এখন নিশ্চয়ই সাইফউদ্দীনের কথা খুব মনে হচ্ছে হাথুরুর

3 months ago 42

‘সাইফউদ্দীনের কাছ থেকে আমরা যে ধরনের বোলিংটা চাই, সে সেভাবে জোগান দিতে পারেনি। ডেথ ওভারে সাইফউদ্দীনের ইয়র্কার লেন্থের ডেলিভারি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ইচ্ছেমত হাত খুলে ব্যাট ছোড়া থেকে দূরে রাখতে পারে, এমন বিশ্বাস থাকলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজে তিনি সে কাজটি যথাযথভাবে করে দেখাতে পারেনি। তাই তাকে বিশ্বকাপের দলে নেয়া হয়নি।’

বিশ্বকাপ স্কোয়াডে সাইফউদ্দীনের না থাকার কারণ জানিয়ে করে এমন ব্যাখ্যাই দিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন সব মিলিয়ে ২ মাস; কিন্তু তারও অনেক আগে থেকে জাতীয় দলের হেড কোচের দায়িত্ব পালন করছেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।

বোঝাই যাচ্ছে, গাজী আশরাফ লিপু, হাথুরুসিংহে এবং বিসিবি ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির কারোই আসলে যুক্তরাষ্ট্রের উইকেট সম্পর্কে একদম পরিষ্কার ধার না ছিল না। সাধারনতঃ দেখা যায়, ন্যাচারাল টার্পের তুলনায় ‘ড্রপ ইন পিচ’ একটু স্লো হয়।

বড় সেতু, ওভার ব্রিজ আর ফ্লাইওভারে যেমন আলাদা স্ল্যাব বসিয়ে দেয়া হয়, ড্রপ ইন পিচটাও ঠিক তেমনি। অন্যত্র ওপরের স্তরটা তৈরি করে পিচের ওপরে বসিয়ে দেয়া হয় সেভাবেই। তারপর যতই রোলার ব্যবহার করা হোক না কেন, ওপরের স্তরটা অন্য মাটির ও অন্য জায়গা থেকে এনে বসানো, তাই মাটির ও অন্য ন্যাচারাল টার্ফ যতটা মজবুত আর শক্ত হয়, ড্রপ ইন পিচ ততটা শক্ত হয় না। সে কারণেই একটু হলেও গতি কম থাকে।

বোঝাই যায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের থিংক ট্যাঙ্ক ও টিম ম্যানেজমেন্টেরও ধারণা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ড্রপ ইন পিচও হবে খানিক স্লো; কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না। বরং নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি ক্রিকেট স্টেডিয়ামের পিচ অনেকটাই পেস সহায়ক। এই পিচে দ্রুত গতির বোলাররা পাচ্ছেন বাড়তি সহায়তা।

বেশি না, দক্ষিণ আফ্রিকা আর শ্রীলঙ্কা এবং ভারত ও আয়ারল্যান্ড ম্যাচের স্কোরলাইন ও চালচিত্র তাই বলে দিচ্ছে। প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার অ্যানরিখ নরকিয়া রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন লঙ্কান ব্যাটারদের।

এ ফাস্ট বোলারের বিধ্বংসী বোলিংয়ের মুখে (৪/৭) মাত্র ৭৭ রানে অলআউট হয়েও পেসার থুসারা, পাথিরানা, সানাকা ও অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউজের বোলিং কার্যকরিতা দিয়ে প্রোটিয়াদের ৪ উইকেটর পতন ঘটায় লঙ্কানরা। ৬ উইকেটে জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা।

অন্যদিকে বুধবার একই মাঠে হার্দিক পান্ডিয়া (৩/২৭), আর্শদিপ সিং ও জসপ্রিত বুমরাহ (২টি করে উইকেট) এর সাঁড়াসি বোলিং আক্রমণে মাত্র ৯৬ রানে অলআউট হয় আইরিশরা। ৮ উইকেটের অনায়াস জয়ে বিশ্বকাপ শুরু করে ভারত। ওই দুই খেলার চালচিত্রই বলে দিচ্ছে নিউইয়র্কের পিচে যে দলের ফাস্ট বোলিং যত ধারালো তাদের পাল্লা তত বেশি।

নিউইয়র্কের ওই মাঠেই আগামী ১০ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে খেলা বাংলাদেশের। তার আগে আগামী ৮ জুন ডালাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচটি খেলবে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। এখন দেখার বিষয় পেস বোলিং সহায়ক পিচে বাংলাদেশের লাইনআপ কী হয়? ক’জন পেসার নিয়ে একাদশ সাজায় বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট?

স্কোয়াডেই পেসার মাত্র ৪ জন; তাসকিন, মোস্তাফিজ, শরিফুল আর তানজিম সাকিব। এর মধ্যে তাসকিন পাজরের ফ্র্যাকশ্চার কাটিয়ে প্রথম খেলায় মাঠে নামার জোর সংগ্রামে ব্যস্ত। আর প্র্যাকটিস ম্যাচে ভারতের হার্দিক পান্ডিয়ার স্ট্রেট ড্রাইভে বাঁহাতের আঙ্গুল ও তালুতে ৬ টি সেলাই পড়া , বাঁ-হাতি শরিফুল ইসলামের আগামী পরশু ডালাসে লঙ্কানদের সাথে টাইগারদের প্রথম ম্যাচ খেলার সম্ভাবনা খুব কম।

এখন তাসকিন শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ফিটনেস ফিরে পেয়ে খেলতে না পারলে বাংলাদেশকে খেলতে হবে ২ পেসার মোস্তাফিজ আর তানজিম সাকিবকে নিয়ে। এ কদিনে হওয়া ম্যাচের চালচিত্র বলে দিচ্ছে অন্তত ৩ জন পেসার নিয়ে না নামলে প্রতিপক্ষর ব্যাটিং লাইনআপের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং প্রতিপক্ষকে কম রানে বেঁধে ফেলা অসম্ভব।

সাইফউদ্দীনের মত অন্তত একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডার যে দলে খুব বেশি প্রয়োজন, তা হয়ত দল সাজানো আর ক্রিকেটার নির্বাচনের সময় কারোরই মাথায় আসেনি। টিম ম্যানেজমেন্ট ও থিংক ট্যাঙ্কের ধারনা ছিল ‘ড্রপ ইন পিচে’ ৩ স্পিনার আর ২ বা ৩ পেসার দিয়ে একাদশ সাজানোই হবে বেষ্ট পসেবল কম্বিনেশন; কিন্তু এখন বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর পর মনে হচ্ছে অন্তত যুক্তরাষ্ট্রে ৩ পেসারের কম খেলানোর অর্থ নির্ঘাত বিপদ।

এদিকে উইকেট বলে দিচ্ছে দলে বাড়তি পেসার বিশেষ করে একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব পরিষ্কার। এখন মনে হচ্ছে সাইফউদ্দীন স্কোয়াডে থাকলে খুব ভাল হতো। দ. আফ্রিকার সাথে থুসারা আর পাথিরানার সাথে দুই জেন্টাল মিডিয়াম পেসার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস আর দানুস সানাকার মিশ্রনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপতেশ একাদশ সাজিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তাইতো ৭৭ রানের মামুলি পুঁজি নিয়েও প্রোটিয়াদের ঘাম বের করে ছেড়েছে লঙ্কানরা।

এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কি করবে? ব্যাটিংয়ের যে নড়বড়ে আর ‘তাসের ঘরের’ মত অবস্থা; তাতে ৪ পেসার খেলানো যে আবার ‘গরিবের ঘোড়া রোগের’ মত। কাজেই বাংলাদেশের ৪ পেসার খেলানোর মত অবস্থা নেই; কিন্তু অন্তত ৩ পেসার লাগবেই। তবুও রক্ষা, প্রথম ম্যাচটি নিউইয়র্কে নয়, ডালাসের ব্যাটিং সহায়ক পিচে। নিউইয়র্কে ৩ পেসারও কম। আগের খেলাগুলো দেখে মনে হচ্ছে নিউইয়র্কে একগাদা পেসার ছাড়া মাঠে নামার অর্থ খেলার আগেই হেরে যাওয়া।

এ অবস্থায় কী করবে বাংলাদেশ?

এআরবি/আইএইচএস

Read Entire Article