাদিসের আক্ষরিকতা অস্বীকার না করে যুক্তিকে ব্যবহারের একটি মধ্যপন্থা গ্রহণ করা সম্ভব। এর ফলে তার অনুসারীরা ‘আশআরী’ নামে পরিচিত হয় এবং সুন্নি ইসলামী আকিদাহর প্রধান ধারাগুলোর একটি রূপ নেয়। ইমাম আল-আশআরী (রহ.) কোরআনের অবিকল বাণী হিসেবে ‘কালামুল্লাহ’র স্বভাব, আল্লাহর সিফাতগুলো, তাকদির, রুয়্যাতুল্লাহ এবং মানবকর্ম সম্পর্কিত সূক্ষ্ম তাত্ত্বিক প্রশ্নে অসংখ্য শক্তিশালী যুক্তি তৈরি করেন। তিনি ‘আল-ইবানা’, ‘আল-লাওমা’ এবং আরও বহু গ্রন্থ রচনা করেন, যদিও কিছু গ্রন্থের প্রামাণিকতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে আলোচনাও রয়েছে। তবুও ইসলামের আকিদাহের ক্ষেত্রে তার রচিত যুক্তি ও পদ্ধতিগুলো আজও মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত। ইমাম আশআরী (রহ.) হিজরি ৩২৪ মোতাবেক ৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের পর তার পদ্ধতি ইমাম হারামাইন, ইমাম গাজ্জালি, ইমাম রাজি প্রমুখ অনন্য মুসলিম দার্শনিকের হাতে আরও বিকশিত হয়। আজকের সুন্নি বিশ্বে (বিশেষত শাফিই ও মালিকি সমাজে) আশআরী চিন্তাধারা সবচেয়ে প্রভাবশালী আকিদাহ-ধারার একটি। ইমাম আশআরী (রহ.) ছিলেন সত্য অনুসন্ধানী, সাহসী এবং যুক্তি ও ওহির সমন্বয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার জীবন আমাদের শেখায় সমাজের গড্ডালিকা প্রবাহে নয়, বরং সত্যকে আবিষ্কার করে নেওয়াই একজন আলিমের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow