ইমাম আল-বাইহাকি (রহ.)

ইমাম আল-বাইহাকি (রহ.) ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফকিহ ও মুজতাহিদ আলেম। তার পূর্ণ নাম আবু বকর আহমদ ইবনু আল-হুসাইন ইবনু আলি আল-বাইহাকি। তিনি হিজরি ৩৮৪ মোতাবেক ৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ইরানের খোরাসান অঞ্চলের বাইহাক নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সে অঞ্চলের নামানুসারেই তিনি ‘বাইহাকি’ নামে প্রসিদ্ধ হন। শৈশবকাল থেকেই ইমাম বাইহাকি (রহ.) অসাধারণ মেধা ও জ্ঞানানুরাগের পরিচয় দেন। তিনি খুব অল্প বয়সেই কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং এরপর হাদিস, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ ও আকিদার জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা নিজ এলাকার আলেমদের কাছে হলেও, জ্ঞানার্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তিনি খোরাসান, নিশাপুর, বাগদাদসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জ্ঞানকেন্দ্রে সফর করেন। ইমাম বাইহাকি (রহ.) মূলত ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মাজহাবের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছিলেন শাফেয়ী মাজহাবের অন্যতম বড় রক্ষক ও প্রচারক। তার শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম আল-হাকিম নিশাপুরী (রহ.), যিনি আল-মুস্তাদরাক আলাস সাহিহাইন গ্রন্থের রচয়িতা। ইমাম হাকিমের প্রভাব ইমাম বাইহাকির চিন্তা ও গবেষণায় গভীরভা

ইমাম আল-বাইহাকি (রহ.)

ইমাম আল-বাইহাকি (রহ.) ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফকিহ ও মুজতাহিদ আলেম। তার পূর্ণ নাম আবু বকর আহমদ ইবনু আল-হুসাইন ইবনু আলি আল-বাইহাকি। তিনি হিজরি ৩৮৪ মোতাবেক ৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বর্তমান ইরানের খোরাসান অঞ্চলের বাইহাক নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সে অঞ্চলের নামানুসারেই তিনি ‘বাইহাকি’ নামে প্রসিদ্ধ হন।

শৈশবকাল থেকেই ইমাম বাইহাকি (রহ.) অসাধারণ মেধা ও জ্ঞানানুরাগের পরিচয় দেন। তিনি খুব অল্প বয়সেই কোরআন হিফজ সম্পন্ন করেন এবং এরপর হাদিস, ফিকহ, উসুলুল ফিকহ ও আকিদার জ্ঞান অর্জনে আত্মনিয়োগ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা নিজ এলাকার আলেমদের কাছে হলেও, জ্ঞানার্জনের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় তিনি খোরাসান, নিশাপুর, বাগদাদসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন জ্ঞানকেন্দ্রে সফর করেন।

ইমাম বাইহাকি (রহ.) মূলত ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর মাজহাবের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম ছিলেন। বলা হয়ে থাকে, তিনি ছিলেন শাফেয়ী মাজহাবের অন্যতম বড় রক্ষক ও প্রচারক। তার শিক্ষকদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য হলেন ইমাম আল-হাকিম নিশাপুরী (রহ.), যিনি আল-মুস্তাদরাক আলাস সাহিহাইন গ্রন্থের রচয়িতা। ইমাম হাকিমের প্রভাব ইমাম বাইহাকির চিন্তা ও গবেষণায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।

হাদিস শাস্ত্রে ইমাম বাইহাকি (রহ.) ছিলেন অসামান্য দক্ষতার অধিকারী। তিনি হাদিসের সনদ, রাবিদের অবস্থা ও হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয়ে অত্যন্ত সতর্ক ও প্রামাণ্য পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। একই সঙ্গে তিনি ফিকহ ও হাদিসের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করেন—অর্থাৎ, হাদিসের আলোকে ফিকহি মাসআলার দলিল উপস্থাপন করাই ছিল তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তার রচিত গ্রন্থসংখ্যা শতাধিক বলে বর্ণিত হয়েছে, যদিও আজ আমাদের কাছে তার সব সংরক্ষিত নেই। তবে যে কয়েকটি গ্রন্থ ইসলামী জ্ঞানভান্ডারে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—‘আস-সুনানুল কুবরা’, ‘আস-সুনানুস সুগরা’, ‘শুআবুল ইমান’, ‘দালাইলুন নবুওয়াত’, ‘মানাকিবুশ শাফেয়ী’ ইত্যাদি। বিশেষ করে শুআবুল ইমান গ্রন্থে ইমানের শাখাগুলোকে কোরআন ও হাদিসের আলোকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে, যা আজও ব্যাপকভাবে পাঠ ও গবেষণার বিষয়।

ইমাম বাইহাকি (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত পরহেজগার, বিনয়ী ও ইখলাসপূর্ণ আলেম। তিনি দুনিয়াবি ক্ষমতা ও খ্যাতি থেকে দূরে থেকে ইলম ও আমলের সংমিশ্রণে জীবন অতিবাহিত করেন। তার সমসাময়িক ও পরবর্তী আলেমরা তাকে ‘হাদিস ও ফিকহের ইমাম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। হিজরি ৪৫৮ মোতাবেক ১০৬৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। তার ইন্তেকালের মধ্য দিয়ে এক মহীরূহ আলেমের জীবনাবসান ঘটলেও, তার রচনাবলি ও চিন্তাধারা আজও মুসলিম উম্মাহকে পথনির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে। ইমাম বাইহাকি (রহ.) ইসলামী জ্ঞানচর্চার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, যার ইলম, তাকওয়া ও নিষ্ঠা যুগে যুগে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে।

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow