এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অভিভাবকরা ‘বেপরোয়া’

2 months ago 6

করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা ঘিরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে আন্দোলনেও নামেন পরীক্ষার্থীরা। কঠোর স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় শিক্ষা বোর্ডগুলো। সে অনুযায়ী আজ (২৬ জুন) সকাল ১০টা থেকে এ পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত নির্দেশনাগুলোর মধ্যে শিক্ষার্থীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। আর কেন্দ্রের আশপাশে ভিড় না করতে অভিভাবকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। অধিকাংশ শিক্ষার্থী এ স্বাস্থ্যবিধি মানলেও তা উপেক্ষা করছেন অভিভাবকরা। তারা কেন্দ্রের প্রবেশপথে জটলা করে দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে চলছে ধাক্কাধাক্কি।

এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনে রাজধানীর সরকারি বাঙলা কলেজ, ভাসানটেক সরকারি কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, ঢাকা স্টেট কলেজসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অভিভাবকরা ‘বেপরোয়া’

রাজধানীতে বড় কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম তেজগাঁও কলেজ। এ কেন্দ্রে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছেন। সকাল ৮টা থেকে কলেজটির প্রবেশপথে জটলা লেগে যায়। অভিভাবকরা প্রবেশপথে গাদাগাদি করে দাঁড়াতে শুরু করেন। পুলিশ সদস্যরা তাদের সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরীক্ষা শুরুর পরও অনেক অভিভাবক প্রবেশপথে সন্তানের জন্য অপেক্ষা করছেন।

মাজেদা আক্তার নামে এক অভিভাবককে শুরু থেকেই ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তিনি মেয়েকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে এসেছেন। প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেয়েটা পরীক্ষা দিতে গেছে। শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশন হচ্ছে। ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছি। ভয় পাচ্ছি ঠিকমতো তিন ঘণ্টা লিখে বের হবে কি না? যদি কোনো কারণে শিক্ষক খাতা নিয়ে নেয় বা কিছু হয়, সেজন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছি।’

তার পাশেই দাঁড়ানো শিউলি বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে বলে গেছে যে, মা তুমি এখানেই থাকবা। কোথাও যাবা না। সেজন্য আমি এখানেই আছি। ও বের না হওয়া পর্যন্ত থাকবো।’

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অভিভাবকরা ‘বেপরোয়া’

সরকারি বাঙলা কলেজের সামনেও একই চিত্র দেখা যায়। এ কেন্দ্রে শিক্ষা উপদেষ্টার পরিদর্শনে আসার কথা। সেজন্য পুলিশ ও আনসার সদস্যরা অভিভাবকদের কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলেও তারা ঘুরেফিরে কেন্দ্রের প্রবেশপথে চলে যাচ্ছেন। একই চিত্র দেখা যায় ঢাকা স্টেট কলেজ গেটেও।

সরকারি বাঙলা কলেজের ফটকে দায়িত্বরত আনসার সদস্য হাবিবুল্লাহ খান বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। কিন্তু অভিভাবকরা সরছেন না। এখানে তো বলপ্রয়োগ করা যাবে না। বলপ্রয়োগ করলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হবে।’

এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটক খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা প্রবেশের সময় মাস্ক পরে প্রবেশ করেন। কারও কারও মাস্ক না থাকলে কেন্দ্রগুলোর ফটক থেকে মাস্ক দেওয়া হয়। এছাড়া ফটকে দাঁড়িয়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে স্যানিটাইজার দিতে দেখা যায় দায়িত্বরত কর্মচারীদের।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা স্বাস্থ্যবিধি মানলেও অভিভাবকরা ‘বেপরোয়া’

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সূত্র জানায়, এবার ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারাদেশে এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ১২ লাখ ৫১ হাজার ১১১ জন পরীক্ষার্থী। দেশের ২ হাজার ৭৯৭টি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

সময়সূচি অনুযায়ী—প্রথম দিনে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ হাজার ৬০৫টি কেন্দ্রে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মাদরাসা বোর্ডের অধীন ৪৫৯টি কেন্দ্রে আলিমের কোরআন মাজিদ এবং কারিগরি বোর্ডের অধীন ৭৩৩ কেন্দ্রে এইচএসসি (বিএম/বিএমটি) পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। সব বোর্ডের প্রথম দিনের পরীক্ষা সকাল ১০টায় শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে দুপুর ১টায়।

এএএইচ/এমআরএম/এএসএম

Read Entire Article