এনামূল হক পলাশের তিনটি কবিতা

3 months ago 30

আরাধ্য কারাগার

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
ক্ষেতে, খামারে, গার্মেন্টসে, কারখানায়,
অফিসে, আদালতে, ব্যাংকে, বীমায়,
সবখানে মজুরের কাজ করি।
প্রয়োজন হলে মাছ মারি, টুকটাক সামনে
যা কিছু পাই তা করে বাল-বাচ্চা নিয়ে খাই।

আমার সন্তানদের একজন মধ্যপ্রাচ্যে,
খাটি বাংলায় যাকে বলে কামলা দিতে গেছে
যেখানে তার নিজস্ব বাড়ি নেই।
যে কোনো একদিন শাহজালাল বন্দর
পেরিয়ে চলে আসবে আমার বুকে।

আমার সন্তানদের একজন গেছে মালয়েশিয়া
আবাদ করতে চাষের জমিন, কারখানার চাকা
যেখানে তার নিজস্ব বাড়ি নেই।
গাদাগাদি করে অনেকের সাথে ঘুমায়
আর স্বপ্ন দেখে ফিরে আসবে একদিন
প্রিয় মাতৃভূমির সবুজে।

আমার সন্তানদের একজন গেছে আফ্রিকায়
শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে অথবা বাণিজ্যে
যেখানে তার নিজস্ব বাড়ি নেই।
সেও ফিরে আসবে আগামী বসন্তে অথবা শীতে।

আমার সন্তানদের একজন গেছে ইউরোপে
স্কলারশিপ নিয়ে অথবা মজুরের বেশে
যেখানে তার নিজস্ব বাড়ি নেই।
সে হয়তো ফিরে আসবে অথবা আসবে না।

আমার তাতে কিছু যায়-আসে না,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
সওদা করে বাড়িতে যাওয়ার আগে
চায়ের টেবিলে ঝড় তুলতে তুলতে
ইজরায়েলের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করি,
দেশে দেশে উত্থিত ফ্যাসিবাদ চিবিয়ে খাই
আর রাত হলেই ঘুমিয়ে পড়ি।
ঘরে একটি টিভি আছে তবুও ঘুমানোর আগে
চরম অনাস্থা নিয়ে ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টায় ঘুরি।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
ভারতে আমার কোনো বাড়ি নেই
মালয়েশিয়ায় আমার কোনো ফ্ল্যাট নেই
সুইস ব্যাংকে আমার কোনো টাকা নেই
দুবাই নগরীতে আমার কোনো ফ্ল্যাট নেই
কানাডার বেগম পাড়ায় আমার বাড়ি নেই
এমনকি ইংল্যান্ড বা আমেরিকাতেও নেই।

আমি কসম খেয়ে বলছি,
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
ভিটেমাটি-ক্ষেত বিক্রির টাকায়
অথবা লুটের টাকা নিয়ে পৃথিবীর
অন্য কোথাও বাড়ি কেনা হয়নি আমার।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
এই দেশ আমার
চারপাশে কাঁটাতার
এই প্রিয় স্বদেশ
আমার আরাধ্য কারাগার।

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে আছি।
জন্মেছি এই দেশে
এই মাটি আমার
মৃত্যুর কালো ঘুম ছাড়া
সম্ভাবনা নেই কোথাও যাবার।

****

যিশুরা কাঁদছে ফিলিস্তিনে

তাবুর ভেতরে উদ্বাস্তু নারী ও শিশু
চোখ মেলে দেখো কাঁদছে যিশু।
ও তোমাদের আমেরিকান যিশু থেকে
আরবের যিশু কি আলাদা হয়েছে?

রাজা ডেভিড মাথা নিচু করে আছে
আর তোমার আরবের যিশুরা কাঁদছে।
ইদ্রিস নবীর প্রজ্ঞা এসেছিল বলে
যুধিষ্ঠির তুমি চক্রবর্তী এক সম্রাট
ধর্মরাজ হয়েছিলে এইখানে।
তবুও তোমরা মহাভারতের পূজারি
আর্যাবর্তের অধিবাসী আছো যারা-
কীভাবে এড়িয়ে যাবা সেই বিপন্ন ভূমি
যেখানে মানুষ হেরে যায়
মুসার লাঠি হারিয়ে যাওয়ায়
মানবতা ধূলায় লুটায়?

যেখানে ইব্রাহিম এসেছিল
যেখানে দাউদ এসেছিল
যেখানে সুলেমান কাটালো জীবন
যেখানে ঈসা নবী এসেছিল
যেখানে পড়েছিল মুহম্মদের ধূলি
সেখানে মানবতার জন্য কাঁদছে পৃথিবী।

আহ আমেরিকান যিশু
তুমি কি আরব থেকে আলাদা হয়ে গেছো?
আহ মহাভারতের যুধিষ্ঠির
তুমি কি পালালে এই জগৎ সংসার ছেড়ে?
আহ ন্যায় বিচারের ডেভিড
কোথায় চলে গেছ তুমি জেরুজালেম ছেড়ে?

চেয়ে দেখো ফিলিস্তিনের নারী ও শিশু
ইফতারের আগে ঘাসের স্যুপ নিয়ে বসে আছে।
এক টুকরো রুটির জন্য দিনের পর দিন
তাকিয়ে আছে জাতিসংঘের দিকে।
আমেরিকান যিশুর সমর্থন নিয়ে
মেঘের ওপর থেকে বর্ষিত হয় বোমা
বাড়ি ঘর আর বসতির সাথে সাথে
কারো কারো হাত, পা, চুল
অথবা মগজ উড়ে যায়।
কামানের গোলার বিরুদ্ধে,
জঙ্গী বিমানের গোলাবর্ষণের বিরুদ্ধে
পাথরের অস্ত্র বেমানান জেনেও
এতিম শিশুটি পাথর ছুঁরে মারে প্রবল ঘৃণায়
কারণ সে শত্রুকে চিনে গেছে।

মহাভারতের যুধিষ্ঠির চক্রবর্তী সম্রাট
তুমি নাকি সত্যবাদী ধর্মরাজ-
মেঘের ওপর দিয়ে যায় যে বৈমানিক
তুমি কি তার নাম দিয়াছো ইন্দ্রজিৎ?

****

ফেরা

রাতে ঘুমের মধ্যে আম্মাকে ফোন দিলাম
আব্বা ফোনটা ধরেই বললেন,
তোর জন্য চিন্তা হচ্ছে
এত রাত হয়েছে এখনো আসার নাম নেই।

আমি বললাম,
এখানে প্রচুর ঝড়
বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব
আমি একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।

আব্বা বললেন, তোকে আসতে হবে না
মানুষের বিপদে আপাতত পাশেই দাঁড়া।

আব্বা আছেন নেটওয়ার্কের বাইরে,
আব্বার কাছে যাওয়ার আগে
কিছু একটা করতে হবে।

এসইউ/জিকেএস

Read Entire Article