ইসলামে নবিজির (সা.) সাহাবিদের মর্যাদা

1 day ago 4

আল্লাহর রাসুলের (সা.) জীবনকালে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, ইসলাম প্রতিষ্ঠায় তাকে সহযোগিতা করেছেন এবং তার ওফাতের পর সারা পৃথিবীতে ইসলামের আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছিলেন, যাদের রক্ত, ঘাম, জীবন, শ্রম ও বিপুল ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে ইসলাম সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছিলো, তারাই আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাহাবি। নবি-রাসুলগণের পরে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারা। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আল্লাহর রাসুলের (সা.) প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার অংশ এবং ইমানের দাবি।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের সম্পর্কে বলেছেন,

وَالسَّابِقُونَ الْأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُمْ بِإِحْسَانٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ وَأَعَدَّ لَهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي تَحْتَهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ

মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা তাদেরকে অনুসরণ করেছে সুন্দরভাবে, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন আর তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। আর তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত করেছেন জান্নাতসমূহ, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। (সুরা তওবা: ১০০)

আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,

مُحَمَّدٌ رَّسُوۡلُ اللّٰهِ وَ الَّذِیۡنَ مَعَهٗۤ اَشِدَّآءُ عَلَی الۡكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَیۡنَهُمۡ تَرٰىهُمۡ رُكَّعًا سُجَّدًا یَّبۡتَغُوۡنَ فَضۡلًا مِّنَ اللّٰهِ وَ رِضۡوَانًا ۫ سِیۡمَاهُمۡ فِیۡ وُجُوۡهِهِمۡ مِّنۡ اَثَرِ السُّجُوۡدِ ؕ ذٰلِكَ مَثَلُهُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ ۚۖۛ وَ مَثَلُهُمۡ فِی الۡاِنۡجِیۡلِ ۚ۟ۛ كَزَرۡعٍ اَخۡرَجَ شَطۡـَٔهٗ فَاٰزَرَهٗ فَاسۡتَغۡلَظَ فَاسۡتَوٰی عَلٰی سُوۡقِهٖ یُعۡجِبُ الزُّرَّاعَ لِیَغِیۡظَ بِهِمُ الۡكُفَّارَ ؕ وَعَدَ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ مِنۡهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তার সাথে যারা আছে তারা কাফেরদের প্রতি অত্যন্ত কঠোর; পরস্পরের প্রতি সদয়, তুমি তাদেরকে রুকূকারী, সিজদাকারী অবস্থায় দেখতে পাবে। তারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করছে। তাদের আলামত হচ্ছে, তাদের চেহারায় সিজদার চি‎হ্ন থাকে। এটাই তাওরাতে তাদের দৃষ্টান্ত। আর ইনজিলে তাদের দৃষ্টান্ত হলো একটি চারাগাছের মত, যে তার কঁচিপাতা উদগত করেছে ও শক্ত করেছে, অতঃপর তা পুষ্ট হয়েছে ও স্বীয় কান্ডের উপর মজবুতভাবে দাঁড়িয়েছে, যা চাষীকে আনন্দ দেয়। যাতে তিনি তাদের দ্বারা কাফিরদেরকে ক্রোধান্বিত করতে পারেন। তাদের মধ্যে যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদানের ওয়াদা করেছেন। (সুরা ফাতহ: ২৯)

আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে সাহাবিদের প্রশংসা এবং অন্যান্য সব মানুষের তুলনায় তাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন,

خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

আমার যুগের মানুষ সর্বোত্তম। তারপর তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা এবং এরপর তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা। (সহিহ বুখারি: ৩৬৫১, সহিহ মুসলিম: ২৫৩৩)

ইমরান ইবনে হোসাইন (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন,

خَيْرُ أُمَّتِي الْقَرْنُ الَّذِي بُعِثْتُ فِيهِمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ

আমি যে যুগে যাদের মধ্যে প্রেরিত হয়েছি সেই যুগের মানুষই আমার উন্মাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, তারপর তাদের পরবর্তী যুগের লোকেরা। (সুনানে তিরমিজি: ২২২২)

সাহাবিদের ব্যাপারে মন্দ বলতে নিষেধ করেছেন নবিজি (সা.)। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত নবিজি (সা.) বলেছেন,

لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي فَلَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا بَلَغَ مُدَّ أَحَدِهِمْ وَلَا نصيفه

তোমরা আমার সাহাবিদের গালমন্দ করো না। কেননা তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে খরচ করে, তবুও (ইসলামের প্রাথমিক যুগের সংকটময় সময়ে) তাদের এক মুদ কিংবা অর্ধ মুদ যব বা গম খরচ করার সমান সাওয়াব পর্যন্ত পৌছতে পারবে না। (সহিহ বুখারি: ৩৬৭৩, সহিহ মুসলিম: ২৫৪০)

এ ছাড়া বিভিন্ন হাদিসে নবিজি (সা.) বিশেষভাবেও অনেক সাহাবির ইমান ও দীনদারির প্রশংসা করেছেন, আল্লাহর কাছে তাদের মর্যাদা বর্ণনা করেছেন, অনেককে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সাহাবিদের মধ্যে সবার মর্যাদা সমান নয়। সব সাহাবিদের ইমান, দীনদারি এক রকম ছিল না। আল্লাহর দীন ও তার রাসুলের জন্য সবার ত্যাগ-তিতিক্ষাও সমান ছিল না। নিজেদের কাজের মাধ্যমে সাহাবিদের অনেকে অনেকের চেয়ে বেশি মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। কিন্তু আল্লাহর রাসুলের (সা.) সাহাবি হিসেবে প্রত্যেক সাহাবিই আমাদের কাছে সম্মানিত ও শ্রদ্ধার পাত্র।

ওএফএফ/জিকেএস

Read Entire Article