এই শরীর নিয়ে কোথায় যাবেন শহীজন

2 weeks ago 14

তিস্তা নদী যখন রেগে যায় তখন নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনে নেমে আসে হাহাকার। কয়েক মাস ঘুমন্ত থাকা এ নদী মুহূর্তেই গিলে খায় ঘরবাড়ি, আবাদি জমি আর মানুষের শেষ সম্বল।

তিস্তার এ ভাঙনের শিকার লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের হরিণছড়া এলাকার শহীজন বেওয়া (৮৩)। প্রায় ১৫ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। দাম্পত্য জীবনে চার ছেলের মধ্যে একজন মারা গেছেন, বাকিরা জীবিকার তাগিদে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সে তিস্তার তীরে জীবনের শেষ আশ্রয় গড়েছিলেন শহীজন। কিন্তু সাম্প্রতিক ভাঙনে সেই আশ্রয়ের ভিটেমাটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

এই শরীর নিয়ে কোথায় যাবেন শহীজন

নদীর পাড়ে বসে এখন দিন-রাত কাঁদেন তিনি। সাংবাদিকরা ভাঙনের খবর নিতে গেলে কাঁপা হাতে দেখাচ্ছেন শেষ সম্বল, একটি ভাঙা ট্রাঙ্ক আর কিছু ভাঙাচোরা আসবাবপত্র। প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছেন, এই শরীর নিয়ে কোথায় যাবেন, কোথায় নতুন আশ্রয় গড়বেন?

স্থানীয়রা জানান, শহীজন দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বয়স্ক ভাতা দিয়ে কোনোমতে জীবিকা চালিয়ে আসছিলেন। এখন ঘরহারা হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।

এলাকাবাসীর দাবি, সরকার যদি দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতো, তাহলে অন্তত শেষ জীবনে শহীজন মাথা গোজার ঠাঁই পেতেন।

শহীজন বেওয়া বলেন, ‘সব শেষ হয়ে গেছে বাবা, সব শেষ। বাঁচবার মতো আর কোনো আশ্রয় থাকলো না। এই বয়সে কীভাবে নতুন করে আবার বাড়ি বানাবো, কে দিবে আমাকে জমি? আমার কেউ নেই। চার সন্তানের মধ্যে একজন মারা গেছে। তিন সন্তান কুমিল্লায় দিনমজুরের কাজ করে। তাদেরও কোনো সামর্থ্য নেই।’

এই শরীর নিয়ে কোথায় যাবেন শহীজন

স্থানীয় রুবেল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই শহীজন বেওয়ার বাসা। আমরাও অনেক কয়বার এই ভাঙনের শিকার হয়েছি। শহীজন বেওয়া বৃদ্ধা হয়ে গেছেন। এই ভাঙনে বাড়িঘর সব ভেঙে গেছে। দিন-রাত তিনি নদীর পাশে এসে কান্নাকাটি করেন। তাকে দেখভালের কোনো মানুষও নেই, তার কোনো অর্থ সম্পদও নেই। তিস্তা নদী এই অঞ্চলের অনেক মানুষের বসতবাড়ি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা চাই সরকার যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে, সেটি যেন দ্রুত করে। আর শহীজন বেওয়াকে যেন সরকার দেখভালের দায়িত্ব নেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে। পর্যাপ্ত বরাদ্দ আছে। অতীতে যে অঞ্চলগুলো ভাঙনের কবলে পড়েছে, ভাঙন রোধ করার কারণে এবার সে জায়গাগুলোতে ভাঙন দেখা দেয়নি।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনোনীতা দাস বলেন, ভাঙন কবলিত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। এরইমধ্যে ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

এফএ/জিকেএস

Read Entire Article