ঈদুল আজহা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। প্রতি বছর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে লাখ লাখ পশু কোরবানি হয়। ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি এটি অনেক দেশের কৃষি ও পশুপালন খাতে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক গতি আনে। তবে কোন দেশে কত পশু কোরবানি হয়—এ নিয়ে অনেকেরই কৌতূহল রয়েছে।
প্রতিবছরের সরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন দেশে কোরবানির পশুর সংখ্যা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতার ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা পায়। এই প্রতিবেদনে মুসলিমপ্রধান কয়েকটি দেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর কোরবানির পশুর পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো।
পশুর সংখ্যা
কোরবানির পশু হিসেবে সাধারণত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা এবং উট ব্যবহৃত হয়। দেশ ও সংস্কৃতিভেদে কোরবানির পশুর ধরন এবং সংখ্যা ভিন্ন হয়। নিচে কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশে কোরবানির পশুর সংখ্যার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
সৌদি আরব: সৌদি আরবে হজের সময় প্রচুর পশু কোরবানি হয়। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, সে বছর প্রায় ১৫ লাখ হজযাত্রী হজে অংশ নিয়েছিলেন এবং তাদের জন্য প্রায় ১০ লাখ পশু কোরবানি করা হয়। এর মধ্যে ভেড়া এবং ছাগলের সংখ্যাই বেশি।
পাকিস্তান: পাকিস্তানে প্রায় ২৪ কোটি মুসলিম বাস করে, যা দেশটির জনসংখ্যার ৯৮ শতাংশ। এখানে কোরবানির পশুর সংখ্যা প্রতি বছর প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ, যার মধ্যে গরু, ছাগল, ভেড়া এবং উট অন্তর্ভুক্ত। শীতপ্রধান অঞ্চলে দুম্বার কোরবানি বেশি প্রচলিত।
ইন্দোনেশিয়া: বিশ্বের সবচেয়ে বেশি (প্রায় ২০ দশমিক ৩ কোটি) মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়ায় কোরবানির পশুর সংখ্যা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ। এখানে গরু এবং ছাগল প্রধানত কোরবানি করা হয়।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশে প্রায় ১৬ কোটি মুসলিম বাস করে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশে এক কোটির বেশি পশু কোরবানি করা হয়েছে, যার মধ্যে গরু এবং ছাগলের সংখ্যা বেশি।
ইরান ও তুরস্ক: এই দেশগুলোতে প্রতি বছর প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ পশু কোরবানি করা হয়। ইরানে গরু ও ভেড়া এবং তুরস্কে ভেড়া ও ছাগল বেশি জনপ্রিয়।
চামড়ার ব্যবসা
কোরবানির পশুর চামড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে কোরবানির সময় উৎপন্ন চামড়া অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। নিচে কয়েকটি দেশের চামড়ার ব্যবসার পরিমাণ নিয়ে আলোচনা করা হলো:
পাকিস্তান: পাকিস্তানের চামড়া শিল্প বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ। কোরবানির সময় প্রায় ৭০ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, যার বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি রুপি। এই চামড়া দেশীয় ট্যানারি এবং রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হয়।
বাংলাদেশ: বাংলাদেশে কোরবানির সময় প্রায় এক কোটি চামড়া সংগ্রহ করা হয়। ২০২৪ সালে চামড়ার বাজার মূল্য ছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। তবে, অপচয় এবং সঠিক সংরক্ষণের অভাবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ চামড়ার মূল্য কমে যায়। বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানি করে প্রায় ১০০ কোটি ডলার আয় করে।
সৌদি আরব: সৌদি আরবে হজ ও ঈদুল আজহার সময় প্রায় ১০ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়, যার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি রিয়াল। এই চামড়া স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয়।
ইন্দোনেশিয়া: ইন্দোনেশিয়ায় চামড়ার বাজার তুলনামূলকভাবে ছোট। তবু প্রায় ২০ লাখ চামড়া থেকে বছরে ২০ কোটি ডলারের ব্যবসা হয়।
ইরান ও তুরস্ক: এই দেশগুলোতে চামড়ার বাজার প্রায় ৩০-৪০ কোটি ডলারের। তবে, স্থানীয় চাহিদার কারণে রপ্তানি তুলনামূলকভাবে কম।
সূত্র: বিবিসি, এপি, উইকিপিডিয়া
কেএএ/

 4 months ago
                        14
                        4 months ago
                        14
                    








 English (US)  ·
                        English (US)  ·