ঋণ খেলাপি কমাতে আংশিক অবলোপনে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকের হিসাব বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে এবার আংশিক ঋণ অবলোপনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে একটি ঋণ খেলাপি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই তা অবলোপনের সুযোগ ছিল, যা আগে ছিল দুই বছর। তবে অবলোপনের কমপক্ষে ১০ কার্যদিবস আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বজায় থাকবে। পূর্বের নীতিমালায় কোনো ঋণ আংশিক অবলোপনের সুযোগ ছিল না। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আংশিক অবলোপনের সুযোগ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিজনক ঋণগুলো স্থিতিপত্রে থেকে যেত, ফলে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট অযথা স্ফীত দেখাত এবং সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ত। নতুন নীতিমালার ফলে ভবিষ্যতে আদায়-অযোগ্য অংশ ঋণ হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মন্দ ও ক্ষতিজনক’ শ্রেণিভুক্ত এবং আদায়ের সম্ভাবনা কম এমন ঋণের অনাদায়ি অংশ আংশিক অবলোপন করা যাবে। তবে জামানত-সুরক্ষিত অংশকে অবশ্যই আদায়যোগ্য হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে পেশাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জামানতের বাজারমূল্য পুনর্মূল্যায়ন করা যাবে। নীতিমালায় আরও বলা হয়, আংশিক অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে স

ঋণ খেলাপি কমাতে আংশিক অবলোপনে আরও ছাড় দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

খেলাপি ঋণ কমানো ও ব্যাংকের হিসাব বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপনের লক্ষ্যে এবার আংশিক ঋণ অবলোপনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে একটি ঋণ খেলাপি হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যেই তা অবলোপনের সুযোগ ছিল, যা আগে ছিল দুই বছর। তবে অবলোপনের কমপক্ষে ১০ কার্যদিবস আগে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা বজায় থাকবে। পূর্বের নীতিমালায় কোনো ঋণ আংশিক অবলোপনের সুযোগ ছিল না।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) জারি করা নতুন প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আংশিক অবলোপনের সুযোগ না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিজনক ঋণগুলো স্থিতিপত্রে থেকে যেত, ফলে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট অযথা স্ফীত দেখাত এবং সম্পদের প্রকৃত মান নির্ধারণ কঠিন হয়ে পড়ত। নতুন নীতিমালার ফলে ভবিষ্যতে আদায়-অযোগ্য অংশ ঋণ হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মন্দ ও ক্ষতিজনক’ শ্রেণিভুক্ত এবং আদায়ের সম্ভাবনা কম এমন ঋণের অনাদায়ি অংশ আংশিক অবলোপন করা যাবে। তবে জামানত-সুরক্ষিত অংশকে অবশ্যই আদায়যোগ্য হিসেবে নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে পেশাদার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জামানতের বাজারমূল্য পুনর্মূল্যায়ন করা যাবে।

নীতিমালায় আরও বলা হয়, আংশিক অবলোপনের ক্ষেত্রে প্রথমে সুদের অংশ বাদ দিতে হবে। অনারোপিত সুদ আলাদা হিসাবে দেখাতে হবে। গ্রাহকের কাছ থেকে জামানত ছাড়া আদায় হওয়া অর্থ আগে অবলোপিত অংশে সমন্বয় হবে। পরে অতিরিক্ত টাকা থাকলে তা স্থিতিপত্রে থাকা বকেয়া ঋণে সমন্বয় হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, অবলোপনের পরও ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা চলবে এবং প্রয়োজনে পুনঃতফসিল বা এক্সিট সুবিধাও দেওয়া যেতে পারে। ব্যাসেল নির্দেশনা ও আইএফআরএস অনুসারে আংশিক ঋণ অবলোপন বিশ্বব্যাপী একটি প্রচলিত পদ্ধতি—ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কাসহ বহু দেশেই এ ব্যবস্থা রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আশা, নতুন নীতিমালা কার্যকর হওয়ায় ব্যাংকিং খাতের নন-পরফর্মিং ঋণের প্রকৃত চিত্র আরও স্বচ্ছ হবে, সম্পদের গুণগত মান উন্নত হবে এবং নীতি-নির্ধারণ সহজ হবে।

মন্দমানের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন রেখে ব্যাংকগুলো অবলোপনের মাধ্যমে খেলাপির পরিমাণ কম দেখাতে পারে। ২০২৪ সালের শেষে অবলোপিত ঋণের স্থিতি ছিল ৬২,৩২৭ কোটি টাকা। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা নির্দেশনায় টানা দুই বছর মন্দ ও ক্ষতিজনক শ্রেণিতে থাকা ঋণ অবলোপনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী নির্দেশনায় দুই বছরের শর্ত তুলে নিয়ে ৩০ দিন খেলাপি থাকলেই নোটিশ দিয়ে অবলোপনের সুযোগ তৈরি করা হয়। নতুন নীতিমালায় সেই নোটিশের সময়ও কমিয়ে আনা হলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংক খাতে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৪৪.২৬ শতাংশ। এর মধ্যে পুনঃতফসিল করা অনাদায়ি ঋণ ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা, নিয়মিত খেলাপির পরিমাণ ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা এবং অবলোপিত ঋণ ৬২ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা।

ইএআর/এমআইএইচএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow