ইয়েমেনে ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার জীবন এখন সময়ের সঙ্গে এক নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ২০১৭ সালে ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই নার্সের ফাঁসি আগামী ১৬ জুলাই কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ইয়েমেনের জেল কর্তৃপক্ষকে এই তারিখ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটির বিচার বিভাগের মহাপরিচালক। অর্থাৎ, মৃত্যুর দিন গণনা এখন শুরু হয়ে গেছে।
তবে এই নারীর জন্য শেষ আশার দ্বার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। শরিয়া আইনের অধীনে পরিচালিত ইয়েমেনি বিচার ব্যবস্থায় ‘দিয়াহ’ বা ব্লাড মানির বিনিময়ে হত্যাকারীকে ক্ষমা করার সুযোগ রয়েছে। নিহত মাহদির পরিবার যদি অর্থ গ্রহণ করে নিমিশাকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে মৃত্যুদণ্ড রদ হতে পারে।
এ লক্ষ্যে ‘সেইভ নিমিশা প্রিয়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি সংগঠন ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেছে ও নিহতের পরিবারকে সেই অর্থ অফারও করেছে। তবে মাহদির পরিবার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাব মেনে নেয়নি, কিংবা নতুন কোনো দাবি জানায়নি। ফলে অনিশ্চয়তার ঘন কুয়াশা এখনো কাটেনি।
কেরালার বাসিন্দা নিমিশা ২০০৮ সালে সানা শহরের একটি সরকারি হাসপাতালে নার্স হিসেবে যোগ দেন। পরে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে জড়ান মাহদির সঙ্গে। কিন্তু সম্পর্কের অবনতি ঘটলে ২০১৭ সালে মাহদির মৃতদেহ খণ্ডবিখণ্ড অবস্থায় জলের ট্যাঙ্কে উদ্ধার হয়। তার পর থেকেই নিমিশা সানার সেন্ট্রাল জেলে বন্দি।
আদালতে তার পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মাহদি তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন, তার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিলেন এবং বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখাতেন। আত্মরক্ষার জন্য তিনি মাহদিকে অচেতন করার চেষ্টা করেন, তবে ভুলক্রমে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ হয়ে যায়। কিন্তু ইয়েমেনের আদালত এই যুক্তি গ্রহণ করেনি এবং ২০২০ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ২০২৩ সালে সুপ্রিম কোর্টেও সেই রায় বহাল থাকে।
মাহদির পরিবারের সঙ্গে মধ্যস্থতার জন্য ইয়েমেনেই অবস্থান করছেন নিমিশার মা ও এক সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোম। তারাও এখন অপেক্ষা করছেন- নিহতের পরিবার ব্লাড মানি গ্রহণ করে কি না, এই আশায়।
ভারত সরকার কূটনৈতিকভাবে বারবার হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করলেও ইয়েমেনে কোনো ভারতীয় দূতাবাস না থাকায় সেসব প্রচেষ্টা তেমন কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে ৩৪ বছর বয়সী নিমিশার সামনে বাঁচার রাস্তা একটাই- ক্ষমা। আর সেই ক্ষমা মিলতে হবে নিহত মাহদির পরিবারের কাছ থেকে। কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসছে। ফাঁসির নির্ধারিত তারিখ যত এগিয়ে আসছে, ততই চাপ বাড়ছে নিমিশার পরিবার, সমর্থক ও আন্তর্জাতিক লবি গ্রুপের উপর।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ