দেশের ইস্পাত খাত থেকে সরকারের রাজস্বে বছরে ২০০ কোটি টাকারও বেশি অবদান রাখার পরও কোনো রপ্তানি প্রণোদনা পাচ্ছেন না খাতটির ব্যবসায়ীরা। এ খাতে বিশেষ তহবিল গঠন করে রপ্তানিতে আরও বেশি অবদান রাখতে চান ব্যবসায়ীরা।
বুধবার (২০ আগস্ট) রাতে ঢাকার বনানীর বুয়েট গ্র্যাজুয়েটস ক্লাব লিমিটেডে স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (এসবিএমএ) এবং এমএস লিমরা এক্সিবিশনসের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সময় এমন দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। আগামী ২০ থেকে ২২ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে অনুষ্ঠিতব্য ‘মেটাল এক্সপো বাংলাদেশ ২০২৫’ সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া স্টিল বিল্ডিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ও বর্তমান নেতা এবং ব্যবসায়ীরাও উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, শিল্পায়নের ক্ষেত্রে প্রিফেব্রিকেটেড স্টিল শিল্পের ভূমিকা অপরিহার্য। অবকাঠামো উন্নয়ন, পরিবহন, জ্বালানি, ভারী প্রকৌশল ও নির্মাণ খাতে প্রিফেব্রিকেটেড স্টিল শিল্পের উপাদান অপরিহার্য। গত কয়েক বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্টিল শিল্পে ২০ শতাংশের বেশি সম্প্রসারণ ঘটেছে। বর্তমানে বাজারের আকার ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে এবং বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে শুল্কমুক্ত তৈরি পণ্য আমদানি বন্ধ, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন-বহির্ভূত ম্যানুফ্যাকচারারদের ভ্যাটের আওতায় আনা, সরকারি প্রকল্পের টেন্ডারে সমান সুযোগ প্রদানসহ বিভিন্ন দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি প্রিফেব্রিকেটেড শিল্পকে বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এসবিএমএর সাবেক সভাপতি ও সরকার স্টিলের এমডি জাকির হোসেন সরকার বলেন, দেশে প্রায় ৪০০টির বেশি স্টিল মিল রয়েছে, যাদের বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ৪ লাখ টন। বর্তমানে ২ লাখ টন ইস্পাতের চাহিদা পূরণের পর অবশিষ্ট অংশ রপ্তানির সুযোগ তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। ভবিষ্যতে আরও নতুন বাজারেও রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এসবিএমএ নেতা এবং কম্পোজিট স্টিল স্ট্রাকচার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আরমান বলেন, আমরা বছরে সরকারের রাজস্বে ২০০ কোটি টাকারও বেশি অবদান রাখি। অথচ এই খাতের জন্য কোনো রপ্তানি প্রণোদনা নেই। আমরা চাই বিশেষ তহবিল গঠন করা হোক, যাতে রপ্তানিতে আরও অবদান রাখতে পারি।
তিনি আরও জানান, এই খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ ব্যাপক। প্রতিটি কারখানায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মাসিক মজুরি ১৫-২০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয় এবং কয়েক বছরের মধ্যে তা ৩০-৪০ হাজার টাকায় উন্নীত হয়। এ ছাড়া দেশের বাইরে কাজ করা আমাদের থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শ্রমিকরা মাসে তিন থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য মেটাল এক্সপোকে ঘিরে দেশের প্রিফেব্রিকেটেড শিল্পের অগ্রগতি, সম্ভাবনা এবং রপ্তানি সক্ষমতা তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে বলে আয়োজকরা আশা করছেন।