‘এক পায়ে পাড়া দিয়ে, আরেক পা টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। আমার শ্বশুরবাড়ি সুনামগঞ্জ।’ গত ১১ আগস্ট প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে অনুষ্ঠিত মাসিক সমন্বয় সভায় তাহিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে এমনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হাওর ভাতা না পেয়ে অনেক শিক্ষকের দেওয়া ফেসবুকে পোস্ট ও কমেন্টসের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন হুমকি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
সভায় উপস্থিত কোনো প্রধান শিক্ষক এসব কথার কোনো প্রতিবাদ করেননি। উল্টো এসব নিয়ে আর বিক্ষুব্ধ না হতে তার কাছে অনুরোধ করেন। তবুও এ ঘটনায় ১১ জন শিক্ষককে শোকজ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা। যদিও অন্তত ৪০ জন শিক্ষক এসব নিয়ে পোস্ট ও কমেন্টস করেন।
এ ঘটনায় বুধবার (২০ আগস্ট) সহকারী শিক্ষক সমিতির উপজেলা নেতারা শিক্ষা অফিসার কার্যালয়ে গিয়ে প্রতিবাদ করেন।
জানা গেছে, হাওর ভাতা নিয়ে শিক্ষকদের ফেসবুক পোস্ট ও মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গত ১১ আগস্ট মাসিক সভায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়া প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ ও হুমকি স্বরূপ নানা কথা বলেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘এক পায়ে পা রেখে অন্য পা টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলবো। আমার শ্বশুরবাড়ি সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। বড় বড় নেতাদের সঙ্গে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি কি আপনাদের মামা-চাচা লাগি। তবে সুনামগঞ্জের জামাই হিসেবে আপনাদের কী লাগি সেটা আর বললাম না।’
এদিকে এসব মন্তব্যে সভায় উপস্থিত শিক্ষকগণ তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ না করলেও পরবর্তীতে তারা বিষয়টিকে হুমকি ও অশোভন আচরণ হিসেবে উল্লেখ করে নিজেদের মধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অনেকেই এ ধরনের মন্তব্যকে অপেশাদার মূলক আচরণ হিসেবে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পহেলা জুলাই, ২০২৫ থেকে স্থানীয় সরকারি কর্মরতরা হাওর ভাতা পাবেন। সে অনুযায়ী উপজেলার অন্যান্য দপ্তরের স্থানীয় কর্মরতরা হাওর ভাতা পান। তবে বাদ পরেন শিক্ষকরা। এতে হাওর ভাতা না পেয়ে উপজেলায় কয়েকজন শিক্ষক ফেসবুক পোস্ট ও মন্তব্য করেন। এর প্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। এমনকি তিনি নারায়ণ চক্রবর্তী নামের এক প্রধান শিক্ষককে বলেন, ‘আমি কি আপনার খালু বা মামা হই, আপনি আমাকে নিয়ে মন্তব্য করলেন।’
এদিকে হাওর ভাতা নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দাতা উপজেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমদসহ তার পোস্টে ১১ জন মন্তব্যকারীকে গত রোববার শোকজ করেন শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়া। এতে উপজেলার সহকারী শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার (২০ আগস্ট) শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শোকজের প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের মুখে সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন এই কর্মকর্তা।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ আগস্ট সমন্বয় সভায় শিক্ষা অফিসারের অশোভন আচরণের বিষয়ে নাম উল্লেখ না করে প্রধান শিক্ষকরা জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর উপজেলা শিক্ষা অফিসার সোলেমান মিয়ার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সোলেমান মিয়া কালবেলাকে বলেন, ‘আমি শিক্ষকদের কঠিনভাবে তেমন কিছু বলিনি। তারা না জেনে আমার বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট ও মন্তব্য করায় জিজ্ঞেস করছি। তারা তো আমাকে সরাসরি বলতে পারতো।’
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহন লাল দাস কালবেলাকে বলেন, ‘সমন্বয় সভায় শিক্ষা অফিসারের অশোভন আচরণের বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্তকারী টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’