নির্বাচনের আনাগোনা শুরু হলেই সব সময় ইসলামি দলগুলোকে কাছে টানার একধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। ভোট ব্যাংকের হিসাবনিকাশে এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসলামপন্থি হিসেবে পরিচিত দলগুলোকে নিজেদের সঙ্গে রাখতে এক ধরনের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার সাবেক জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে।
সম্প্রতি চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে এক সপ্তাহের ব্যবধানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষাৎ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের সেই সাক্ষাতের ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং নানান ধরনের আলোচনা তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বহুকাল ধরে চলে এসেছে এবং সেই ধারাবাহিকতা এখনো আছে।
বরিশালে চরমোনাই পীরের মধ্যাহ্নভোজে জামায়াতের আমির
গত ২১ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বরিশালের চরমোনাইয়ে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। যোগ দেন চরমোনাই পীরের মধ্যাহ্নভোজে। সেদিন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা মূলত ইসলামি দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দেখতে চাই। আমাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন হতে দেবো না।’
এই মিলন রাজনীতির মাঠেও থাকবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। জনগণের প্রত্যাশা, নির্বাচনের সব কেন্দ্রে ইসলামি দলগুলোর যেন একটি বাক্স থাকে।’
আরও পড়ুন:
চরমোনাই কার্যালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল
অন্যদিকে, গত ২৭ জানুয়ারি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীমের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে তার কার্যালয়ে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুও ছিলেন তার সঙ্গে। বৈঠকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করাসহ ১০ বিষয়ে একমত হয় বিএনপি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। প্রায় দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম এই ১০ দফার কথা জানান।
আরও পড়ুন:
- চরমোনাই পিরের সঙ্গে বৈঠকে ফখরুল
- ১০ বিষয়ে একমত বিএনপি-ইসলামী আন্দোলন
- স্বৈরাচার হাসিনা ভারতের স্বার্থে সব দিয়ে দিয়েছেন: চরমোনাই পির
এই ১০ দফা হলো:
১। আধিপত্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ মুক্ত স্বাধীন, সার্বভৌম ও টেকসই রাষ্ট্র গঠনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা।
২। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, খুনি ও টাকা পাচারকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৩। ভোটাধিকারসহ সব মানবাধিকার রক্ষায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা।
৪। ন্যূনতম প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।
৫। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা, অধিকারবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা।
৬। আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তির দেশ পুনর্গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা।
৭। ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তিগুলো একে অন্যের বিরুদ্ধে আঘাত করে কথা না বলা।
৮। আগামীতে যাতে আওয়ামী লীগের মতো আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তি ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকা।
৯। ইসলামী শরিয়াবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়া এবং ইসলামবিরোধী কোনো কথা না বলা।
১০। প্রশাসনে বিদ্যমান আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের দ্রুত অপসারণ করা।
বিএনপির সঙ্গে খেলাফত মজলিসের আন্তদলীয় সংলাপ
ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিএনপির সঙ্গে খেলাফত মজলিসের আন্তদলীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে এই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে বিএনপি ও খেলাফত মজলিস নেতারা সাতটি বিষয়ের ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন।
১। জাতীয় ঐক্য সুসংহত করার লক্ষ্যে আন্তদলীয় সংলাপ অব্যাহত রাখা হবে।
২। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে ২০২৫ এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে।
৩। দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৪। ইসলামী মূল্যবোধ সমুন্নত রাখা ও ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষায় সবাইকে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করা।
৫। পতিত ফ্যাসিবাদ যাতে মাথাচাড়া দিতে না পারে তার জন্য জাতীয় ঐক্য অটুট রাখতে হবে।
৬। খুন, গুম ও নির্যাতনের সঙ্গে যারা জড়িত সবাইকে দ্রুত বিচার আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা।
৭। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আলেম-উলামা ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে ইসলামপন্থি দলগুলোর নেতাদের বৈঠক নিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ এটি ‘রাজনৈতিক শিষ্টাচার’ ও দশ দফাকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক ঐক্যমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বিএনপি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে বলেই আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা কিংবা আলোচনা করে থাকি।’
দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘জামায়াত হঠাৎ করেই বিভিন্ন দলকে নিজেদের পক্ষে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ তারা জানে অন্যের সহায়তা ছাড়া কখনো নির্বাচনে সুফল পায়নি।’
জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ অবশ্য বলছেন, ‘ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে আগস্ট থেকে আমাদের আলোচনা চলছে এবং সে প্রক্রিয়া চলমান আছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোর এসব বৈঠক ভোটকে সামনে রেখে জোটকে শক্তিশালী করা কিংবা ধর্মকে ব্যবহারের যে চর্চা দীর্ঘকাল বাংলাদেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে হয়ে আসছে তারই অংশ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘এখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে যে রশি-টানাটানি দেখা যাচ্ছে এটি আসলে সেই চর্চারই প্রাথমিক প্রস্তুতি।’
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার ছয় মাস পার করলেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা হয়নি। যদিও ড. ইউনূস আগেই জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষে বা আগামী বছরের শুরুটা নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা হতে পারে।
বিএনপি ও জামায়াতের বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্বাচনের সময়সীমা ইস্যুতেই দূরত্ব তৈরি হয়েছিল এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের। বিএনপি চাইছিল সংস্কারের পাশাপাশি দ্রুত নির্বাচন আর জামায়াত নির্বাচনের আগে সংস্কারকে গুরুত্ব দেয়। এর জের ধরে দুদলের নেতারা পরস্পরকে ইঙ্গিত করে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিতে শুরু করেছিলেন। গত ২৭ ডিসেম্বর দলটির কর্মী সম্মেলনে ‘একজন চাঁদাবাজ পালিয়েছে, আরেকজন চাঁদাবাজিতে লেগে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
অন্যদিকে, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কেউ কেউ একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। দলটির একজন নেতা পাঁচই আগস্টের পর ইসলামী ব্যাংক দখলের জন্যও জামায়াতকে ইঙ্গিত করে মন্তব্য করেন।
এর মধ্যেই জামায়াতে ইসলামী অন্য ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে নিয়ে জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা শুরু করে। পাশাপাশি বিএনপিও ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ চলমান রাখে।
কিন্তু সম্প্রতি বরিশালের চরমোনাইয়ে গিয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে জামায়াতের আমিরের সাক্ষাৎ করা এবং সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় তার কার্যালয়ে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকের এসব ঘটনা সবার নজরে আসে।
যদিও জামায়াতের আমিরের সঙ্গে বৈঠকের পর বিবিসি বাংলাকে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অনেকগুলো ইসলামভিত্তিক দলের সঙ্গেই তারা এখন আলোচনা করছেন, কারণ তারা চান তাদের ভোট এক বাক্সেই থাকুক।
অপরদিকে, শেখ হাসিনার সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল এমন ছোট বড় ধর্মভিত্তিক অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও বিএনপি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে বলে দলটির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
- বিএনপির সঙ্গে সরকার-ছাত্রদের দূরত্ব কীসে?
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো জামায়াতীকরণ করা হয়েছে: রিজভী
- বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে’: নাহিদ ইসলাম
বিবিসি বাংলাকে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছিলেন, ‘বিএনপি যে সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তখনই বিএনপি অঙ্গীকার করেছে যে বিএনপি নির্বাচনের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় গেলেও যারা আন্দোলনে ছিল তাদের সবাইকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। কিন্তু জামায়াত তো হুট করে পাঁচই আগস্টের পর থেকে চেষ্টা তদবির শুরু করেছে।’
অন্যদিকে, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও নেজামে ইসলাম পার্টিসহ ইসলামপন্থি দল হিসেবে পরিচিত ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ওপর প্রভাব আছে এমন কয়েকজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গেও ধারাবাহিক বৈঠক করে আসছে জামায়াতে ইসলামী।
দলটির নেতারা বরাবরই ইঙ্গিত দিয়ে আসছিলেন যে, একটি সম্ভাব্য নির্বাচনি জোট গড়তেই তাদের এ তৎপরতা চলছে।
এ ব্যাপারে জামায়াতের মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘আমরা মনে করি প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে যারা যেভাবেই চেষ্টা করুক তাকে আমরা খারাপ ভাবে দেখি না। হয়তো আমাদের আমিরের পরপরই বিএনপি মহাসচিব ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আলোচনা করায় আলোচনাটা বেশি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জামায়াতের আলোচনা অব্যাহত আছে এবং এ নিয়ে জামায়াত একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় আছে। তবে তাই বলে দলগুলোর সঙ্গে অন্য কেউ কথা বলতে বা কোনো বিষয়ে একমত হতে পারবে না, এমন কোনো কথা নেই।
বিএনপি ও জামায়াত ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সঙ্গে রাখতে ‘রশি টানাটানিতে’ জড়িয়ে পড়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে আকন্দ বলেন, তার ধারণা ‘রশি টানাটানি’ হবে না। বিভিন্ন পক্ষ আলোচনা করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। নির্বাচন ও রাজনীতিতে এগুলো স্বাভাবিক। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সময় এলে জানা যাবে।
কেন তাদের এই পাল্টাপাল্টি চেষ্টা
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সামনে যখনি নির্বাচন হোক সেই নির্বাচনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ অনেকটাই অনিশ্চিত। সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এর মধ্যেই বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। এমন পরিস্থিতিতে ইসলামপন্থি, আওয়ামী লীগ ও ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিতরাই ভোটের ময়দানে পরস্পরের প্রতিপক্ষ হবে। আবার আন্দোলনকারী ছাত্রদের দল গঠন হলে তারাও একই ভোট ব্যাংক দখলের চেষ্টা করবে।
ধারণা করা হচ্ছে, এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি হয়তো চিন্তা করতে পারে যে ইসলামপন্থি বা ধর্মভিত্তিক সব দল যেন তাদের বিরুদ্ধে চলে না যায় কিংবা এসব দলগুলো এক হয়ে যেন বিএনপির বিরুদ্ধে নির্বাচনে না থাকে। আবার বিএনপির অনেকে মনে করেন, আন্দোলনকারী ছাত্ররা নির্বাচনে জোটবদ্ধ হওয়ার প্রশ্ন এলে জামায়াতের দিকেই হেলে পড়তে পারে। সবমিলিয়ে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর মোর্চা হলে এবং ছাত্ররাও দল গঠন করলে উভয়পক্ষই বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। সে কারণেই বিএনপির নেতৃত্ব চাইছেন ইসলামপন্থিদের একাংশ অন্তত যেন নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গেই থাকে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের বড় অংশজুড়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও বেশ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল সক্রিয় ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ভোট এলেই ধর্ম আর জোটের গুরুত্ব বেড়ে যাওয়া বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে সবসময় দেখা যায় এবং এবারেও সেই তৎপরতাই শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট দলগুলোর হয়তো তেমন ভোট নেই কিন্তু তারা যখন বড় দলের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তার একটা গুরুত্ব তৈরি হয়। তাছাড়া জোট ভারী করার একটা প্রতিযোগিতাও সবসময় হয়ে আসছে। সেটাই এখন বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যবহারের একটা চেষ্টা কিন্তু অনেক কাল ধরেই হয়ে আসছে’।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
এসএনআর/এমএমএআর/এমএস