ইসরায়েলের সঙ্গে গুগল-অ্যামাজনের গোপন চুক্তি ফাঁস

9 hours ago 6

আন্তর্জাতিক আদালতের আইনি জবাবদিহিতা থেকে রক্ষা করতে গোপনে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করেছে গুগল ও অ্যামাজন। ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত প্রজেক্ট ‘নিম্বাস’ চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের সহযোগিতা দিয়েছে এই দুই প্রযুক্তি জায়ান্ট। এ চুক্তির আওতায় ইসরায়েলকে তাদের উন্নত ক্লাউড কম্পিউটিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সেবা দিয়েছে।

এতদিন গোপন থাকা এই চুক্তির নথিপত্র সম্প্রতি ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁস হয়েছে। ফলে এ চুক্তির নৈতিক ও আইনি দিক নিয়ে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। প্লাস৯৭২ ম্যাগাজিন, লোকাল কল এবং যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের যৌথ অনুসন্ধানে এমন বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে।

ফাঁস হওয়া তথ্য অনুযায়ী, কোনো বিদেশি আদালত ইসরায়েল সংক্রান্ত তথ্য চাইলে তারা তা গোপনে “টিপ-অফ” বা আগাম সতর্কবার্তা দিয়ে ইসরায়েলকে জানিয়ে দেবে বলে গুগল ও অ্যামাজন এ চুক্তিতে সম্মত হয়েছিল। এই সংকেত পাঠানো হতো ইসরায়েলি শেকেলে প্রতীকী অর্থ প্রেরণের মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ—যুক্তরাষ্ট্রের (+১) কোড নির্দেশ করতে পাঠানো হতো ১,০০০ শেকেল,ইতালির (৩৯) জন্য ৩,৯০০ শেকেল,আর দেশ শনাক্ত করা না গেলে পাঠানো হতো ১ লাখ শেকেল।

চুক্তির আরেকটি ধারায় বলা হয়েছে, ইসরায়েল গুগল ও অ্যামাজনের যেকোনো সেবা ব্যবহার করতে পারবে, এমনকি সেটি যদি মানবাধিকার বা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তবুও কোম্পানিগুলো ইসরায়েলের অ্যাক্সেস বন্ধ করতে পারবে না।

গত বছর মাইক্রোসফট অবৈধ নজরদারি কার্যক্রমে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা প্রকাশের পর তাদের ক্লাউড অ্যাক্সেস বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু ‘নিম্বাস’ চুক্তিতে গুগল ও অ্যামাজন প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা কোনো অবস্থাতেই ইসরায়েলের অ্যাক্সেস সীমিত করবে না।

যদিও সরকারিভাবে প্রকল্পটি কেবল বেসামরিক মন্ত্রণালয়গুলোর জন্য বলে দাবি করা হয়েচে। তবে ইসরায়েলি সামরিক সূত্র প্লাস৯৭২ ম্যাগাজিনকে জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর কম্পিউটিং ও নজরদারি অবকাঠামোতে নিম্বাসের ওপর মারাত্মক নির্ভরতা রয়েছে। বিশেষ করে গাজায় চলমান সামরিক অভিযানে নির্ভরতা অপরিসীম।

এক ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা স্বীকার করেন, এই সেবাগুলো আমাদের লক্ষ্যভেদ কার্যক্রমে অত্যন্ত কার্যকর অপারেশন পরিচালনা করার সক্ষমতা দিয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ব্যবস্থা মার্কিন গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘন করেছে। এর ফলে গুগল ও অ্যামাজন বড় ধরণের মামলার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এক সাবেক মার্কিন প্রসিকিউটর দ্য গার্ডিয়ান-কে বলেন, এটি বেশ ‘চালাকি’ মনে হলেও আদালত এমন কৌশল ভালো চোখে দেখবে না।

এসব তথ্য এমন সময় প্রকাশিত হলো যখন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) শুনানি চলছে। এআই-চালিত টার্গেটিং, বায়োমেট্রিক নজরদারি ও ক্লাউডভিত্তিক তথ্য বিশ্লেষণের ব্যবহার যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কা আরও জোরদার করেছে।

কেএম

Read Entire Article