ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটকের দেখা না মিললেও সাপ্তাহিক ছুটিতে মুখর হয়ে উঠেছে কক্সবাজারের বেলাভূমি। বিপুল পর্যটকে সরগরম এ পর্যটন নগরী।
সৈকত শহরে পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেলে দৈনিক প্রায় সোয়া লাখ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে আবার অনেকে কক্সবাজার পৌঁছে রুম ভাড়া নেন। আবহাওয়া যাই থাক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হলে আনন্দে থাকে পর্যটন নগরী।
শুক্রবার (২১ জুন) বিকেলে সৈকতের কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে বিপুল পর্যটকের উপস্থিতি মেলে। অনেকে লোনা জলে গা ভাসিয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন।
এখানে ছাড়াও মেরিন ড্রাইভ, হিমছড়ি, ইনানি, পাটোয়ারটেক, টেকনাফ জিরো পয়েন্ট, রামুর বৌদ্ধমন্দির, মহেশখালীর আদিনাথ মন্দির, ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটক ও দর্শনার্থীর ভিড় রয়েছে। ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে জেলার সব পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের ফ্রন্ট অফিস ম্যানেজার আবদুল হান্নান বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটিতে আমাদের ৫০-৬০ শতাংশ বুকিং ছিল। আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। তবে, সাপ্তাহিক বন্ধ শুক্র-শনিবার উপলক্ষ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে পর্যটক আগমন বেড়েছে। বৈরী আবহাওয়াতেও ৭০-৮০ শতাংশ বুকিং হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, আকাশে মেঘ-রোদের লুকোচুরিতে সৈকতের চিত্র মোহনীয় হয় বেশি। এমন পরিবেশে পর্যটক সমাগম বেড়েছে শুক্রবার। এদের মাঝে একদিনের দর্শনার্থীও আছে। ঈদের ব্যবসায় হতাশার মাঝে শুক্র-শনি একটু আশা জাগাতে পারে।
চট্টগ্রামের রাউজান হতে আসা পর্যটক কবিরুল ইসলাম বলেন, নানা কাজে ঘোরার সময় হয়ে উঠে না। তাই পরিবারের পরামর্শে ঈদের পর আশার সিদ্ধান্ত ছিল। পরিবারসহ ঘুরতে এসে বৃষ্টির মাঝে সৈকতে খুবই ভালো লাগছে। সৈকতের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ বিমোহিত করেছে।
হোটেল সি-নাইটের ব্যবস্থাপক শফিক ফরাজী বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে সাপ্তাহিক ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। এখনো তেমনটি চলছে। ঈদের বিজনেসে হতাশার মাঝে শুক্রবার একটু সন্তুষ্টি আছে।
হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, ঈদের ছুটিতে পর্যটক সেবায় সবধরনের প্রস্তুতি থাকলেও পর্যটক আশানুরূপ আসেনি। তবে আগের মতো সাপ্তাহিক ছুটিতে পর্যটকে মুখর হয়েছে কক্সবাজার। এটা দুদিনের ব্যবসা এরপরও আমরা আনন্দিত।
ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, পর্যটকদের লক্ষ্মী জ্ঞান করে তাদের সেবা দিতেই মুখিয়ে থাকি আমরা। তবে, হোটেল-মোটেল দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব পায় সেভাবে পর্যটকদের বিনোদন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারেনি। বিদেশের মতো সামগ্রিক বিনোদন সুবিধা বাড়ানো গেলে সারাবছরই ভ্রমণ পিপাসুদের আগমন বাড়বে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, পর্যটকদের ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে পর্যটন এলাকা টহলে রয়েছে মোবাইল কোর্ট। রয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশও। বিচে শৃঙ্খলা রক্ষায় রয়েছে বিচকর্মী আর ঢেউয়ে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষায় কাজ করছে লাইফগার্ড সদস্যরা।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়ন প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, পর্যটক যাই আসুক ছুটির দিনগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় থাকে আমাদের। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে নিরবচ্ছিন্ন রয়েছে নিরাপত্তা। ট্যুরিস্ট পুলিশ সচেষ্ট রয়েছে টেকনাফ, ইনানী, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, চৌফলদন্ডী, খুরুশকুল ব্রিজ এলাকায়ও।
সায়ীদ আলমগীর/আরএইচ/জিকেএস