জুলাই বিপ্লব, শুধু একটি-দুটি না অসংখ্য পরিবাবের স্বপ্ন ভেঙে গঠিত হয়েছে নতুন রাস্ট্র। এসবের মধ্যে একটি হলো রিয়াদের পরিবার। গত ৪ আগস্ট একটি বুলেট শুধু তার নয়, পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙেই চুরমার করে দিয়েছে। এখন তার ভবিষ্যত নিয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় মাহবুবুল হক রিয়াদ। ছোট ভাই তানভীর হোসেন রিফাত ফেনী পলিটেকনিকের ইলেক্ট্রিকালে ৪র্থ সেমিস্টারে অধ্যয়নরত। সংবাদমাধ্যম বাসসের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪ আগস্ট ফেনী শহরের মহিপালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরগুলিতে গুরুতর আহত হন রিয়াদ(২৮)। যেই বয়সে পরিবারের হাল ধরার কথা সেইসময়ে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে যোগ দিয়ে এখন এক পা অকেজো হওয়ার পথে তার।
শহরের মহিপাল চৌধুরী বাড়ী সড়কের সুরুচী বেকারী সংলগ্ন আবদুল করিম ফরায়েজী বাড়ীর বাসিন্দা মোহাম্মদ আলীর (৬৮) ছেলে রিয়াদ। মা মাবিয়া খাতুন(৬০)। রিয়াদের পিতার একটি চায়ের দোকান আছে। তা দিয়েতিনি সংসার চালান। বাবার কাজে সহযোগিতা করতেন রিয়াদ। দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসা নিয়ে এখন তিনি বাড়িতে রয়েছেন। সম্প্রতি বাড়িতে কথা হয় মাহবুবুল হক রিয়াদের সাথে।
তিনি জানান, গত ৪ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কয়েকজন সহপাঠি ও বন্ধুসহ মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।
জোহরের নামাজের আজান দেয়ার পর সড়ক বিভাগের মসজিদে জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বের হওয়ার সময় গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে পাশ্ববর্তী সার্কিট হাউজ রোডের পাসপোর্ট অফিসের দিকে চলে যান তিনি। কিন্তু রেহাই মেলেনি। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছোঁড়া গুলি তার তলপেটে বিদ্ধ হয়। ছিঁড়ে যায়নাড়িভুঁড়ি। পরেআশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
রিয়াদ আরো জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ২৯ দিন চিকিৎসা নেয়ার সময় অপারেশন হয়েছিল। এরপর সিএমএইচে চিকিৎসা দেয়া হয়। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তলপেটের ডানপাশে গুলি লেগেছে। এতে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগে। যার ফলে ডান পা অবশ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হাঁটু থেকে রান পর্যন্ত রগ টানটান হয়ে থাকে। এখনো পা ভাঁজ করে বসতে পারেন না। ডিসেম্বরের শেষের দিকে পুনরায় সিএমএইচে যেতে বলেছেন ডাক্তার।
চিকিৎসার জন্য জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তির পক্ষ থেকেও সহায়তা পেয়েছেন।
রিয়াদ জানান, ফেনী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করে ২০২১-২২ সেশনে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে চাকুরি খুঁজে না পেয়ে বাড়ির পাশে বাবার দোকানে সহযোগি হন। বছর তিনেক আগে বিয়েও করেছেন। রাইসা আফরিন নামে আড়াই বছর বয়সী তার এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
রিয়াদের বাবা মোহাম্মদ আলী জানান, রিয়াদ খুবই মেধাবী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে এখন তার এক পা অকেজো হওয়ার পথে।