উদ্বোধনের দুই বছর পেরোলেও লালমনিরহাট সদরে নির্মিত মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এখনো মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। এতে স্থানীয় এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত মসজিদটি নামাজের জন্য উন্মুক্ত করার দাবি করেছেন।
গণপূর্ত বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের ধাইরখাতা এলাকায় প্রায় ৪৮ শতক জমির ওপর মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাজিন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড প্রায় ১২ কোটি ৬০ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ব্যয়ে মসজিদটি নির্মাণের কাজ পায়। ২০২১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করে হস্তান্তরের কথা থাকলেও তা হয়নি।
পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের পরও মুসল্লিদের জন্য নামাজ আদায়ের পরিবেশ তৈরি হয়নি।
- আরও পড়ুন:
খানাখন্দে ভরা মহাসড়কে গাড়ি চলে হেলেদুলে
দুই টাকার হোটেলে তৃপ্তির খাওয়া, মেন্যুতে থাকে গরুর মাংস-মাছ-ডাল
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মসজিদের বাইরের সীমানা প্রাচীর, ভেতর ও বাইরের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ এখনো চলমান। পানি ও বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসম্পূর্ণ রয়েছে। এ অবস্থায় মসজিদ উদ্বোধনের এতদিন পরও নামাজ আদায়ের সুযোগ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় মুসল্লিরা।
এলাকাবাসী ও মুসল্লিদের দাবি, দ্রুত কাজ শেষ করে মসজিদে নামাজ আদায়ের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শিগগিরই মসজিদটি হস্তান্তর করে উন্মুক্ত করা হবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।
সদর মডেল মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবেদ আলী বলেন, ‘উদ্বোধনের এতদিন পরও নামাজ পড়তে পারছি না। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক। এটির সংস্কার কাজ শেষেই হচ্ছে না। আমরা কয়েকবার গণপূর্তিত দপ্তর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলাম। এক মাস দুই মাস এরকম সময় চেয়ে বহুবার বলেছে, তবে কাজ শেষ হচ্ছে।’
- আরও পড়ুন:
চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সুইমিংপুল ৭ বছর বন্ধ
‘বাবা উঠো, মজা আইন্না দাও’ কবরের কাছে গিয়ে বলে ছোট্ট সাজিদুল
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এলাকাবাসীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুক্রবার মানববন্ধন করার। দেখা যাক এর মাঝে কিছু হয় কিনা। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের দিয়ে এই মসজিদের কাজ হচ্ছে না। আমাদের চাওয়া সরকার যেন নতুন লোক দিয়ে মসজিদটির কাজ শেষ করে উদ্বোধন করে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ডিসি স্যারসহ প্রশাসনের সবাই এখানে এসেছিলেন। তারা বলেছিলেন মসজিদটি দ্রুত নামাজের জন্য উদ্বোধন করবেন। তিন চার বছর হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রতিদিন এই দুইজন তিনজন করে লেবার দিয়ে কাজ করাচ্ছে, তাদের কাজ এখনও শেষেই হচ্ছে না। নামাজ পড়ার এখন পর্যন্ত কোনো অগ্রগতি আমরা স্থানীয় মানুষরা দেখছি না। এলাকাবাসীর অনেক দিনের দাবি তারা এই মসজিদে নামাজ পড়বে। অনেকেই নামাজ পড়তে চেয়ে মারা গিয়েছেন। বিদ্যুতের লাইন দিচ্ছে না এবং তাদের কাজও কিন্তু ধীর গতিতে চলছে। বর্তমান সরকারের কাছে দাবি দ্রুত মসজিদটি উদ্বোধন করে মুসল্লিদের জন্য খুলে দেওয়া হোক।’
এলাকার নারী মুসল্লি মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘আমার বাসার সামনেই মডেল মসজিদ। জেলার অনেক মসজিদ উদ্বোধন হয়েছে। আমাদেরও ইচ্ছা জাগে এই মসজিদে নামাজ পড়বো, মহিলাদের নামাজ পড়ার জন্য আলাদা জায়গা করেছে। এখন কবে কাজ শেষ হবে তাও জানি না। মসজিদটি যেন দ্রুত খুলে দেয় আমি যেন এই শেষ বয়সে নামাজ পড়ে যেতে পারি মসজিদটিতে।’
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এইচ এম শাহরিয়ার বলেন, ‘নকশাগত পরিবর্তনের কারণে কাজ শেষ হতে সময় লেগেছে। বিদ্যুৎ সংযোগ বাকি আছে। নেসকো কর্তৃক বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া মাত্রই মসজিদটি হস্তান্তর করা হবে।’
মহসীন ইসলাম শাওন/এমএন/জেআইএম