ফাঁকা হতে শুরু করেছে রাজধানী। পরিবারের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন রাজধানীবাসী। এবার দীর্ঘ ছুটি মেলায় বাড়তি উৎসাহ বিরাজ করছে ঘরমুখো যাত্রীদের মধ্যে।
এদিকে দীর্ঘ ছুটিতে মানুষ ঢাকা ছাড়তে শুরু করলেও বাস কাউন্টারগুলোতে তেমন চাপ নেই বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনো বিভিন্ন গন্তব্যের অনেক বাসের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান তারা।
যাত্রীদেরও অনেকে কাউন্টারে এসে ভোগান্তি ছাড়া টিকিট পেয়ে আনন্দ প্রকাশ করছেন।
শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাবতলী বাস টার্মিনালে মোটামুটি যাত্রীর চাপ থাকলেও অন্যান্য বছরের মতো উপচেপড়ার ভিড় নেই। অধিকাংশ কাউন্টারের সামনেই তেমন ভিড় দেখা যায়নি। কাউন্টারে টিকিট বিক্রির দ্বায়িত্বপ্রাপ্তরা যাত্রী খুঁজছেন। কেউ কেউ আবার হ্যান্ড মাইকেও যাত্রী খুঁজতে ব্যস্ত।
এদিকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি দেখা গেছে। সেই সঙ্গে গাবতলী সড়কের যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। পাশাপাশি টহল পুলিশ ও কন্ট্রোল রুমে পুলিশকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।
বরিশাল রুটের সাকুরা পরিবহনের ম্যানেজার মো. ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে ১০ মিনিট দাঁড়ালেই বুঝতে পারবেন যাত্রীর চাপ কেমন। পদ্মা সেতু চালুু হওয়ার পর থেকে গাবতলীতে টোটালি যাত্রী আসে না। এখনো চিল্লায়া টিকিট বিক্রি করছি। ছিটও খালি আছে।’
তিনি বলেন, ‘আগে (পদ্মা সেতু চালুর আগে) যেখানে সারাদিনে গাবতলী থেকে ৫০টি ট্রিপ ছিল, সেখানে এখন সারাদিনে আছে ৭টি ট্রিপ। এখন গাড়ির সংখ্যা কমার কারণে টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এই ৭টি গাড়ির টিকিট তো এমনি সাধারণ সময়েও ফুল বিক্রি হয়ে যায়।’
আরও পড়ুন
- উত্তরের পথে নেই যানজট, স্বস্তিতে যাত্রীরা
- ২৪ ঘণ্টায় মোটরসাইকেল থেকে টোল আদায় ৩ লাখ ৯ হাজার
- পাটুরিয়ায় যাত্রীদের চাপ বাড়লেও নেই ভোগান্তি
সাধারণ সময়ের তুলনায়ও বর্তমানে গাড়ির সংখ্যা কম জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণ সময়ের আমাদের গাড়ি যেতো ১২টি, বর্তমানে যাচ্ছে ৭টি। নরমাল সময়ে আমাদের ভাড়া ৬৫০ টাকা। আবার ওইদিক থেকেও একই ভাড়ায় যাত্রী নিয়ে গাড়ি আসে। মোট হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। কিন্তু এখন টিকিটের দাম ৭৫০ টাকা। কিন্তু ওইদিক থেকে গাড়ি আসছে ফাঁকা। তেলের দামও হচ্ছে না। তাহলে কোম্পানি কি লস দিয়ে গাড়ি চালাবে? অধিকাংশ যাত্রী সায়েদাবাদ থেকে চলে যাচ্ছে। কারণ ওই দিক দিয়ে যেতে সময় লাগছে ৪/৫ ঘণ্টা। কিন্তু এদিক দিয়ে ৮/১০ ঘণ্টা সময় লাগে। টাকা একটু বেশি লাগলেও সময় কম লাগছে।’
কুষ্টিয়া রুটে চলাচলকারী সনি পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার লিটন বলেন, ‘যাত্রীর চাপ নেই খুব একটা। তবে স্বাভাবিকভাবে গাড়িগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। সব আসনে যাত্রী আছে, কোনো আসন ফাঁকা যাচ্ছে না। তবে গত দুই-তিন দিনের তুলনায় আজ কিছুটা চাপ আছে। কিন্তু ঈদের বাজার অনুযায়ী চাপ নেই।’
সকাল থেকে কতগুলো গাড়ি ছেড়ে গেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে আমাদের ২/৩টা গাড়ি ছেড়ে গেছে।’
ঢাকা থেকে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা রুটে চলাচলকারী এমএম পরিবহনের টিকিট বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘আগের দুই দিনের তুলনায় কিছুটা চাপ বাড়ছে, তবে অতিরিক্ত চাপ যেটা সেটা নেই। সাধারণ সময়ের মতোই গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে মাত্র একটা গাড়ি ছেড়ে গেছে। সেই আগের দিনগুলোর মতো হলে এই সময়ে ৮-১০টা গাড়ি ছেড়ে যেতো।’
যশোর-সাতক্ষীরা রুটে চলাচলকারী এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘গাড়িতে ছিট নেই, আবার যাত্রীও নেই (অতিরিক্ত)। যাত্রীর চাপ আর গাড়ির সংখ্যা সমান সমান। প্রতি বছর ওভার যে যাত্রী হয়, সেই ওভার যাত্রী নেই এবার। আগে যেমন যাত্রীর চাপে অতিরিক্ত গাড়ি দিতে হতো, এখন সেটা নেই। যাত্রীও কম, গাড়িও কম। তবে গত ২-৩ দিনের তুলনায় আজ মোটামুটি কিছুটা চাপ আছে।’
সামনে যাত্রীর চাপ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগামীকাল যাত্রীর একটা চাপ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই একটা দিনই চাপ হবে।’ বিভিন্ন রুটের বিভিন্ন বাসে এখনো টিকিট আছে বলেও জানান তিনি।
আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সকাল থেকে ৮-১০টা গাড়ি ছেড়ে গেছে পদ্মা সেতু দিয়ে। এর মধ্যে একটা গাড়ি গাবতলী থেকে ছেড়ে গেছে। বাকিগুলো সব সায়েদাবাদ থেকে ছেড়েছে।’
চুয়াডাঙ্গাগামী যাত্রী আবুল হোসেন বলেন, ‘আগে থেকে টিকিট কাটিনি। ভেবেছিলাম ভেঙে ভেঙে চলে যাবো। কিন্তু কাউন্টারে এসে টিকিট পেয়েছি, তাই এখন সরাসরি যাবো। টিকিট না পেলে লোকালে ঘাটে চলে যেতাম।’
মেহেরপুরের যাত্রী মো. গনি বলেন, ‘গতকাল এসে টিকিট কেটে গেছি। টিকিট পেতেও কোনো সমস্যা হয়নি। ভেবেছিলাম আজ এলে টিকিট পাবো না, তাই গতকালই কেটেছি। কিন্তু আজ এসে দেখছি টিকিট আছে। বিভিন্ন গাড়িতে যাত্রীও খুঁজছে। এখনো অনেক গাড়িতে সিট আছে।’
এবার ঈদে ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা ৯ দিনের ছুটি পেয়েছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) বা ১ এপ্রিল (মঙ্গলবার) মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে ৩১ মার্চ ঈদুল ফিতর ধরে ঈদের ছুটি নির্ধারণ করে রেখেছে সরকার। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ীও ৩১ মার্চ ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
কেআর/ইএ/এমএস