উইকেট নিয়ে বিভ্রান্তি চাইলেই দুর করা যেত!

3 months ago 50

এলোমেলো, অবিন্যস্ত, ছন্নছাড়া- যাই বলা হোক না কেন, কম বলা হবে। আসলে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের অবস্থা খুবই খারাপ। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের একটি শাখাও সাজানো গোছানো নেই।

ব্যাটিংয়ের অবস্থাই বেশি খারাপ। বিশেষ করে ওপেনার ও টপ অর্ডাররা রান করতেই ভুলে গেছেন যেন। সৌম্য, লিটন দাস, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত এমনকি সাকিব আল হাসানের ব্যাটও কথা বলছে না।

ফিল্ডিং ব্যাকআপও যাচ্ছেতাই। দুটি ক্যাচ উঠলে একটি ফেলে দিচ্ছেন ফিল্ডাররা। পেস বোলিংটা মোটামুটি সাজানো-গোছানো ছিল। খুব না হলেও কিছুটা ধার ছিল; কিন্তু তাসকিনের পাঁজরের ইনজুরি আর ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বল লেগে শরিফুলের বোলিং হাতের আঙ্গুল ও তালুর মাঝামাঝি ৬টি সেলাই- পেস বোলিং ডিপার্টমেন্টকে করেছে দূর্বল।

যদিও শোনা যাচ্ছে তাসকিন সুস্থ হয়ে হয়তো ৮ জুন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলবেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাসকিন খেলতে না পারলে বাংলাদেশের পেস বোলিং শক্তি কমে অর্ধেকে দাঁড়াবে, নিশ্চিত।

দলে ব্যাকআপ পেসার নেই। স্কোয়াডে পেসারই মোটে ৪ জন; তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল ও তানজিম সাকিব। তাসকিন ও শরিফুল না খেলা মানে দু’জন মাত্র পেসার নিয়ে মাঠে নামা। বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে এটাও একটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ বাংলাদেশ দলের জন্য।

এর সঙ্গে আরও একটি বিষয় যোগ হয়েছে। তাহলো ‘ড্রপ ইন পিচ’। নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে খেলা হবে ড্রপ ইন পিচে। বলার অপেক্ষা রাখে না বাংলাদেশের বর্তমান দলটির বেশির ভাগ সদস্যর ড্রপ ইন পিচে খেলার ও অনুশীলনের অভিজ্ঞতা খুব কম। তাই ধারণাও নেই তেমন।

ড্রপ ইন পিচের সত্যিকার চরিত্র কী? গতি-প্রকৃতি কেমন? এই ড্রপ ইন পিচ- কী ব্যাটিং ফ্রেন্ডলি, না স্পোর্টিং? নাকি বোলিং সহায়ক? বল কি ন্যাচারাল টার্ফের মত পড়ে দ্রুত গতিতে ব্যাটে আসে? নাকি স্লথ হয়ে থেমে আসে? বাউন্সটা কেমন থাকে? পেসার না স্পিনার- কারা সহায়তা পান? সকালে ও দুপুরে এ পিচের আচরণ পাল্টায় নাকি? সবই অজানা বাংলাদেশের।

তবু রক্ষা যে, বিশ্বকাপে টিম বাংলাদেশের প্রথম খেলা ডালাসের ন্যাচারাল টার্ফে। যে পিচে আইসিসির ২ সহযোগী সদস্য কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র ম্যাচেও গড়পড়তা ১৯০ প্লাস স্কোর হয়েছে। কানাডা ১৯৪ রান করেও পারেনি। ১৪ বল আগে ৭ উইকেটর জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। বলে রাখা ভাল, এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত যে কয়টি ম্যাচ হয়েছে, তার মধ্যে ওই ম্যাচটিই হাই স্কোরিং।

ডালাসের পিচ ব্যাটারদের স্বর্গ না হলেও অন্য ভেন্যুগুলোর চেয়ে ব্যাটিং সহায়ক; কিন্তু সেই উইকেট সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নেই টাইগারদের। এখন ওই মাঠে বিশ্বকাপের অন্য ম্যাচগুলো দেখেই ধারণা নিতে হবে। কৌশল আঁটতে হবে ও একাদশ ঠিক করতে হবে।

১০ জুন নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলতে হবে ড্রপ ইন পিচে। এই দুই পিট সম্পর্কেই সে অর্থে ধারণা নেই বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। সেখানে খেলার পূর্ব অভিজ্ঞতাও নেই টাইগারদের।

অথচ একটু সচেতন থাকলেই নিউইয়র্ক ও ডালাসের পিচগুলো কেমন? গতি, বাউন্স, ম্যুভমেন্ট বা টার্ন কতটা হয় সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেত।

ভাবছেন কিভাবে? বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ডের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা হলেন একজন বাংলাদেশি। দেশের হয়ে ৯ ওয়ানডে আর ৩টি আইসিসি ট্রফি খেলা ফাস্ট বোলার জিএম নওশের প্রিন্স। তিনিই যুক্তরাষ্ট্রর বিশ্বকাপ ভেন্যু সম্পর্কে সবচেয়ে বড় তথ্যদাতা হতে পারতেন।
গোলাম নওশের প্রিন্স একা নন, ৮০ ও ৯০ এর দশকে দেশের অন্যতম সেরা উইলোবাজ সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এবং সাবেক প্রধান নির্বাচক রফিকুল আলম, জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার নাজিম সিরাজীসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এখন আমেরিকা প্রবাসী।

জাতীয় দলের সাবেক পেসার তাপস বৈশ্য প্রায় ৫-৭ বছর ধরে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। তিনি সেখানে স্থানীয় লিগও খেলেন। জাতীয় দলের আরেক ড্যাশিং উইলোবাজ আফতাব আহমেদও এখন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় বয়সভিত্তিক ক্রিকেট একাডেমিতে কোচিং করাচ্ছেন।

ওই তিন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটারই যুক্তরাষ্ট্রের কন্ডিশন, উইকেট সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা দিতে পারতেন; কিন্তু বিসিবি বা বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য সংগ্রহের চেষ্টাই করেনি। করলে উইকেট সম্পর্কে ধারনা আরও পরিষ্কার হতো এবং নিশ্চিত করেই বাংলাদেশের প্রস্তুতিটা আরও ভালো হতে পারতো।

এআরবি/আইএইচএস

Read Entire Article