ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ কেন অসুস্থ হয়ে পড়ে? যা বলছে বিজ্ঞান

শীতের কুয়াশা বা গরমের তীব্রতা, ঋতু বদলের প্রতিটি সময় আমাদের জীবনে নিয়ে আসে নতুন রং, নতুন আবহ। কিন্তু একই সঙ্গে আসে এক ধরনের অস্বস্তি। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম, তাপমাত্রার এই পালাবদল হলেই যেন শরীরটা অকারণে দুর্বল লাগে। হঠাৎ সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর বা অ্যালার্জির উপদ্রব বাড়ে। যেন ঋতু পরিবর্তন মানেই অসুস্থতার মৌসুম! কিন্তু প্রশ্ন হলো, আবহাওয়ার পরিবর্তন কি সত্যিই আমাদের অসুস্থ করে? নাকি এর পেছনে আছে আরও গভীর বৈজ্ঞানিক কারণ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা শুধু ঠান্ডা লাগা বা গরম লাগার নয়; বরং পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ভাইরাস, অ্যালার্জেন ও আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, সেটাই আমাদের অসুস্থতার মূল কারণ। তাপমাত্রা কমলেই কেন বাড়ে সর্দি-কাশি? আমাদের প্রচলিত ধারণা, ঠান্ডা পড়লে ঠান্ডা লাগে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠান্ডা আবহাওয়া সরাসরি সর্দি-কাশির কারণ নয়। বরং তাপমাত্রা কমে গেলে পরিবেশে কিছু ক্ষতিকর ভাইরাস দ্রুত বাড়তে থাকে। রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস— এই ভাইরাসগুলোই সাধারণ সর্দি-কাশির প্রধান কারণ। বসন্ত বা শরতের মতো তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়ায় এরা আরও

ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু মানুষ কেন অসুস্থ হয়ে পড়ে? যা বলছে বিজ্ঞান

শীতের কুয়াশা বা গরমের তীব্রতা, ঋতু বদলের প্রতিটি সময় আমাদের জীবনে নিয়ে আসে নতুন রং, নতুন আবহ। কিন্তু একই সঙ্গে আসে এক ধরনের অস্বস্তি। অনেকেই লক্ষ্য করেছেন, গরম থেকে ঠান্ডা বা ঠান্ডা থেকে গরম, তাপমাত্রার এই পালাবদল হলেই যেন শরীরটা অকারণে দুর্বল লাগে। হঠাৎ সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, জ্বর বা অ্যালার্জির উপদ্রব বাড়ে। যেন ঋতু পরিবর্তন মানেই অসুস্থতার মৌসুম!

কিন্তু প্রশ্ন হলো, আবহাওয়ার পরিবর্তন কি সত্যিই আমাদের অসুস্থ করে? নাকি এর পেছনে আছে আরও গভীর বৈজ্ঞানিক কারণ?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টা শুধু ঠান্ডা লাগা বা গরম লাগার নয়; বরং পরিবর্তিত আবহাওয়ায় ভাইরাস, অ্যালার্জেন ও আমাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়, সেটাই আমাদের অসুস্থতার মূল কারণ।

তাপমাত্রা কমলেই কেন বাড়ে সর্দি-কাশি?

আমাদের প্রচলিত ধারণা, ঠান্ডা পড়লে ঠান্ডা লাগে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঠান্ডা আবহাওয়া সরাসরি সর্দি-কাশির কারণ নয়। বরং তাপমাত্রা কমে গেলে পরিবেশে কিছু ক্ষতিকর ভাইরাস দ্রুত বাড়তে থাকে।

রাইনোভাইরাস, করোনাভাইরাস— এই ভাইরাসগুলোই সাধারণ সর্দি-কাশির প্রধান কারণ। বসন্ত বা শরতের মতো তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়ায় এরা আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং সহজে ছড়ায়। তাই এই সময় অসুস্থতার প্রধান কারণ হলো ভাইরাসের বাড়তি সক্রিয়তা, ঠান্ডা নয়।

ফ্লু কেন শীতে বেশি ছড়ায়?

সাধারণ সর্দি-কাশির মতোই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রেও পরিবেশ কাজ করে। বাতাস যখন ঠান্ডা ও শুকনা থাকে, তখন ফ্লু ভাইরাস সবচেয়ে সহজে বংশবৃদ্ধি করে এবং দ্রুত ছড়ায়। এ কারণেই শীতকালে ফ্লু বা জ্বরের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে যায়।

গরমে কেন বেশি সমস্যা হয়?

গরমে অসুস্থ হওয়ার কারণ একটু ভিন্ন। এ সময়ে যারা ঋতুভিত্তিক অ্যালার্জিতে ভোগে, পরাগ, ঘাস বা ধুলার সংস্পর্শে এলে তাদের হাঁচি-কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা চোখ চুলকানো শুরু হয়। এই অ্যালার্জির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি সিস্টেম খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে এরা অন্যান্য ভাইরাস দ্বারা দ্রুত আক্রান্ত হয়। অনেকে এদের অ্যালার্জিকে ভুল করে সাধারণ ঠান্ডা বা জ্বর ভেবে বসে।

বারবার অসুস্থ হওয়ার কারণ

গবেষণায় দেখা গেছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বছরে গড়ে দুই থেকে চারবার এবং শিশুরা পাঁচ থেকে সাতবার ঠান্ডায় ভোগে। এ সংখ্যা প্রায় এক বছরে যতবার ঋতু পরিবর্তন হয়, তার সঙ্গে মিলে যায়। ঋতু পরিবর্তনের সময় প্রায় ২০০ রকমের ভাইরাস বেড়ে যায় চারপাশের পরিবেশে। মূলত এই ভাইরাস ও অ্যালার্জেনগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণেই মানুষ বারবার অসুস্থ হয়।

তাহলে করণীয় কী?

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকতে হলে প্রথম ও প্রধান কাজ হলো হাত পরিষ্কার রাখা। কারণ, সাধারণ ঠান্ডার জন্য দায়ী রাইনোভাইরাস শরীরের বাইরে প্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এমনকি দরজার হাতল বা বাসাবাড়ির সুইচের মতো স্পর্শযোগ্য পৃষ্ঠে এই ভাইরাস ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে।

যেহেতু ভাইরাসগুলো হাত ও বিভিন্ন জিনিসের মাধ্যমে ছড়ায়, তাই ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা জরুরি। চোখ, নাক বা মুখ বারবার ছোঁয়া থেকে বিরত থাকা। কারণ, এগুলো ভাইরাস প্রবেশের প্রধান রাস্তা। পাশাপাশি, শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা ইমিউনিটি বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিতে হয় এ সময়। পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ খাবার এবং নিয়মিত শরীরচর্চা করলে শরীর ভেতর থেকে শক্তিশালী হয়।

ঋতু বদলের সময় হালকা ও গরম দুই ধরনের পোশাকই সঙ্গে রাখা উচিত। এ ছাড়া বেশি করে পানি পান করতে হবে। কারণ, পানি পান করলে শ্বাসতন্ত্র আর্দ্র থাকে, যা ভাইরাসকে আটকে দিতে সাহায্য করে। আর যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে তা নিয়ন্ত্রণে রাখো।

সূত্র : লাইভ সায়েন্স, হেলথ ইনফরমেশন সেন্টার

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow