একসঙ্গে ৮০ বাচ্চার জন্ম দিতে পারে সাপ

3 months ago 51

বর্তমানে আমাদের দেশে রাসেলস ভাইপারের প্রাদুর্ভাবে আতঙ্কিত সবাই। দেশের অনেক জেলায় এই সাপের কামড়ে মারা গেছেন অনেকে। তবে আমাদের দেশে শুধু রাসেলস ভাইপার নয়, আরও অনেক বিষধর সাপের বসবাস। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রয়েছে নানা প্রজাতির সাপ।

জানেন কি? সব সাপ কিন্তু ডিম দেয় না। কিছু প্রজাতির সাপ আছে যেগুলো সরাসরি বাচ্চা দেয়। একসঙ্গে একটি সাপ ৮০টির মতো বাচ্চা দিতে পারে। মূলত সাপ হয় দুই ধরনের- ওভিপ্যারোয়াস ও ভিভিপ্যারোয়াস। ওভিপ্যারোয়াস প্রজাতির সাপেরা ডিমের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম দেয়। অন্যদিকে ভিভিপ্যারোয়াস প্রজাতির সাপ সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭০ শতাংশ সাপ ওভিপ্যারোয়াস কিন্তু ৩০ শতাংশ সাপ ভিভিপ্যারোয়াস। জীবিত ও সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেওয়ার অনেক সুবিধা রয়েছে। বহু সাপ আছে যারা মা সাপের ডিম খেয়ে নেয়। আসলে বাচ্চা সাপের দেহ নিয়ন্ত্রণ করতে বাহ্যিক তাপমাত্রা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সরাসরি বাচ্চা জন্ম দিলে সেই ভয় থাকে না। ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মাবার ক্ষেত্রে প্রয়োজন উষ্ণতার। একবার ডিম পাড়ার পর সেই ডিমগুলিকে উষ্ণ স্থানে নিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য। বহু সাপ আছে যারা শীতল জলবায়ুতে বাস করে, সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের উষ্ণ রাখতে তারা সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়।

চলুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন সাপ সরাসরি বাচ্চার জন্ম দেয়-

আরও পড়ুন

রাসেলস ভাইপার
রাসেলস ভাইপার, যাকে বাংলায় অনেকেই চেনেন চন্দ্রবোড়া নামে। বর্তমানে সবার আতঙ্কের নাম এই সাপ। একটি স্ত্রী রাসেলস ভাইপারের প্রজননকাল মে থেকে নভেম্বর। তবে সবচেয়ে বেশি জুন-জুলাইয়ে। যৌনমিলনের পর স্ত্রীরা পেটে নিষিক্ত ডিম ধারণ করে রাখে এবং তা থেকে ৬ মাস পর ৬-৬৩টি বাচ্চা প্রসব করে। ১০টা বাচ্চা প্রসব করতে এদের ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

রিং নেক স্পোটিং কোবরা
রিংখাল, যা রিং নেক স্পোটিং কোবরা নামে পরিচিত। এরা অন্যান্য কোবরাদের থেকে প্রজনন অভ্যাসের ক্ষেত্রে একেবারে আলাদা। এরা খুবই আক্রমণাত্মক প্রাণী। মনে করা হয়, এদের এই বিশেষ ক্ষমতার জন্যই সরাসরি বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। পাশাপাশি এই তালিকায় রয়েছে ভাইপার এবং পিট ভাইপার। এদের প্রাকৃতিক বাসস্থান এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ এবং উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা। এই বিষাক্ত সাপেদের শীতল বায়ু পছন্দ।

ডেথ অ্যাডার
বিশ্বের সবচেয়ে বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম এই ডেথ অ্যাডার। কিন্তু এরা মোটেই আক্রমণাত্মক নয়। পাওয়া যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এদের লম্বা দাঁত আছে। এরা একবারে ৩০টি বাচ্চা সাপের জন্ম দিতে পারে।

ওয়েস্টার্ন ডায়মন্ডব্যাক র্যাটলস্নেক
বিশ্বের বৃহত্তম র্যাটলস্নেকগুলোর মধ্যে অন্যতম। এগুলো আমেরিকা ও মেক্সিকোর মরুভূমিতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত একবারে ১০-২০টি সাপের জন্ম দেয়। নিজের শরীরে ৬ মাস তাদের লালনপালন করে।

গ্রিন অ্যানাকোন্ডা
বিশ্বের বৃহত্তম সাপ। এরা প্রায় ২০ ফুট লম্বা এবং ১৫০ পাউন্ড পর্যন্ত ওজনের হতে পারে। তবে তারা বিষাক্ত নয়। দক্ষিণ আমেরিকায় পাওয়া এই সাপ। এরাও ডিম পাড়ে না বরং জীবিত বাচ্চার জন্ম দেয়।

ইস্টার্ন গার্টার সাপ
উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যায়। এগুলোও তেমন বিষাক্ত নয়। গার্টার সাপও তাদের বাচ্চাদের জন্মের পরপরই শরীর থেকে বের করে দেয়। বাচ্চা সাপেরা সাধারণত ছয় ইঞ্চি লম্বা হয়। পরে এরা ২ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

আইল্যাশ ভাইপার স্নেক
সবচেয়ে সুন্দর সাপের মধ্যে একটি প্রজাতির সাপ এটি। এগুলো দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকায় পাওয়া যায়। তবে বেশ বিষাক্ত। হলুদ, বাদামি, লাল, সবুজ রঙের এই সাপের বাচ্চারা জন্মের সময় ৭-৮ ইঞ্চি লম্বা হয়।

হলুদ পেটের সামুদ্রিক সাপ
তার জীবনের বেশিরভাগ সময় জলে কাটায়। সব সামুদ্রিক সাপের মতো এরাও বাচ্চার জন্ম দেয়। স্ত্রী সাপেরা সন্তান জন্ম দিতে অগভীর জোয়ারের জলাশয়ে যায়। ৬ মাস বাচ্চাদের নিজের শরীরে রাখে। সামুদ্রিক সাপগুলো মূলত এলাপিডে প্রজাতির। যেহেতু এরা পানিতে বাস করে তাই ডিম পাড়ার জন্য কিংবা সেই ডিম গরম রাখার জন্য উপযুক্ত কোন জায়গা নেই। তাই অধিকাংশ সামুদ্রিক সাপ সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। একমাত্র সামুদ্রিক ক্রেট ডিম পাড়ে।

গার্টার সাপ
এই সাপগুলো কলুব্রিড পরিবারের সদস্য। এরা আকর্ষণীয় প্রাণী হিসেবে পরিচিত। গার্টার সাপের অস্বাভাবিক মিলনের অভ্যাস রয়েছে। এই প্রজাতির একাধিক পুরুষ সাপ একটি স্ত্রী সাপের সঙ্গে মিলনের জন্য অগ্রসর হয়। ফলে মাত্র একটি স্ত্রী সাপের সঙ্গে ২৫টি পুরুষ সাপের প্রজনন হতে পারে। শুধু মিলনের অভ্যাসে এরা আলাদা নয়, স্ত্রী গার্টার সাপগুলো কয়েক বছর ধরে শুক্রাণু সঞ্চয় করতে সক্ষম। পরিবেশগত অবস্থা অনুকূলে থাকলেই নিষিক্ত হওয়ার জন্য শুক্রাণু মুক্ত করার মাধ্যমে তারা তাদের সন্তানদের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। স্ত্রী গার্টার সাপ ২ থেকে ৩ মাস গর্ভবতী থাকে। একসঙ্গে ৩ থেকে ৮০টি বাচ্চার জন্ম দেয় এই সাপ।

আরও পড়ুন

সূত্র: এনডিটিভি, সিবিএস নিউজ

কেএসকে/এএসএম

Read Entire Article