এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য দরপত্রপ্রক্রিয়া চেয়ে রিট শুনানি কাল

2 months ago 7

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার (৯ জুলাই) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হলে হাইকোর্টের বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ঠিক করেন।

এনসিটি পরিচালনার ভার বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন এ রিট করেন।

‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এটিসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন রিটে যুক্ত করা হয়েছে।

আগের ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জুন রিটের ওপর শুনানি হয়। সেদিন আদালত চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি পরিচালনার ভার হস্তান্তর বিষয়ে বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না, তা জানতে চান। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানাতে বললে শুনানির জন্য আজ ৮ জুলাই পরবর্তী দিন রাখেন আদালত।

রিট আবেদনকারীর অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন আজ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিটটি আজ আদালতের কার্যতালিকায় আসেনি। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত আগামীকাল দুপুর ২টায় শুনানির জন্য রেখেছেন।’

আদালতে ওইদিন রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম ও আইনজীবী মো. আনোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম, মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মো. আসাদ উদ্দিন।

রিটকারীদের আইনজীবী আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতকে জানান এ সংক্রান্ত বিষয়ে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। তখন আমাদের রিটকারীদের পক্ষ থেকে সিনিয়র অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম আদালতকে বলেছেন যদি কোনো সিদ্ধান্ত না হয়ে থাকে, কোনো আলাপ আলোচনা না হয়ে থাকে তা হলে দেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সিভিল সোসাইটি এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। লং মার্চের কথা বলছেন এসব কেন হচ্ছে। তখন আদালত রাষ্ট্রপক্ষের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ক্ষেত্রে হস্তান্তর বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদে কোনো আলোচনা বা সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না তা ৮ জুলাই জানাতে বলেন।

এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বানের নির্দেশনা চেয়ে রিট করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন।

রিটে দেশীয় অপারেটরদের অনুমতি না দিয়ে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) আইন ও নীতি লঙ্ঘন করে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়।

যে কোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার জন্য দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে। রিটে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়েছে।

এরপর এ সংক্রান্ত বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র প্রক্রিয়া আহ্বানের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের ওপর শুনানির জন্য রোববার (২৯ জুন) দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।

এর আগে রিটটি শুনানির জন্য গত ২৫ মে আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। সেদিন রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত অবকাশের পর শুনানির জন্য রাখেন। গত ৩ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি চলে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী আনোয়ার হোসেন বলেন, অবকাশকালীন ছুটির পর সোমবার (২৩ জুন) রিটটি আদালতের কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) ওঠে। এরপর বিষয়টি ২৫ জুন উপস্থাপন করা হলে আদালত শুনানির জন্য ২৯ জুন দুপুর ২টায় সময় নির্ধারণ করেন। তারই ধারাবাহিকতায় ২৯ জুন সেটি শুনানি হয়।

নিউমুরিং টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনের সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন ওই রিটটি করেন। ‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও এ সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে রিট আবেদন করা হয়েছে।

রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী জানান, ২০১৯ সালে সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়া শুরু হয়। টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। জিটুজির ভিত্তিতে প্রকল্পের কাজ পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ পিপিপি কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে দেওয়া প্রজেক্ট প্রোফাইলে অনুমিত বিনিয়োগ হিসেবে ২০০ কোটি টাকা দেখা যায়, যা জিটুজি গাইডলাইন-২০১৭ সংশ্লিষ্ট বিধির পরিপন্থী।

এফএইচ/এসএনআর/এএসএম

Read Entire Article