সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বাংলাদেশে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার খরচের অধিকাংশ মানুষের পকেট থেকে মেটাতে হয়। অথচ অন্য দেশগুলোর তুলনায় জিডিপিতে স্বাস্থ্যখাতের বরাদ্দ সবচেয়ে কম।
অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটের মধ্যে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। কারণ, সম্পদ বিক্রি এবং ঋণ করে স্বাস্থ্যসেবার খরচ বহন করতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে দেশের মানুষ। স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে প্রতিবছর ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দরিদ্র হচ্ছে।
স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বহন করতে সঞ্চয় ভাঙে, ঋণ এবং সম্পদ বিক্রি করেন অধিকাংশ মানুষ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণ করে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বহন করতে হয় দেশের ২৬ দশমিক ৮৩ শতাংশ মানুষকে। ৩২ দশমিক ৫৮ শতাংশ খরচ করে সঞ্চয় ভেঙে। বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে সহায়তা নেয় ১৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ আর ১৫ শতাংশ ক্ষেত্রে সম্পদ বিক্রি করে দিতে হয়।
আরও পড়ুন
সোমবার (১৫ জুলাই) বিআইডিএসের সেমিনারে প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংস্থাটির গবেষক ড. আব্দুর রাজ্জাক সরকার। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাস্থ্যসেবা মেটাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খরচ করতে হয় বাংলাদেশে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার ৭৩ শতাংশ ব্যয় মানুষের পকেট থেকে মেটাতে হয়। শুধুমাত্র আফগানিস্তানে এ খরচ বাংলাদেশের থেকে বেশি ৭৭ শতাংশ। অন্যদেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানে ৫৭ শতাংশ, নেপালে ৫১ শতাংশ, ভারতে ৪৯ শতাংশ, ভুটানে ১৮ শতাংশ এবং মালদ্বিপে খরচ হয় ১৪ শতাংশ।
অন্য দেশগুলোর তুলনায় খরচ বেশি হলেও জিডিপিতে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ সবচেয়ে কম। জিডিপিতে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মাত্র ২ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যেখানে আফগানিস্তানে বরাদ্দ ২১ শতাংশ, মালদ্বীপে ১০ শতাংশ।
এ কারণে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। ফলে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় ৬১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দরিদ্র হতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে মোট দারিদ্র্যতার হার ২২ শতাংশের ওপরে চলে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, একটি পরিবারের একজন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হলে গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়। আর এ খরচের প্রায় ২৫ শতাংশ ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়। হাসপাতালে ভর্তি না হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে ৫৪ শতাংশ ওষুধের পেছনে ব্যয় হয়। আর এসব ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে আর্থিক সংকটে পড়তে হয় রোগী ও তাদের পরিবারকে।
প্রতিবেদনে মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় কমাতে ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা প্রণয়নের পরামর্শ দেন বিআইডিএসের গবেষক ড. রাজ্জাক। গত কয়েক বছর ধরে দেশে ওষুধের দাম বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন চালু করার বিষয়টি আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। এ বিষয়টি আমি শেষ করে যেতে পারবো বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, অনেক অবৈধ ফার্মেসি আছে। এসব বিষয় দেখার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ডিজিকে আরও শক্ত হতে হবে। আমরা হেলথ ইন্স্যুরেন্স নিয়ে কাজ করছি। রাতারাতি সমাধান সম্ভব নয়। তবে আমি গ্রামগঞ্জে স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যাচ্ছি।
এমওএস/এমকেআর