ইসলামে অতিথি পাখিদের অধিকার

শীত মৌসুম আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন অবলোকনের বড় একটি সুযোগ তৈরি করে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের আনাগোনা দেখা যায়। তীব্র শীত ও খাদ্যসংকট থেকে বাঁচতে এসব পাখি নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশের অতিথি হয়। আমাদের দেশের খাল-বিল হাওর-বাঁওড়ে এসব পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ অতিথি পাখি হিমালয় কিংবা হিমালয়ের ওপাশ থেকে আসে। মজার বিষয় হলো, শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে তারা ঠিকই তাদের পুরোনো ঠিকানায় চলে যেতে সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালাই তাদের মধ্যে এ ধরনের একটি জিপিএস সিস্টেম দিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা রাতের বেলায় তারকা ও দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থান দেখেও দিক নির্ণয় করে। পাখির মধ্যেও আল্লাহ জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রেখেছেন। পশুপাখির প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া ইসলামের আদর্শ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন দয়ার সাগর। তার দয়া থেকে বাদ যায়নি সাধারণ কোনো কীটপতঙ্গও। পাখিদের জন্য তার মমতা ছিল তুলনারহিত। একদিন এক বালক পাখির বাসা থেকে দুটি ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটা ছানার শোকে পাগলপ্রা

ইসলামে অতিথি পাখিদের অধিকার
শীত মৌসুম আল্লাহর সৃষ্টি নিদর্শন অবলোকনের বড় একটি সুযোগ তৈরি করে। প্রতি বছর শীত মৌসুমে অতিথি পাখিদের আনাগোনা দেখা যায়। তীব্র শীত ও খাদ্যসংকট থেকে বাঁচতে এসব পাখি নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশের অতিথি হয়। আমাদের দেশের খাল-বিল হাওর-বাঁওড়ে এসব পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে অবস্থান নিতে দেখা যায়। পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। আমাদের দেশের বেশিরভাগ অতিথি পাখি হিমালয় কিংবা হিমালয়ের ওপাশ থেকে আসে। মজার বিষয় হলো, শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে তারা ঠিকই তাদের পুরোনো ঠিকানায় চলে যেতে সক্ষম হয়। আল্লাহতায়ালাই তাদের মধ্যে এ ধরনের একটি জিপিএস সিস্টেম দিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা রাতের বেলায় তারকা ও দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থান দেখেও দিক নির্ণয় করে। পাখির মধ্যেও আল্লাহ জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রেখেছেন। পশুপাখির প্রতি দয়ার্দ্র হওয়া ইসলামের আদর্শ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন দয়ার সাগর। তার দয়া থেকে বাদ যায়নি সাধারণ কোনো কীটপতঙ্গও। পাখিদের জন্য তার মমতা ছিল তুলনারহিত। একদিন এক বালক পাখির বাসা থেকে দুটি ছানা নিয়ে যাচ্ছিল। মা পাখিটা ছানার শোকে পাগলপ্রায় হয়ে ওই বালকের মাথার ওপর ওড়াউড়ি করতে লাগল। এই দৃশ্য দেখে মহানবী (সা.) বালকটিকে বললেন, ‘ছানা দুটি বাসায় রেখে এসো। দেখছ না মা পাখিটি কেমন পাগল হয়ে তোমার মাথার ওপর ওড়াউড়ি করছে, নিজের জীবনের মায়া পর্যন্ত নেই।’ তার কথা শুনে ওই বালক ছানা দুটি পাখির বাসায় রেখে এলো। মা পাখিটি ছানা দুটিকে পেয়ে অনেক আদর-সোহাগ করল, তা দেখে মহানবী (সা.) খুব খুশি হলেন। অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা গৃহপালিত পশুর প্রতি খুব যত্নশীল হবে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেবে। তারা যাতে কষ্ট না পায় এমনভাবে থাকার ব্যবস্থা করবে। তারা যা বহন করতে পারে, তার অতিরিক্ত কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে না।’ (মেশকাত)। গর্তের কীটপতঙ্গদের জীবনরক্ষার জন্য মহানবী (সা.) গর্তে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। কারণ, গর্তে পিঁপড়া ও অন্যান্য কীটপতঙ্গ থাকে। এতে তারা মারা যেতে পারে কিংবা কষ্ট পেতে পারে। পশুপাখির প্রতি এমন দয়া-মায়ার পরিপ্রেক্ষিতেই মহানবী (সা.)কে শুধু মানুষের নবী না বলে ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা ‘বিশ্ববাসীর জন্য রহমত’ অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে। হাদিসে আরও বলা হয়েছে, দুনিয়ার বুকে যদি কোনো পশু অন্য পশুকে আঘাত করে আর আঘাতপ্রাপ্ত পশুটি প্রতিশোধ গ্রহণের সুযোগ না পায়, তাহলে দুটো পশুকেই হাশরের ময়দানে উপস্থিত করানো হবে এবং অত্যাচারিত পশুটিকে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে; বাদ যাবে না অত্যাচারী মানুষরাও। হাদিসে এসেছে, ‘দয়ালুকে আল্লাহ দয়া করেন। পৃথিবীতে যারা আছে তাদের দয়া করো, আসমানের মালিক তোমাদের দয়া করবেন।’ (তিরমিজি)। হাদিসগুলোর আলোকে বলা যায়, অসুস্থ পশুপাখির সেবা করা, তাদের আশ্রয় দেওয়া, অভুক্ত পশুপাখিকে খাওয়ানো বড় সওয়াবের কাজ। তাই আশ্রয়প্রার্থী কোনো পাখিকে শিকার করা জঘন্য অপরাধ। এভাবে নির্বিচারে পশুপাখি শিকার, ভোজন, ক্রয়-বিক্রয়ের পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়, যা ইসলামী শিক্ষার বিপরীত। পাখিরা আল্লাহর জিকির করে। যার বাড়ির আঙিনার গাছে বসে সে আল্লাহর জিকির করতে পারে, তার বরকত সে নিজেও অনুভব করে। আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখোনি যে আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তার সালাত ও তাসবিহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত।’ (সুরা নুর, আয়াত: ৪১)। আমরা অনেকে গাছের ফল কিংবা পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য এদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে পাখিরা আমাদের গাছ থেকে যদি কোনো ফল খেয়ে ফেলে, তবে এর বিনিময়ে আমরা সদকার সওয়াব পাই। তাই তাদের দ্বারা বড় ধরনের লোকসানে না পড়লে তাদের না তাড়ানোই ভালো। হজরত জাবের (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান (ফলবান) গাছ লাগায় আর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে, তা তার জন্য সদকা, তা থেকে যা কিছু চুরি হবে তা তার জন্য সদকা, পাখি যা খাবে তাও তার জন্য সদকা এবং যে কেউ এর থেকে কিছু নেবে, তাও তার জন্য সদকা। অর্থাৎ, সে দান-খয়রাতের সওয়াব পাবে।’ (বুখারি, হাদিস: ২৩২০)। পাখিদের নিরাপত্তাদানের এত ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন অতিথি পাখিদের অহেতুক হত্যা করব? তা ছাড়া এটি সরকারিভাবেও নিষিদ্ধ। যদিও ইসলামে পাখি শিকার করা জায়েজ। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়া এদের নিশানা বানানো জায়েজ নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কেয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে—হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে।’ (নাসায়ি, হাদিস: ৪৩৪৯)। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ করে না যে আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সুরা নাহাল, আয়াত: ৭৯)। অতিথি পাখিরা আমাদের মেহমান। তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow