উত্তরার দিয়াবাড়ি যেন নার্সারির রাজ্য
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি নিরিবিলি পরিবেশের কারণে বহুদিন ধরেই জনপ্রিয় ঠিকানা। এখন সেই অঞ্চলই পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ সবুজ ব্যবসা কেন্দ্রে। উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের নদীর পাড় ঘেঁষে সারি সারি ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। বাড়ি-ঘর, অফিস কিংবা ছাদ বাগান সাজাতে পছন্দের গাছ কিনতে প্রতিদিনই ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। ১৫ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তাকালেই চোখে পড়ে রাস্তার দুই ধারে সারি সারি সাজানো অনেক নার্সারি। যেন সবুজের দীর্ঘ কারুকাজ বিছিয়ে আছে পুরো পথজুড়ে। ব্রিজের উত্তর পাশেও আছে আরও কিছু নার্সারি। ছোট-বড় সব মিলিয়ে ডিয়াবাড়ি এলাকায় শতাধিক নার্সারি আছে। যা এই এলাকার সবুজ সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। দূর থেকে তাকালেই দেখা যায়, গাছের রং, পাতার নানান আকার ও ফুলের দারুণ রঙে পুরো জায়গাটি অন্যরকম দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। পথচারীরা হাঁটতে হাঁটতেই থেমে যান, কেউ গন্ধ শোঁকে, কেউ নতুন চারা দেখেন, কেউ শুধু সবুজের সারি দেখে মন ভরে ফেরেন। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, ছাদ বাগান উদ্যোক্তা এবং সাধারণ ক্রেতাদের কাছে এখন দিয়াবাড়ির নার্স
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি নিরিবিলি পরিবেশের কারণে বহুদিন ধরেই জনপ্রিয় ঠিকানা। এখন সেই অঞ্চলই পরিণত হয়েছে এক বিস্তীর্ণ সবুজ ব্যবসা কেন্দ্রে। উত্তরা ১৫ ও ১৬ নম্বর সেক্টরের নদীর পাড় ঘেঁষে সারি সারি ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে। বাড়ি-ঘর, অফিস কিংবা ছাদ বাগান সাজাতে পছন্দের গাছ কিনতে প্রতিদিনই ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে এখানে ছুটে আসেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ।
১৫ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর ব্রিজের দক্ষিণ পাশে তাকালেই চোখে পড়ে রাস্তার দুই ধারে সারি সারি সাজানো অনেক নার্সারি। যেন সবুজের দীর্ঘ কারুকাজ বিছিয়ে আছে পুরো পথজুড়ে। ব্রিজের উত্তর পাশেও আছে আরও কিছু নার্সারি। ছোট-বড় সব মিলিয়ে ডিয়াবাড়ি এলাকায় শতাধিক নার্সারি আছে। যা এই এলাকার সবুজ সৌন্দর্যকে আরও বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। দূর থেকে তাকালেই দেখা যায়, গাছের রং, পাতার নানান আকার ও ফুলের দারুণ রঙে পুরো জায়গাটি অন্যরকম দৃশ্যে পরিণত হয়েছে। পথচারীরা হাঁটতে হাঁটতেই থেমে যান, কেউ গন্ধ শোঁকে, কেউ নতুন চারা দেখেন, কেউ শুধু সবুজের সারি দেখে মন ভরে ফেরেন।
রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, ছাদ বাগান উদ্যোক্তা এবং সাধারণ ক্রেতাদের কাছে এখন দিয়াবাড়ির নার্সারিগুলো রাজধানীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য ঠিকানা। দিয়াবাড়ির নার্সারিগুলো ঘুরে দেখা যায়, কোথাও ফলের বড় চারা, কোথাও সারিবদ্ধ ইনডোর প্ল্যান্ট, আবার কোথাও দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলের গাছের সারি। শোভাবর্ধক ও ওষুধি গাছও আছে। গাছের এই বৈচিত্র্যই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। এককথায়, এখানে প্রায় সব ধরনের চারা ও গাছই পাওয়া যায়।
বর্ষায় যেখানে ফল ও বনজ চারা বিক্রি বেশি হয়; সেখানে শীতের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই নার্সারিগুলোর পরিবেশ পুরোপুরি বদলে গেছে। ব্যবসায়ীরা হয়ে ওঠেছেন আরও ব্যস্ত। মালিক-শ্রমিকদের যেন দম ফেলার সুযোগ নেই। বর্তমানে সেখানে চোখে পড়ে ছুটোছুটি ও ব্যস্ততার চিত্র। কারণ নভেম্বরে শুরু হয় শীতকালীন ফুলের চারার গুরুত্বপূর্ণ মৌসুম। গাঁদা, বেগুনি, ক্যালেন্ডুলা, কসমস, জারবেরা, পিটুনিয়া—এসব ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
তাই শীতকালীন ফুলের বীজতলা তৈরি, চারা বাছাই, মাটি তৈরি, টব প্রস্তুত এবং গাছের পরিচর্যাসহ নার্সারির নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত চলে তাদের এই কার্যক্রম। সবমিলিয়ে নার্সারি পাড়া হয়ে ওঠেছে এক জীবন্ত সবুজ কর্মশালা। প্রতিটি নার্সারিতে ৩ থেকে ৫ জন স্থায়ী শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। সিজনভেদে ও কাজের চাপ অনুযায়ী অতিরিক্ত দৈনিক মজুরির শ্রমিকও নেওয়া হয়। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদেরও নার্সারি কাজ করতে দেখা যায়।
এই নার্সারি পাড়ায় গাছের পাশাপাশি আছে মিশ্র মাটি, ড্রাম, টব, হ্যাঙ্গিং বাসকেট, জিআই স্ট্যান্ড, জৈব সার, কীটনাশক, স্প্রে বটলসহ বাগানের প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম। ফলে ক্রেতারা সহজেই এক জায়গা থেকেই সবকিছু সংগ্রহ করতে পারেন। ইমরান নামের এক শ্রমিক বীজতলায় পানি দিতে দিতে জানালেন, করোনাকাল থেকেই তিনি এখানকার নার্সারিতে কাজ করছেন।
তিনি বলেন, ‘বীজতলা তৈরি, চারা রোপণ, পানি দেওয়া, সার মেশানো—সবই সময়মতো করতে হয়। শীতকালে ফুল গাছের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। তাই ফুলসহ শীতকালীন শাক-সবজির চারা তৈরিতে শীতের শুরু থেকেই আমাদের কাজের চাপ বাড়তে থাকে। প্রতিটি নার্সারির শ্রমিকেরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেন।’
এখন ভালোভাবে চারা তৈরি করে শীতের মৌসুম ধরতে পারলে নার্সারির বাজারও জমজমাট হবে বলে জানান এই শ্রমিক। আরেক শ্রমিক আবুল হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নার্সারি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বীজতলা ও গাছে নিয়মিত কয়েক বেলায় পানি দিই। কোনো পাতা বা কাণ্ড নষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেই।’
ঢাকার বাসাবাড়িতে জায়গার অভাব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এখন অনেকেই ছাদ ব্যবহার করছেন ক্ষুদ্র কৃষির জমি হিসেবে। ছাদে শাক-সবজি, ফুল, ফল সবই হচ্ছে। আর এতে নার্সারিগুলোর বড় একটি ক্রেতা গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে।
আরও পড়ুন
হাতের কাছেই পাবেন যেসব ফুল
চারপাশে উঁকি মারছে দীপ্ত লুচি, চেনেন কি?
নার্সারি মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ৪০-৫০ শতাংশ ক্রেতাই এখন ছাদ বাগান চর্চাকারী। তারা শুধু গাছই নয়; বেড তৈরি, টবে মাটি মেশানো, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ছাদ বাগান তৈরির ডিজাইন, কীটনাশক ব্যবস্থাপনা—সবই নার্সারি থেকে সেবা হিসেবে নিচ্ছেন।
মালিকরা বলেন, ‘অনেকেই শুরুতে জানেন না কোন গাছ কোথায় বসবে। আমরা পুরো ছাদের প্ল্যান সাজিয়ে দিই। তাই ছাদ বাগানকারীরা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।’
ঢাকার ব্যস্ত মানুষের কাছে এই রেডিমেড সেবা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু ছাদ নয়, বারান্দা, অফিসের রিসেপশন, রেস্তোরাঁর ডেকোরেশন—সব জায়গায়ই নার্সারির চাহিদা বাড়ছে।
প্রতিদিনই ঢাকাসহ আশপাশের জেলা থেকে বাড়ি-ঘর, অফিস, রেস্তোরাঁ এবং ছাদ বাগান সাজাতে পছন্দের গাছ কেনার জন্য ভিড় জমে ওঠে দিয়াবাড়ির নার্সারি পাড়ায়। কেউ আসেন নতুন বাগান শুরু করতে, কেউ আসেন পুরোনো বাগানে নতুন গাছ যোগ করতে। পরিবার, তরুণ-তরুণী, বাগান উদ্যোক্তা, করপোরেট প্রতিনিধির পদচারণায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট থাকে এই সবুজ বাজার।
ঢাকার হাজারীবাগ থেকে নতুন ছাদ বাগান সাজানোর জন্য এসেছেন আজিম নামের এক কর্মচারী। তার হাতে গাছ কেনার একটি তালিকাও আছে, সঙ্গে দু’জন সহকারী। বাজেট ২০-২৫ হাজার টাকা। বাজেটের মধ্যে সেরা গাছ কিনতে তারা নার্সারি ঘুরে ঘুরে দেখেন ও দরদাম করেন।
আজিম জানান, মালিকের নতুন ছাদ বাগান তৈরির দায়িত্ব তার ওপর। তাই তিনি এসেছেন প্রয়োজনীয় ফুল, ফল ও শোভাবর্ধক গাছ সংগ্রহ করতে। ‘আম, মাল্টা, লেবুসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ কিনতেছি। এখানে অনেক নার্সারি থাকায় ভালো গাছ বেছে নেওয়ার সুযোগ বেশি’, বলেন তিনি।
শুধু গাছ নয়—টব, প্রস্তুত মাটি, ড্রেনেজ উপাদান, জৈব সারসহ বিভিন্ন বাগানসামগ্রীও কিনবেন আজিম। নার্সারির শ্রমিকেরা তাকে ছাদ বাগান পরিচর্যার বিভিন্ন দিকও বুঝিয়ে দেন। দিয়াবাড়ি শুধু ব্যবসার কেন্দ্র নয়; এটি নগরের সবুজায়নের এক প্রধান উৎস। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প, সড়ক উন্নয়ন, স্কুল-কলেজ, অফিস, শপিং মল, পার্ক—বেশিরভাগ জায়গায় ব্যবহৃত গাছ এখান থেকেই যায়। ঢাকার সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায়ও নার্সারিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রতিটি গাছ বাতাস শুদ্ধ করছে, তাপমাত্রা কমাচ্ছে, পাখিদের আশ্রয় দিচ্ছে।
এভাবেই দিয়াবাড়ির শতাধিক নার্সারি ব্যবসার পাশাপাশি শহরের বুকে গড়ে তুলেছে এক অনন্য সবুজ রাজ্য। শহরের ভিড়, ধুলো থেকে মুক্ত হয়ে সবুজের ছোঁয়া পেতে, নানা ধরনের জানা-অজানা গাছের সঙ্গে পরিচিত হতে এবং মানসিক প্রশান্তির খোঁজে বহু মানুষ ছুটে আসেন এখানে। নগরজীবন এখন চাপ, ক্লান্তি ও মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে। তাই গাছ মানুষের জন্য এক ধরনের মানসিক শান্তির উৎস হয়ে উঠেছে।
এসইউ
What's Your Reaction?