উর্দু ভাষার মানুষ হয়েও তিনি আজ বাংলা গানের কিংবদন্তি

সংগীতশিল্পী বশির আহমদ। ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘ডেকো না আমারে তুমি’, ‘ওগো প্রিয়তমা’, ‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’, ‘সবাই আমায় প্রেমিক বলে’, ‘ঘুম শুধু ছিল দুটি নয়নে’, ‘যারে যাবি যদি যা’, ‘কাঁকন কার বাজে রুমঝুম’, ‘আমাকে যদি গো তুমি’, ‘ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বলো না’- ইত্যাদি কালজয়ী গানগুলো তাকে কিংবদন্তি করে রেখেছে। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল। কিন্তু আজও তিনি উজ্জ্বল তার শ্রোতা-অনুরাগীদের অন্তরে। আজ এই কৃতি সংগীতশিল্পীর ৮৬তম জন্মদিন। দিনটি এলেই তাকে আরও একবার মনে পড়ে ভক্তদের। মনের মধ্যে বেজে ওঠে তার গানগুলো। আরও পড়ুনআজই শেষ দিন, যেভাবে ভোট দেবেন বাংলাদেশের মিথিলাকেশাকিব খানের ছবিতে তানজিন তিশার ফার্স্টলুক প্রকাশ ১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন বশির আহমেদ। উর্দু ছিল তার পরিবারের ভাষা। তবে ঘটনাচক্রে ঢাকায় এসে তিনি এখানেই স্থায়ী হন। বাংলাকেই করে নেন আপন। গানের হাতেখড়ি ওস্তাদ বেলায়েত হোসেন খানের কাছে। গানের জন্য চোদ্দ-পনেরো বছর বয়সে পাড়ি জমান ১৫ বছর বয়সেই পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ’র কা

উর্দু ভাষার মানুষ হয়েও তিনি আজ বাংলা গানের কিংবদন্তি

সংগীতশিল্পী বশির আহমদ। ‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘ডেকো না আমারে তুমি’, ‘ওগো প্রিয়তমা’, ‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’, ‘সবাই আমায় প্রেমিক বলে’, ‘ঘুম শুধু ছিল দুটি নয়নে’, ‘যারে যাবি যদি যা’, ‘কাঁকন কার বাজে রুমঝুম’, ‘আমাকে যদি গো তুমি’, ‘ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বলো না’- ইত্যাদি কালজয়ী গানগুলো তাকে কিংবদন্তি করে রেখেছে। তিনি প্রয়াত হয়েছেন ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল। কিন্তু আজও তিনি উজ্জ্বল তার শ্রোতা-অনুরাগীদের অন্তরে।

আজ এই কৃতি সংগীতশিল্পীর ৮৬তম জন্মদিন। দিনটি এলেই তাকে আরও একবার মনে পড়ে ভক্তদের। মনের মধ্যে বেজে ওঠে তার গানগুলো।

আরও পড়ুন
আজই শেষ দিন, যেভাবে ভোট দেবেন বাংলাদেশের মিথিলাকে
শাকিব খানের ছবিতে তানজিন তিশার ফার্স্টলুক প্রকাশ

১৯৩৯ সালের ১৯ নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন বশির আহমেদ। উর্দু ছিল তার পরিবারের ভাষা। তবে ঘটনাচক্রে ঢাকায় এসে তিনি এখানেই স্থায়ী হন। বাংলাকেই করে নেন আপন। গানের হাতেখড়ি ওস্তাদ বেলায়েত হোসেন খানের কাছে। গানের জন্য চোদ্দ-পনেরো বছর বয়সে পাড়ি জমান ১৫ বছর বয়সেই পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। সেখানে উপমহাদেশের প্রখ্যাত ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলী খাঁ’র কাছে তালিম নেন তিনি।

ক্যারিয়ারজুড়ে নিয়মিতই গেয়েছেন রেডিও-টেলিভিশনে। তবে তাকে জনপ্রিয়তা এনে দেয় চলচ্চিত্রের গান।

ষাটের দশকে চিত্রনির্মাতা মুস্তাফিজের ‘সাগর’ ছবির জন্য গান লেখার মধ্য দিয়ে গীতিকার হিসেবে রুপালি জগতে পা দিয়েছিলেন বশির আহমেদ। সেই সঙ্গে শুরু হয় সুর করা এবং গান গাওয়াও। তার স্ত্রী মীনা বশিরও এ দেশের প্রখ্যাত একজন শিল্পী ছিলেন। তাদের সেই লেগেসি এখনো ধরে রেখেছেন ছেলে মেয়েরা।

১৯৬০ সালে তালাত মাহমুদের সঙ্গে ঢাকা আসেন গান গাওয়ার জন্যে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তারা একসঙ্গে স্টেজে গান করেন। তারপর ফিরে গেলেও গানের টানেই কিছুদিন পরপর ঢাকা আসতেন বশির আহমেদ। এই আসা-যাওয়ার মধ্যে এখানে উর্দু চলচ্চিত্র ‘তালাশ’-এ (১৯৬৩) গান গাওয়ার সুযোগ পান।

এদেশে তৎকালীন সময়ে উর্দু চলচ্চিত্র নির্মিত হতো নিয়মিত। আর উর্দু ছবির গানের প্রয়োজনেই কদর বাড়তে শুরু করলো বশির আহমেদের। তার কণ্ঠটিও ছিল উর্দু গানের। ‘তালাশ’ ছবিতে নায়ক রহমানের ঠোঁটের সবগুলো গান গেয়েছিলেন তিনি। একটি গান ছিল-‘কুছ আপনি কাহিয়ে, কুছ মেরি সুনিয়ে’। এরপর জহির রায়হানের উর্দু ছবি ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪)-এ গান করেন।

বশির আহমেদ উর্দুভাষার গীতিকার, সুরকার এবং শিল্পীও। উর্দু চলচ্চিত্র ‘কারওয়াঁ’ (১৯৬৪)-তে তার নিজের লেখা ও সুরে ‘যব তুম আকেলে হোগে হাম ইয়াদ আয়েঙ্গে’ জনপ্রিয় হয়। অন্য আরও উর্দু চলচ্চিত্রে কাজ করলেও ‘দরশন’ (১৯৬৭) তাকে নিয়ে যায় খ্যাতির শীর্ষে। এই চলচ্চিত্রের গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি। বাংলা চলচ্চিত্রেও সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন তারপরেই। বাকিটুকু ইতিহাস।

বশির আহমেদ ছিলেন একাধারে সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক। ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ ছবিতে গানের জন্য ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে। পাশাপাশি দেশের শিল্প-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক। এছাড়াও নানা পুরস্কারসহ অনেক স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন গুণী এই শিল্পী।

পরিতাপের বিষয় হলো, গানের এই কিংবদন্তিকে নিয়ে তেমন কোনো আয়োজন এখনো চোখে পড়েনি সংগীতাঙ্গন কিংবা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে।

এলআইএ/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow